খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজ ৮০ টাকা
চট্টগ্রাম সংবাদদাতা : চট্টগ্রাম খাতুনগঞ্জের পাইকারী বাজারে কমেছে পেঁয়াজের দাম। মঙ্গলবার সকাল থেকে প্রতি কেজি ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে মাত্র ৮০ টাকায়। ৬৫ থেকে ৭২ টাকার মধ্যে নেমে এসেছে চীন, পাকিস্তান ও মিয়ানমারের পেঁয়াজের দাম।
সোমবার সকালে এই দামে পেঁয়াজ বিক্রি হলেও বিকেলে প্রতি কেজিতে বেড়ে যায় ১০ থেকে ১৫ টাকা। সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত স্থল বন্দর ও চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আসা পেঁয়াজের চালান খালাস হতেই দাম কমতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা।
দেশের বৃহত্তম পাইকারী বাজার খাতুনগঞ্জ ঘুরে জানা গেছে, পেঁয়াজ আমদানির প্রধান দেশ ভারতে ফলন কম হওয়ায় গত কোরবানীর আগ থেকে বাজারে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে পেঁয়াজের দাম। সেদেশে পুনরায় ফসল উঠা শুরু হলে গত নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে পাইকারীতে দাম ৪০-৪৫ টাকায় নেমে আসে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হরতাল-অবরোধে পরিবহন খরচ বৃদ্ধির অজুহাতে সাম্প্রতিক সময়ে পেঁয়াজের দাম সিন্ডিকেট করে বাড়ানো হয়েছে।
চলতি ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে লাফিয়ে পেঁয়াজের দাম ঠেকে প্রতি কেজি ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মাঝে পেঁয়াজের দাম কমে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে আমদানি মূল্য থেকে কম দামে পেঁয়াজ বিক্রির লোকসান সামাল দিতে আমদানিকারক ও আড়তদাররা সিন্ডিকেট করে হরতাল-অবরোধকে পুঁজি করে দাম বাড়ানোর ফন্দি আঁটে। এই সিন্ডিকেট ফন্দিতেই বাজারে ৪০ থেকে ৪২ টাকায় নেমে আসা ভারতীয় পেঁয়াজের দাম উঠে যায় ১৪৫ টাকায়। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ানো হয় পাকিস্তান, চীন ও মিয়ানমারের পেঁয়াজের দাম।
জানা গেছে, হরতাল-অবরোধে শুধুমাত্র ভারত থেকে আসা পেঁয়াজের ক্ষেত্রে পরিবহন সংকটে পড়তে হয়। ভারতের পেঁয়াজ আসে বেনাপোল, হিলি ও ভোমরা স্থল বন্দর দিয়ে। পাকিস্তান, চীন ও মিয়ানমারের পেঁয়াজ আসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাব পড়ার কথা শুধু ভারতের পেঁয়াজের উপর। কিন্তু আমদানিকারক ও আড়তদার সিন্ডিকেট যৌক্তিক কারণ ছাড়া বন্দর দিয়ে আসা চীন, পাকিস্তান ও মিয়ানমারের পেঁয়াজের দাম বাড়িয়েছে।
জানা গেছে, চলমান অস্থির পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে গুদাম পর্যন্ত পরিবহন খরচ ট্রাক প্রতি ৫ হাজার টাকার বেশি নয়। কিন্তু সিন্ডিকেট করে এ ভাড়ায় পরিবহন করা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ভারতের পেঁয়াজের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে।
পেঁয়াজ বাজারের এই ‘নয়ছয় খেলায়’ গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গত সপ্তাহে মাঠে নামে ভ্রাম্যমাণ আদালত। আদালত মজুদ থাকা সত্ত্বেও অগ্নিমূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি রোধে ব্যবসায়ীদের সতর্ক করেন। অভিযানকালে আদালতকে পেঁয়াজের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির যৌক্তিক কারণ ব্যাখা করতে না পারায় খাতুনগঞ্জের সৌমিক ট্রেডার্স নামের একটি পাইকারী প্রতিষ্ঠানকে দুই হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। প্রতিষ্ঠানটি অভিযানকালে পেঁয়াজ ক্রয় সংক্রান্ত কাগজপত্র দেখাতেও ব্যর্থ হয়।
জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল্লাহ আরিফ মুহাম্মদ জানান, বাজার মূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যবসায়ীদের সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। যাতে তারা অযৌক্তিকভাবে বাজার অস্থির করতে না পারেন।
মঙ্গলবার খাতুনগঞ্জের বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৮০ টাকায়, পাকিস্তানের পেঁয়াজের দাম প্রতি কেজি ৭২ টাকা, মিয়ানমারের দাম কেজি প্রতি ৬৫ থেকে ৭০ টাকা ও চীনের পেঁয়াজের দাম ৬৫ টাকা।
খাতুনগঞ্জের পাইকারী ব্যবসায়ী জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী জানান, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পেঁয়াজের বাজার ফের অস্থির করা হয়েছে। পরিবহন সংকটের অজুহাত দেখিয়ে পেঁয়াজের দাম বাড়ানো হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, গত সপ্তাহে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান না হলে এখন পেঁয়াজের দাম ১৬০ টাকা পেরিয়ে যেত।
(দ্য রিপোর্ট/এমকে/এমএআর/ডিসেম্বর ২৭, ২০১৩)