বিশ্বজিৎ হত্যা মামলায় ৮ জনের মৃত্যুদণ্ড, ১৩ জনের যাবজ্জীবন
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : বহুল আলোচিত বিশ্বজিৎ হত্যা মামলার রায়ে ৮ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ১৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেছেন আদালত। ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪ এর বিচারক এবিএম নিজামুল হক বুধবার এ রায় ঘোষণা করেন। এর আগে দুপুর ১২টায় রায় ঘোষণার জন্য আসামিদের আদালতে আনা হয়।
বিশ্বজিৎ হত্যা মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে ৪ ডিসেম্বর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪ এর বিচারক এবিএম নিজামুল হক বুধবার রায়ের এই দিন ধার্য করেন।
আদালত রফিকুল ওরফে শাকিল, রাজন তালুকদার (পলাতক), মাহফুজুর রহমান ওরফে নাহিদ, ইমদাদুল হক ওরফে এমদাদ, জিএম রাশেদুজ্জামান ওরফে শাওন, মীর মোহাম্মদ নূরে আলম ওরফে লিমন (পলাতক), সাইফুল ইসলাম ওরফে সাইফুল, কাইয়ূম মিয়া ওরফে টিপুকে মৃত্যদণ্ডাদেশ দেন। ১৮৬০ সালের ডি পেনাল কোডের ৩০২/৩৪ ধারা অনুযায়ী বিশ্বজিৎ দাশকে খুনের অপরাধের অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় দোষী সাব্যস্ত করে তাদের প্রত্যেককেই মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। উক্ত আসামিদের মৃত্যু নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত গলায় ফাঁসির রশি ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রাপ্ত পলাতক আসামি যথাক্রমে রতন তালুকদার ও মীর নূরে আলম লিমন স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ বা গ্রেফতার হয়ে কারাগারে প্রবেশের পর মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করার নির্দেশ দিয়েছেন।
খন্দকার মো. ইউনুস আলী ওরফে ইউনুস (পলাতক), তারিক বিন জহুর ওরফে তমাল (পলাতক), গোলাম মোস্তফা ওরফে মোস্তফা, মো আলাউদ্দিন (পলাতক), মো ওবায়দুল কাদের ওরফে তাহসিন (পলাতক), ইমরান হোসেন ওরফে ইমরান (পলাতক) আজিজুর রহমান ওরফে আজিজ (পলাতক), আল আমিন শেখ (পলাতক), রফিকুল ইসলাম (পলাতক), এএইচএম কিবরিয়া, মনিরুল হক ওরফে পাভেল (পলাতক), মোহম্মদ কামরুল হাসান পলাতক ও মোশাররফ হোসেন ওরফে মোশারফ (পলাতক)কে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেন। ১৮৬০ সালের ডি পেনাল কোডের ৩০২/৩৪ ধারা অনুযায়ী বিশ্বজিৎ দাসকে খুনের অপরাধের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে প্রত্যেককে যাবজ্জীবন এবং অতিরিক্ত ২০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড অনাদায়ে ১ বছর সশ্রম কা্রাদণ্ড দেওয়া হয়।
রাষ্ট্রপক্ষের সরকারি কৌঁসুলি এসএম রফিকুল ইসলাম দ্য রিপোর্টকে বলেন, আমরা ১৭ জন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ ভিডিও ফুটেজের মাধ্যমে আদালতে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আসামিদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের বিষয়ে তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে। এ কারণে রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি জানিয়েছে।
অন্যদিকে, আসামিপক্ষের আইনজীবীরা জানান, এ মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যার যে অভিযোগ আনা হয়েছে তার প্রত্যক্ষ কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে উপস্থাপন করতে পারেনি। এ কারণে তারা মনে করে, আসামিরা খালাস পাবেন।
২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর বিরোধী দলের অবরোধ-কর্মসূচি চলাকালে বাহাদুর শাহ পার্কের কাছে পথচারী বিশ্বজিৎ দাসকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কর্মীরা নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করে।
হত্যার ঘটনায় ওই রাতে সূত্রাপুর থানায় মামলা করে পুলিশ। পরদিন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবি ও ভিডিও ফুটেজ দেখে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে ওই ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষকে।
তদন্ত শেষে চলতি বছরের ৫ মার্চ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের ২১ জন কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় ডিবি পুলিশ। এই আসামিদের মধ্যে আটজন- রফিকুল ইসলাম, এসএম কিবরিয়া, এমদাদুল হক, সাইফুল ইসলাম মাহফুজুর রহমান, রাশেদুজ্জামান, কাইয়ুম মিয়া ও গোলাম মোস্তফা কারাগারে আটক আছেন।
বাকি ১৩ আসামি রাজন তালুকদার, ইউনুস আলী, ওবায়দুল কাদের, ইমরান হোসেন, আজিজুর রহমান, মীর মো. নূরে আলম, আজিজুল হক, তারেক বিন জোহর, আলাউদ্দিনআল আমিন শেখ, মনিরুল হক, কামরুল হাসান ও মোশাররফ হোসেন পলাতক রয়েছেন।
এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ বিশ্বজিতের বাবাসহ ৩২ জনকে সাক্ষী হিসেবে উপস্থাপন করে। উভয়পক্ষের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে রাষ্ট্রপক্ষ গত ২৭ নভেম্বর যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করে।
(দ্য রিপোর্ট/জেএ/জেএম/শাহ/এমডি/ডিসেম্বর ১৮, ২০১৩)