বিশ্বজিৎ হত্যার রায়ে আদালতের পর্যবেক্ষণ
‘নৈতিকতার কোনো স্তরেই প্রাণহানি সমর্থনযোগ্য নয়’
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : বিশ্বজিৎ দাস হত্যাকাণ্ডটি অন্য দশটি হত্যাকাণ্ডের মতো নয়। বিভিন্ন দিক থেকে এটি ব্যতিক্রম ও স্পর্শকাতর মামলা। কারণ হত্যাকাণ্ডটি রাতের অন্ধকারে কিংবা গোপনে করা হয়নি। বরং প্রকাশ্য দিবালোকে আসামিরা ছুরি, চাপাতি, লোহার রড, লাঠি প্রভৃতি দেশিয় অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে তাকে হত্যা করে। যা মানবতা ও নৈতিকতাবিরোধী। কোনো নিরাপরাধ মানুষের এমন প্রাণহানী ও অহেতুক রক্তপাত সমর্থনযোগ্য নয়।
রক্তাক্ত ওই জখমের দৃশ্যটি আন্তর্জাতিক মিডিয়াসহ দেশের ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার মাধ্যমে যেভাবে প্রচারিত হয়েছে তা দেখে মানুষ হতবাক ও আতঙ্কিত হয়েছে।
বিশ্বজিতের বাবা অনন্ত চন্দ্র দাশ সাক্ষ্য প্রদানকালে পুত্রশোকে কাতর হয়ে যে আহাজারি করে ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করেছেন তা আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ বিশ্বাসযোগ্য ও দালিলিক সাক্ষ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে।
আসামিপক্ষের কৌশলীরা দাবি করেন, আসামিদের সংঘটিত অপরাধটি আইনগতভাবে খুন বলে গণ্য হবে না।
নথি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, মামলার মোট ২২ জন আসামির মধ্যে ১৩ জন পলাতক আছেন। এ ক্ষেত্রে বিশ্বাস করা যায় যে, ওই অপরাধের সঙ্গে পলাতক আসামিরা ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল বিধায় অপরাধবোধের তাড়নায় আদালতে বিচারের সম্মুখীন না হয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে পলাতক রয়েছেন।
ঘটনার দিন ১৮-দলীয় জোটের রাজনৈতিক কর্মসূচি ‘অবরোধের’ বিপরীতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্রলীগ নামধারী ছাত্র সংগঠনের কিছু ছাত্র অবরোধবিরোধী মিছিল থেকে মারাত্মক জখম করে বিশ্বজিৎকে। পরে মিটফোর্ড হাসপাতালে নেওয়া হলে তিনি সেখানে মৃত্যুবরণ করেন।
রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্য, আসামিদের দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি, ভিডিও ফুটেজ, প্রিন্ট মিডিয়ার ধারণকৃত স্থির চিত্রসহ বিভিন্ন আলামত পর্যবেক্ষণ শেষে আদালত এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, ছোরা, চাপাতি, লোহার রড, কাঠের দণ্ড, কিল-ঘুষি ও লাঠির আঘাতে বিশ্বজিৎ দাশের মৃত্যু হয়েছে। এটি দণ্ডবিধি ৩০০ ধারার সঙ্গা অনুযায়ী খুন যা দণ্ডবিধি ৩০২/৩৪ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ এবং আসামিরা ওই ধারাই দোষী।
মামলার সাক্ষ্য প্রমাণ ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনার ওপরে রাষ্ট্রপক্ষ সন্দেহাতীতভাবে দণ্ডবিধি ৩০২/৩৪ ও ১৪৩ ধারায় অভিযোগ প্রমাণ করেছেন। এই মর্মে তাদের শাস্তি প্রদান করা হয়েছে।
(দ্য রিপোর্ট/জেএ/এফএস/এমডি/নূরু/ডিসেম্বর ১৮, ২০১৩)