দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : কমরেড মুজফ্‌ফর আহমদ ১৯৭৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। তিনি ভারতীয় উপমহাদেশে সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের অন্যতম অগ্রদূত ও বাংলায় এই আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ‘কাকা বাবু’ নামে পরিচিত ছিলেন।

মুজফ্‌ফর আহমদ ১৮৮৯ সালের ৫ আগস্ট চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপের মুসাপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম মনসুর আলী ও মায়ের নাম চুনাবিবি। মনসুর আলী সন্দ্বীপের এক স্বল্প আয়ের মোক্তার ছিলেন। পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো না থাকায় কৈশোরে মুজফ্‌ফর আহমদকে চাষাবাদের কাজেও সাহায্য করতে হতো।

মুজফ্‌ফর আহমদ ১৮৯৭ সালে গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৮৯৯ সালে তিনি হরিশপুর মিডল ইংলিশ স্কুলে (পরে কাগিল হাইস্কুল) ভর্তি হন। পিতার মোক্তারি ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর স্কুল থেকে তার নাম কেটে দেওয়া হয়। সে সময় মাদ্রাসা শিক্ষা অবৈতনিক হওয়ায় কিছুদিন তিনি মাদ্রাসায় লেখাপড়া করেন। ১৯১৩ সালে তিনি নোয়াখালী জেলা স্কুল থেকে মেট্রিকুলেশন পাস করেন। পরে কলকাতার বঙ্গবাসী কলেজ থেকে আইএ পরীক্ষা দিয়ে অকৃতকার্য হন এবং সেখানেই তার লেখাপড়ার ইতি ঘটে। ১৯১৩ থেকেই তিনি কলকাতার অধিবাসী।

১৯১১ সালে কলকাতার মুসলিম ছাত্রদের উদ্যোগে বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সমিতি গঠিত হয়। ১৯১৮ সালে সমিতির উদ্যোগে প্রকাশিত হয় ‘বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য পত্রিকা’। পত্রিকার যুগ্ম-সম্পাদক হিসেবে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ও মোহাম্মদ মোজাম্মেল হকের নাম ছাপা হলেও সম্পাদকীয়ের সব কাজ তিনিই করতেন। সমিতির সব সময়ের কর্মী হিসেবে তিনি এর অফিসেই থাকা শুরু করেন। তিনি ছিলেন সমিতির সহকারী সম্পাদক। পত্রিকার কাজ পরিচালনার সময় চিঠিপত্রের মাধ্যমে কবি কাজী নজরুল ইসলামের সঙ্গে পরিচয় হয়। সৈনিক জীবন শেষে ১৯২০ সালে নজরুল কলকাতায় মুজফ্‌ফর আহমদের সঙ্গে সাহিত্য সমিতির অফিসে থাকতে শুরু করেন। ১৯২০ সালের ১২ জুলাই কবি কাজী নজরুল ইসলাম ও মুজফ্‌ফর আহমদের যুগ্ম-সম্পাদনায় কলকাতা থেকে 'দৈনিক নবযুগ' বের হয়েছিল।

সন্দ্বীপের কাগিল হাইস্কুলে পড়ার সময়ই মুজফ্‌ফর আহমদের সাংবাদিকতায় হাতে খড়ি হয়। মওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামবাদী সম্পাদিত 'সাপ্তাহিক সুলতান' পত্রিকায় সন্দীপের স্থানীয় খবর পাঠাতেন। মুজফ্ফর আহমদ বাংলা সরকারের ছাপাখানায় মাসিক ত্রিশ টাকা বেতনে তিনি চাকুরিও করেন। বঙ্গ সরকারের অনুবাদ বিভাগেও তিনি মাসিক পঞ্চাশ টাকা বেতনে উর্দু থেকে বাংলায় অনুবাদের কাজও করেন এক মাস। এক মাস তিনি প্রেসিডেন্সি বিভাগের স্কুল ইনস্পেক্টরের কাজ করেন। কলেজে পড়ার সময় তিনি খিদিরপুর জুনিয়র মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন আর এক মাস ছুটিতে তিনি কলকাতা সিটি কর্পোরেশনে কাজ করেন।

১৯১৭ সালে রাশিয়ায় লেনিন-স্টালিনের নেতৃত্বে সমাজতান্ত্রিক অভ্যুত্থান সফলতা লাভ করে। ১৯২০ সালের ১৭ অক্টোবর সোভিয়েত ইউনিয়নের অঙ্গরাজ্য উজবেকিস্তানের রাজধানী তাসখন্দে ভারতের সর্বপ্রথম সমাজতান্ত্রিক দল গঠিত হয়। গঠন করেছিলেন বাঙালি নেতা মানবেন্দ্র নাথ রায়। এর মাত্র একমাসের মধ্যে বাংলায় সমাজতান্ত্রিক দল গঠিত হয়। এই সংগঠনের পুরোধা ছিলেন মুজফ্‌ফর আহমদ।

কৈশোরে সক্রিয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণ না করলেও ১৯১৬ সাল থেকে মুজফ্‌ফর আহমদ বন্ধুদের সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক আলোচনা, সভা-সেমিনার-মিছিল যোগদান প্রভৃতি শুরু করেন। ১৯১৯ সালে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে কলকাতার অনুষ্ঠিত আন্দোলনে তিনি অংশগ্রহণ করেন। ১৯২০ সালে বঙ্গীয় খেলাফত কমিটির সদস্য মনোনীত হলেও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। ১৯২০ সালের শুরুতে তিনি সিদ্ধান্ত নেন রাজনীতিই হবে জীবনের মূল পেশা।

তার ছাত্রাবস্থায় বাংলায় সন্ত্রাসবাদী আন্দোলনের শুরু হয়। এ সম্পর্কে তিনি লিখেছেন, ‘সন্ত্রাসবাদী আন্দোলন শুধু হিন্দু আন্দোলন ছিল না, আসলে তা ছিল বর্ণ হিন্দুদের আন্দোলন’। যদিও তিনি এই আন্দোলনের জীবন উৎসর্গকারীদের শ্রদ্ধা করতেন। অন্যদিকে মুসলীম লীগ ও কংগ্রেসকে তিনি ধনিক শ্রেণী স্বার্থের রাজনৈতিক দল বলে মনে করতেন। রুশ বিপ্লবের সাফল্যে উদ্দীপ্ত হয়ে তিনি ১৯২১ সালে থেকে মার্কসবাদ চর্চা ও মার্কসবাদী রাজনীতিতে আত্মনিয়োগ করেন।

১৯২১ সালের নভেম্বর মাসে মাদ্রাজ, বোম্বাই ও পাঞ্জাবের বিভিন্ন কমিউনিস্ট গ্রুপের সঙ্গে মুজফ্‌ফর আহমদ যোগাযোগ করার কাজ শুরু করেন। ১৯২১ সালের ডিসেম্বর মাসে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির প্রথম মুদ্রিত ইশতেহার প্রচার করা হয়। আহমেদাবাদে অনুষ্ঠিত জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশনের প্রতিনিধিদের সম্বোধন করে পূর্ণ স্বাধীনতার ডাক দিয়ে এই ইশতেহার রচিত হয়।

১৯২২ সালের শেষের দিকে আব্দুল হালিমের সঙ্গে মিলে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি গড়ার কাজ শুরু করেন। প্রথম যুগে তাদের সঙ্গে ছিলেন আব্দুর রেজ্জাক খান। ১৯২২ সালের ১৫ মে পার্টির প্রথম পত্রিকা নাম ছিল ‘দি ভ্যানগার্ড অব দি ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেন্ডেন্স’ প্রকাশিত হয়। পুলিশের নজর পড়ায় নাম বদলে হয় ‘অ্যাডভান্স গার্ড’। পরে কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র হিসেবে ‘দি ভ্যানগার্ড’ প্রকাশিত হয়। এই সময়কালেই কাজী নজরুল ইসলাম সম্পাদিত ‘ধুমকেতু’ পত্রিকায় দ্বৈপায়ন ছদ্মনামে দেশের রাজনৈতিক সমস্যা এবং কৃষক ও শ্রমিকদের সমস্যা নিয়ে মুজফ্‌ফর আহমদ বিশ্লেষণাত্মক রচনা লেখেন।

১৯২৩ সাল থেকে মুজফ্‌ফর আহমদ ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেসের সঙ্গে যুক্ত হন এবং বিভিন্ন স্থানে শ্রমিক আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। পূর্বে জড়িত হয়েছিলেন ইন্ডিয়ান সীমান্ত এসোসিয়েশনের সঙ্গে। ১৯২৩ সালের ১৭ মে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে রাজবন্দী হিসেবে কারাগার আটকে রাখে। ওই সময় ভারতবর্ষের পেশোয়ারে প্রথম কমিউনিস্ট ষড়যন্ত্র মামলা চলছিল। ওই মামলায় মুজফ্‌ফর আহমদকে জড়ানোর চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু প্রমাণাভাবে তা সম্ভব হয়নি। তবে ১৯২৪ সালের মার্চ মাসে কানপুর কমিউনিস্ট (বলশেভিক) ষড়যন্ত্র মামলার মুজফ্‌ফর আহমদ, শ্রীপদ আমৃত ডাঙ্গে, শওকত ওসমানী ও নলিনী গুপ্তের চার বছর করে সাজা দেওয়া হয়। যক্ষ্ম রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণে ১৯২৫ সালের ১২ সেপ্টেম্বর তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।

১৯২৫ সালের ১ নভেম্বর কলকাতায় ‘লেবার স্বরাজ পার্টি’ গঠিত হয়। ১৯২৬ সালে কৃষ্ণনগরে অনুষ্ঠিত কৃষক সম্মেলন তার উদ্যোগে হয়েছিল। ওই সন্মেলনে ‘মজুর-কৃষক’ পার্টি’ গঠিত হয়। প্রথমে ‘লাঙল’ নামে ‘মজুর-কৃষক’ পার্টির পক্ষ থেকে পত্রিকা প্রকাশিত হয়। পরে ১৯২৬ সালের ১২ আগস্ট থেকে তার সম্পাদনায় ‘গণবাণী’ সাপ্তাহিক প্রকাশিত হতে থাকে।

১৯২৭ সালে কলকাতায় ডক-মজুর, মেথর, চটকল মজুর ধর্মঘটে তিনি প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করেন। ১৯২৭ ও ১৯২৮ সালে ভারতের বিভিন্ন স্থানে শ্রমিকদের আন্দোলন জোরদার হয়। এ সব আন্দোলনে কমিউনিস্ট পার্টি ও ‘মজুর-কৃষক পার্টি’ একযোগে কাজ করে।

১৯২৭ সালের ৩১ মে বোম্বেতে কমিউনিস্টদের এক সম্মেলনে মুজফ্ফর আহমদ যোগদান করেন। ১৯২৮ সালের ২২-২৩ ডিসেম্বর কলকাতায় সর্বভারতীয় ওয়ার্কর্স অ্যান্ড পেজান্টস পার্টির সম্মেলন অনুষ্ঠানের প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন তিনি। এর তিন দিন আগে ঝরিয়ায় অনুষ্ঠিত এ আইটিইউসি’র অধিবেশনে প্রতিনিধিদের ভোটে মুজফ্‌ফর আহমদসহ তিনজন কমিউনিস্ট সভাপতি নির্বাচিত হন।

১৯২৯ সালের ২০ মার্চ ব্রিটিশ সরকার বিভিন্ন এলাকা থেকে কমিউনিস্ট নেতাদের গ্রেফতার করে। এ সময় মুজফ্‌ফর আহমদকেও প্রেফতার হন। তার বিরুদ্ধে ‘মিরাট কমিউনিস্ট ষড়যন্ত্র মামলা’ দায়ের করা হয়। এই মামলায় অভিযুক্ত ৩১ জন। ৪ বছর ধরে চলে এ মামলা। ১৯৩৩ সালে ৯ জানুয়ারি মামলার রায় বের হয়। মুজফ্‌ফর আহমদকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পরে আপিলে এ সাজা কমিয়ে ৩ বছর করা হয়। এই তিন বছর তিনি মীরাট, নৈনি, আলজোড়া, দার্জিলিং, বর্ধমান এবং ফরিদপুর জেলে ছিলেন।

জেল থেকে মুক্ত হবার পর তাকে নজরবন্দীতে রাখা হয়। প্রথমে ফরিদপুর, পরে নিজের গ্রামের বাড়ি সন্দ্বীপে ও মেদিনীপুরের এক গ্রামে তাকে অন্তরীণ রাখা হয়। ব্রিটিশ সরকার সশস্ত্র বিপ্লবীদের দমনের জন্য ‘বেঙ্গল অর্ডিনান্স’ আইন চালু করে, সে আইনে তাকে গ্রেফতার করা হয়। ১৯৩৬ সালের ২৫ জুন তিনি মুক্তি পান।

মুক্তি পাওয়ার পর পার্টিকে সংগঠিত করার কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখেন। যে সব বিপ্লবী কর্মী কারামুক্ত হয়ে আসেন, তিনি তাদের সাথে যোগাযোগ করে বিভিন্ন জেলায় পার্টি গঠনের ব্যবস্থা করেন। ১৯৩৮ থেকে ১৯৪০ সালের মধ্যে যুক্তবঙ্গের ২৮টি জেলাতেই কমিউনিস্ট পার্টি গড়ে ওঠে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবার পর ১৯৪০ সালে ব্রিটিশ সরকার আবারও কমিউনিস্টদের প্রতি সন্দেহ করে করতে থাকে। এ সময় কলকাতায় শ্রমিকদের মাঝে মুজফফর আহমদের খুব প্রভাব ছিল। যার কারণে সরকার ওই বছর ফেব্রুয়ারি মাসে তাকে কলকাতা ছেড়ে যাবার আদেশ দেয়। আদেশ অমান্য করায় তার এক মাসের জেল হয়। মুক্তির পর আবারও তাকে কলকাতা ছাড়ার আদেশ দেওয়া হয়। এবার তিনি প্রকাশ্যে কলকাতা ত্যাগ করে চলে যান। কিন্তু ২৩ জুন (১৯৪০) গোপনে কলকাতায় ফিরে আসেন। তখন থেকে ১৯৪২ সালের ২৩ আগস্ট পর্যন্ত গোপনে পার্টির কাজ চালিয়ে যান।

১৯৪৫ সালে ময়মনসিংহের নেত্রকোণা নিখিল ভারত কৃষক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তিন দিনব্যাপী এ সম্মেলনে মুজফ্‌ফর আহমদ সভাপতিত্ব করেন। ১৯৪৮ সালে কলকাতায় ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির একক কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়। এই কংগ্রেস ছাড়া (কারণ দেশভাগের পর তথাকথিত পূর্বপাকিস্তানের নেতারা তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে) প্রত্যেকটি পার্টি কংগ্রেসে তিনি কেন্দ্রীয় কমিটিতে নির্বাচিত হন। দেশ বিভাগের আগে তিনি বঙ্গীয় পার্টির সম্পাদক ছিলেন। তিনি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। এই সম্মেলনে ভারত ও পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি আলাদা-আলাদাভাবে কাজ চালানো সিদ্ধান্ত নেয়।

১৯৪৮ সালের ২৫ মার্চ কমিউনিস্ট পার্টি বেআইনি ঘোষিত হলে ভারত সরকার এই আইনে মুজফ্‌ফর আহমদকে গ্রেফতার করে। ১৯৫১ সালের ২৭ এপ্রিল তিনি মুক্তি পান। ওই বছর তিনি রাজ্য পার্টির সম্পাদক হন। ১৯৫৭ সালে তিনি শারীরিক অসুস্থতার কারণে পার্টির সম্পাদক পদ ছেড়ে দেন। তখন জ্যোতিবসু সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।

ওই সময় সোভিয়েত ইউনিয়ন ও চীনের কমিউনিস্ট পার্টির মতভেদ ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির উপর প্রভাব পড়ে। যার ফলে ১৯৬৮ সালে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। মুজফ্ফর আহমদের নেতৃত্বাধীন সোভিয়েতপন্থী অংশের নাম দেওয়া হয় সিপিআই (এম) বা ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী)।

১৯৬৯ সালে সশস্ত্র কৃষক অভূত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের ঘোষণা দিয়ে গঠিত হয় সিপিই (এম-এল) বা ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী-লেনিনবাদী)। এরা প্রধানত মাও সে তুং (মাও জে ডং) ও চীনের লাইনের অনুসারী। মুজফ্‌ফর আহমদ এই সময়েও মস্কো ও পিকিং-এর অন্ধ অনুসরণের বিরোধিতা করেন।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে সিপিআই (এম) পূর্ণ সমর্থন দেয়। ঐ দিনগুলোতে পার্টি মুখপত্র ‘গণশক্তি’র দৈনন্দিন সংবাদ সমালোচনা ও সম্পাদকীয় তার স্বাক্ষর মেলে।

মুজফ্‌ফর আহমদের লেখা উল্লেখযোগ্য বই- 'ভারতের কমিউনিস্ট গড়ার প্রথম যুগ', 'প্রবাসে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি গঠন', 'আমার জীবন ও ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি' ও ‘সমকালের কথা’।

১৯০৭ সালে হাফেজা খাতুনের সঙ্গে মুজফ্‌ফর আহমদের বিয়ে হয়। কিন্তু সাংসারিক জীবনে তিনি সেভাবে সময় দিতে পারেননি। ১৯৩৫ সালে সরকারের নজরবন্দী থাকার সময় ১৪ বছর পর পরিবারের সঙ্গে দেখা হয়। এ সময় তিনি সন্দ্বীপে একমাত্র কন্যা আফিকা খাতুনের সঙ্গে কবি আবদুল কাদিরের বিয়ে দেন।

মুজফ্‌ফর আহমদের জীবনের বেশিরভাগ সময় কেটেছে পার্টি অফিসে, কারাগারে কিংবা গোপন আস্তানায়। এছাড়া পার্টির ভাড়া করা ঘরে অথবা কর্মস্থলে। নিজের আর্থিক নিরাপত্তার জন্য বা ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসেবে কিছু তিনি করেননি। জীবনের শেষ দিনগুলোতে পার্টি নিয়োজিত একজন কর্মী তার দেখাশুনা করতেন। মৃত্যুর আগে প্রায় সাত মাস তিনি কলকাতার একটি নার্সিং হোমে ভর্তি ছিলেন। ১৯৭৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর তিনি মারা যান।

(দ্য রিপোর্ট/ওএস/ডব্লিউএস/জেএম/ডিসেম্বর ১৮, ২০১৩)