২৭ থেকে ২৯ অক্টোবর হরতাল : খালেদা জিয়া
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, এটা আমাদের প্রাথমিক কর্মসূচি। আন্দোলন ও সংলাপ একসঙ্গে চলবে। সরকার সমঝোতায় না এলে আরো কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারকে ‘অবৈধ সরকার’ উল্লেখ করে বিরোধীদলীয় নেত্রী বলেন, ‘এই সরকার ক্ষমতা দখল করে জনগণকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে, তারা রাস্তাঘাট অবরোধ করে রেখেছে। তারা অবৈধ সরকার হয়ে যদি জনগণকে অবরোধ করে রাখতে পারে তাহলে আমরা অবরোধ করলে তাদের বাধা দেওয়ার কোনো অধিকার থাকবে না।’
খালেদা জিয়া বলেন, ‘আজকের সমাবেশ সম্পর্কে আমরা আগে থেকেই ঘোষণা দিয়েছি। কিন্তু তারা সমাবেশ করতে দেওয়া, না দেওয়া নিয়ে অনেক ঘটনা ঘটিয়েছে। অবশেষে রাত দেড়টায় সমাবেশ করার অনুমতি দেয়। বর্তমান সরকার দাবি করে, তারা জনগণের সরকার। তারা জনগণের সরকার হলে জনগণকে সমাবেশ করার অনুমতি দিত। আসলে তারা জনগণের সরকার নয় বলে সমাবেশ করতে দিতে ভয় পায়।’
প্রধান বিরোধী দলের নেত্রী আরো বলেন, ‘বর্তমান সরকার লাখ লাখ মানুষ গুম করেছে। বিশেষ বাহিনীর মাধ্যমে এই গুম হয়েছে। এই বাহিনীতে কে কে আছে তা আমরা জানি। কোন কোন গাড়িতে করে গুম করা হয়েছে তাও আমরা জানি। ইলিয়াস আলী ও চৌধুরী আলমকে কোন গাড়িতে করে গুম করা হয়েছে, তাও জানা আছে।’
তিনি এ সময় সমাবেশে উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনারা যে কর্মসূচি চান, আমি সেই কর্মসূচিই দিব।’
এ সময় উপস্থিত নেতাকর্মী ও সমর্থকরা ‘হরতাল’, ‘হরতাল’ বলে শ্লোগান দিতে থাকেন। এর পরপরই খালেদা জিয়া ২৭ অক্টোবর থেকে ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত হরতালের ঘোষণা দেন।
খালেদা জিয়া বলেন, ‘জনগণের উপর এই সরকারের ভরসা নেই। তারা পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির উপর ভরসা করে। পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির উপর আমার কোনো অভিযোগ নেই। তারা এবং তাদের পরিবার বাংলাদেশেরই জনগণ। আমি তাদেরকে বলবো, ক্ষমতাসীন দলের নির্দেশে অনেক অত্যাচার নির্যাতন করেছেন। আগামী ২৭ তারিখের পর থেকে আপনারা এই অবৈধ সরকারের কোনো কথা মানতে বাধ্য নন। কোনো নির্যাতন হলে তার বিচার জনগণ করবে।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ মিথ্যা বলে বেড়াচ্ছে। আমরা ক্ষমতায় গেলে এগুলোর বিচার হবে। কথা দিচ্ছি প্রশাসনসহ সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগ্যতা অনুযায়ী স্থান দেওয়া হবে।’
খালেদা জিয়া অভিযোগ করেন, ‘বর্তমান সরকার পাটশিল্পকে ধ্বংস করেছে। এখন পোষাক শিল্পকে ধ্বংস করার পাঁয়তারা করছে। আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় এই শিল্প নিয়ে নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশ হচ্ছে। রানা প্লাজার মাধ্যমে এই শিল্পকেও ধ্বংস করা হচ্ছে।’
বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের এই সমাবেশে বিকেল ৪টায় পৌঁছান বেগম খালেদা জিয়া। এর আগে বেলা সোয়া ২টার দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে সমাবেশ শুরু হয়। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও ঢাকা মহানগরের আহবায়ক সাদেক হোসেন খোকা সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন।
মঞ্চে এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান, আ স ম হান্নান শাহ, জামায়াত নেতা শফিকুল ইসলাম মাসুদ, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির সভাপতি (জাগপা) প্রধান শফিউল আলম প্রধান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. ইব্রাহিম, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান (বিজেপি) আন্দালিব রহমান পার্থসহ জোটের শরিক দলের নেতারা।
বেলা পৌনে ২টার দিকে মঞ্চের সামনে দাঁড়ানোকে কেন্দ্র করে ছাত্রদল-যুবদলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে শিবিরকর্মীদের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ সময় সমাবেশস্থলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরে মঞ্চ থেকে সবাইকে শান্ত থাকার অনুরোধ জানানো হলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
এদিকে সকাল থেকে বৃষ্টি সত্বেও ১৮ দলীয় জোটের ডাকা সমাবেশে নেতাকর্মীদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়। সোহরাওর্য়াদী উদ্যানের ভেতর থেকে শুরু করে মৎস্য ভবন মোড় ও শাহবাগ পর্যন্ত লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে। সমাবেশে যোগ দিতে আসা বেশিরভাগ কর্মীকেই জামায়াত শিবিরের শ্লোগান এবং ব্যানার বহন করতে দেখা যায়।
সমাবেশকে ঘিরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও সতর্ক অবস্থান নেয়। ইঞ্জিনির্য়াস ইনস্টিটিউশন থেকে শুরু করে মঞ্চ পর্যন্ত পুরো এলাকা ঘিরে রাখে পুলিশ ও র্যাব সদস্যরা। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) জানায়, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১০ হাজারের বেশি পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়।
এর আগে ১৮ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, পল্টন ময়দান অথবা নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনের সড়ক- এই তিন স্থানের যেকোনো একটিতে সমাবেশ করার অনুমতি চেয়ে ডিএমপির কাছে আবেদন করেন জোটের নেতারা। বৃহস্পতিবার বিকেলে ডিএমপি শর্তসাপেক্ষে জোটকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার অনুমতি দেয়।
এদিকে সারা দেশে ১৮ দলীয় জোটের কর্মসূচির কারণে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যাপক প্রস্তুতি নেয় পুলিশ ও র্যাব। গুরুত্বপূর্ণ জেলা শহরে মোতায়েন করা হয় বিজিবি।
(দিরিপোর্ট২৪/রানা/আমান/এমএআর/এইচএসএম/অক্টোবর ২৫, ২০১৩)