দু’একদিনের মধ্যেই এরশাদ মুক্ত!
দু’একদিনের মধ্যেই মুক্ত হতে পারেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। মঙ্গলবার সকালেই তার মুক্ত হওয়ার কথা ছিলো, অজ্ঞাত কারণে তা হয়নি। দলটির একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য এমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি এমনও জানিয়েছেন, এরশাদকে মুক্ত করে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া হতে পারে।
তিনি বলেছেন, এ বার্তা নিয়েই এরশাদের সহধর্মিনী ও প্রেসিডিয়ামের জ্যেষ্ঠ সদস্য রওশন এরশাদ সোমবার সন্ধ্যায় সিএমএইচ-এ (সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল) গিয়েছিলেন।
১২ ডিসেম্বর রাতে র্যাবের হাতে আটক হন এরশাদ। এরপর সোমবার সন্ধ্যায় প্রায় চল্লিশ মিনিট এরশাদের সঙ্গে সিএমএইচ-এ কথা বলেন রওশন।
রওশন এরশাদ কি এরশাদের খোঁজ খবর নিতে গিয়েছিলেন নাকি অন্যকোনো কারণে সেখানে গিয়েছিলেন। এমনই আলোচনা হচ্ছিল মঙ্গলবার দুপুরে এরশাদের বনানী কাযালর্য়ের নিচতলায়।
সেখানে উপস্থিত ছিলেন জাপার দুই এমপি প্রার্থী ও জাতীয় পার্টির নিরবাাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক প্রেসিডিয়াম সদস্য মাসুদ পারভেজ (সোহেল রানা)।
এ প্রতিবেদক রওশন এরশাদের অবস্থান (সরকারের পক্ষে নাকি এরশাদ) সম্পর্কে জানতে চাইলে, মাসুদ পারভেজ পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, আপনি কোথা থেকে এসেছেন, কোথায় আছেন এবং কোথায় যাবেন। আপনিই নির্ধারণ করেন। উত্তর পেয়ে যাবেন।
এরশাদ কবে নাগাদ সিএমএইচ থেকে ফিরতে পারেন এমন আলাপচারিতায় সরাসরি জবাব না দিয়ে অপেক্ষমান দুই এমপি প্রার্থীকে সোহেল রানা বলেন, স্যার (এরশাদ) তো আজ (মঙ্গলবার) সকালেই এখানে আসার কথা ছিলো। কিন্তু কোথায় কি গরমিল হলো, সবকিছু আটকে গেলো। তবে বুধ, বৃহস্পতিবারের মধ্যেই তিনি ফিরতে পারেন। তাকে বিদেশেও পাঠানো হতে পারে।
তবে তাদের আলাপচারিতায় এরশাদ বন্দী বা আটক এমন প্রসঙ্গ আসেনি।
সোহেল রানা বলেন, ‘স্যার এবার এলে জানতে চাইবো, পার্টি কী নিয়মতান্ত্রিকভাবে চলবে নাকি অনিয়মতান্ত্রিকভাবে চলবে। কোনো চেইন অব কমান্ড নেই। ’
একজন এমপি প্রার্থী এসময় আক্ষেপ করে বলেন, ‘এবার এমন সব লোককে প্রার্থী করা হয়েছে যাদের অনেকেই নিজেদের নামও ঠিকমতো লিখতে পারেন না। তবে একটা জিনিস হয়েছে, পার্টিতে পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের চেনার সুযোগ হয়েছে।’
অন্য এক প্রার্থী আক্ষেপ করে বলেন, ‘এবার এ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম মনোনয়নের নামে যা করছে, জাতীয় পার্টির ইতিহাসে এমন মনোনয়ন বাণিজ্য আর কোনো নেতা করতে পেরেছেন কিনা জানি না। আগে করতো সুনীল আর এবার করলো রেজাউল। রেজাউল তার পছন্দমতো যে তালিকা দিয়েছিলেন তাদেরকেই মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।’
এসময় আরেকজন নেতা বলেন, ‘আল্লাহর বিচার আছে। এজন্য নিজেই এমপি হতে পারলো না।’
অবশ্য এ প্রসঙ্গে রেজাউল ইসলাম দ্য রিপোর্টকে মোবাইল ফোনে বলেন, ‘তারা ঈর্ষাপরায়ণ হয়ে আমার বিরুদ্ধে যাচ্ছেতাই বলছে। আমি মনোনয়ন বাণিজ্য করিনি।’
সোমবার এরশাদের সঙ্গে রওশনের সাক্ষাতে জাপার রংপুর অঞ্চলের সাংগঠনিক কাযক্রমসহ সরকারের নানা প্রস্তাব ও চাপ নিয়ে আলোচনা হয় বলে রওশন ঘনিষ্ঠ একটি সূত্রে জানা গেছে। সাক্ষাতে সম্প্রতি বিলুপ্ত রংপুর মহানগর জাপার সভাপতি মশিউর রহমান রাঙাকে কমিটিতে ফিরিয়ে নিতে এরশাদের কাছে রওশন অনুরোধ জানান। তবে রওশনের অনুরোধ আমলে নেননি এরশাদ। এরশাদ রওশনকে বলেন, আমি আটকের পর ও (রাঙা) একটা মিছিলও করেনি। আমার জীবন শেষ, কথাও শেষ। যা বলেছি তাই।
সূত্র আরো জানায়, রওশন এরশাদ নিরবাচনে জাপার যেসব প্রার্থী অংশ নিয়েছে তাদের ব্যাপারে কঠোর না হওয়ার জন্য এরশাদকে অনুরোধ জানান। এরশাদ এ অনুরোধও প্রত্যাখ্যান করেন। এসময় রওশন এরশাদের কথার বাইরে যাননি দাবি করে রংপুরের নেতা রাঙা ও যারা ভুল করেছে তাদের ক্ষমা করার অনুরোধ জানান। তবে এরশাদ তাদের ব্যাপারে কোনো কথা বলেন নি।
মূলত এ কারণেই এরশাদের ‘মুক্তি’ বিলম্বিত হচ্ছে। তবে যাইহোক দু’একদিনের মধ্যেই এরশাদ তার বাসায় ফিরে আসবে বলে সূত্রে জানা গেছে।
মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার না করায় ১৫ ডিসেম্বর এরশাদ রংপুর জেলা ও মহানগরের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। তিনি সাবেক সংসদ সদস্য করিম উদ্দিন ভরসাকে আহ্বায়ক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফাকে সদস্য সচিব করে রংপুর জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেন। রংপুর জেলার সদ্য সাবেক সভাপতি মশিউর রহমান রাঙা ছিলেন রওশন এরশাদের ঘনিষ্ঠ।
দ্য রিপোর্ট/সাআ/এইচএসএম/নূরু/ডিসেম্বর ১৭, ২০১৩)