‘কৃষি পণ্যের জাতীয় মূল্য কমিশন গঠন করুন’
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের লাভজনক মূল্য প্রাপ্তি এবং কৃষি ও কৃষক সুরক্ষায় ‘আমন ধানের লাভজনক মূল্য প্রদান ও কৃষি পণ্যের জাতীয় মূল্য কমিশন গঠনের’ দাবিতে সংবাদ সম্মেলন হয়েছে। রাজধানীর সেগুনবাগিচায় কর্মজীবী নারী কার্যালয়ে মঙ্গলবার সকাল ১১টায় অনুষ্ঠিত এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ‘কৃষি পণ্যের জাতীয় জন-মূল্য কমিশন’।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির বক্তারা বলেন, কৃষিতে উৎপাদন ব্যয় ক্রমশ বৃদ্ধি পেলেও লাভজনক মূল্য না পাওয়ায় কৃষক আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, ফলে জীবনযাপনের ধারাবাহিকতায় নিজেদেরকে খাপ-খাওয়াতে পারছেন না। তারপরও অন্যকোনো পেশায় আগ্রহ না থাকায় একমাত্র কৃষিকেই জীবিকা হিসেবে নিয়ে দেশের মানুষের খাদ্যের নিশ্চয়তায় তাঁরা কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁরা গত কয়েক মৌসুম ধরে দেশের খাদ্য উদ্বৃত্ততা রক্ষা করে চলেছেন। কিন্তু হতাশার কথা এই খাদ্য উদ্বৃত্ততায় পরও কৃষকের কোনো লাভ হচ্ছে না। উদ্বৃত্ত ফসলের মজুদ কৃষকের ঘরে নেই এমনকি পর্যাপ্ত পরিমাণে সরকারের কাছেও নেই। উদ্বৃত্তের ফসল নিয়ন্ত্রণ করছে চালকল মালিক-ব্যবসায়ীরা। ফলে ধান বিক্রি করে কৃষক যখন চাল কিনছে তখন তার বিক্রিত মূল্যের সঙ্গে মেলানো যাচ্ছে না। এতে কৃষকের খাদ্য চাহিদা প্রত্যাশিত মাত্রায় পূরণ হচ্ছে না। ভোক্তা কৃষক খাদ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
তারা আরও বলেন, শত প্রতিকূলতার মাঝেও কৃষকেরা উৎপাদনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখলেও উৎপাদিত পণ্যের মূল্য বঞ্চণায় কৃষকের আর্থিক ক্ষতিও অব্যাহত রয়েছে। এবারের আমন মৌসুমেও কৃষকেরা নিজেদেরকে উজার করে দিয়েছেন- ধানের পর্যাপ্ত উৎপাদন হয়েছে। কিন্তু লাভজনক মূল্য প্রাপ্তির নিশ্চয়তা এখনও মেলেনি। সরকার ২৮ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে আমন সংগ্রহের জন্য চালের ক্রয়মূল্য নির্ধারণ ও ঘোষণা করেছে, এতে কৃষকের লাভ হচ্ছে না। কেননা সরকারের গুদামে চাল সরবরাহ করবে মিল মালিক-ব্যবসায়ী। এ সময় উৎপাদন খরচের যে হিসাব হাজির করা হয়েছে কৃষকের অভিজ্ঞতায় সেটিও প্রাসঙ্গিক নয়।
সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করেন, সম্প্রতি চারটি জেলায় কৃষকের সঙ্গে আলোচনা করে আমন ধান উৎপাদনে ব্যয়ের যে হিসাব পাওয়া গেছে তা সরকার নির্ধারিত ব্যয়ের চাইতে বেশি। কৃষকদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী শেরপুর জেলায় প্রতি কেজি ধানের উৎপাদন ব্যয় ২০ টাকা ৭৩ পয়সা, চুয়াডাঙ্গা জেলায় ২৫ টাকা ৭৩ পয়সা, রাজবাড়ি জেলায় ২৩ টাকা ৪৩ পয়সা, দিনাজপুর জেলায় ২১ টাকা ৩৩ পয়সা। সরকারিভাবে আমন ধানের কেজি প্রতি ১৭ টাকা ২ পয়সা উৎপাদন ব্যয়ের সঙ্গে প্রকৃত ব্যয়ের পার্থক্য অনেক। এ থেকে পরিষ্কারভাবে বলতে পারা যায়, সরকারি তথ্য ব্যবস্থাপনা ভুলের উপর দাঁড়িয়ে। আরও যে বিষয়টি লক্ষণীয় তা হলো, দেশের অঞ্চল ভেদে উৎপাদন ব্যয়ের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য থাকলেও তা বিবেচনায় না নিয়েই একটি ইচ্ছাধীন প্রচেষ্টায় মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
তারা আরও বলেন, বর্তমান বিশ্বে খাদ্যে স্বনির্ভরতা অর্জনের বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্ব পাচ্ছে। কাজেই উৎপাদকের স্বার্থের বিষয়টিতে অগ্রাধিকার দিয়ে খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সরকারকে এগুতে হবে। এ জন্য একটি রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ কাঠামোর আওতায় কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের মূল্য নির্ধারণ ব্যবস্থাপনা চালু করা খুবই জরুরি। এতে একই সঙ্গে উৎপাদক ও ভোক্তার স্বার্থ সংরক্ষিত হবে।
সংবাদ সম্মেলনে- বর্তমান আমন মৌসুমে সরকার নির্ধারিত মূল্য পুনর্নির্ধারণ, চাল সংগ্রহের ঘোষণা প্রত্যাহার করে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে আমন ধান সংগ্রহ, কৃষি পণ্যের জাতীয় মূল্য কমিশন গঠন করার দাবি জানানো হয়।
সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন কর্মজীবী নারীর নির্বাহী পরিচালক ও জাতীয় জন-মূল্য কমিশন এর সদস্য রোকেয়া রফিক, মূল বক্তব্য পাঠ ও বিভিন্ন প্রশ্নের জবান দেন জাতীয় জন-মূল্য কমিশনের সদস্য জীবনানন্দ জয়ন্ত। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন রাহেলা রব্বানী ও নাসরিন সুলতানা।
উল্লেখ্য, কৃষক, কৃষক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, জনপ্রতিনিধি, অধিকারকর্মী ও বেসরকারি সংস্থাসমূহের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে স্বেচ্ছাপ্রণোদিত সংগঠন- জাতীয় জন-মূল্য কমিশন। সংগঠনটি কৃষি ও কৃষক সুরক্ষায় দেশের ১৫টি জেলা ও ৩০টি উপজেলা পর্যায়ে গঠিত কমিটির মাধ্যমে কাজ করছে। কৃষি পণ্যের লাভজনক মূল্যের নিশ্চয়তা বিধানে একটি আনুষ্ঠানিক কাঠামো হিসেবে ‘কৃষি পণ্যের জাতীয় মূল্য কমিশন’ প্রতিষ্ঠাই সংগঠনটির লক্ষ্য।
(দ্য রিপোর্ট/আইজেকে/সাদি/ডিসেম্বর ১৭, ২০১৩)