সাতক্ষীরা সংবাদদাতা : আতঙ্কিত এক জনপদের নাম সাতক্ষীরা। হত্যা, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ ও বাড়িঘর ভাঙচুরের শঙ্কায় সাধারণ মানুষ। প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও ঘটছে সহিংস ঘটনা।

এই বাস্তবতায় রবিবার রাতে যৌথবাহিনীর অভিযান শুরু হলেও সাতক্ষীরার পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক হয়নি। যৌথবাহিনীর অভিযানে ঘরছাড়া মানুষেরা ঘরে ফিরতে সাহস পাচ্ছে না।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আগরদাড়ি গ্রামের শ্যামল কুমার ঘোষাল দ্য রিপোর্টকে জানান, ২৬ নভেম্বর পুলিশের গুলিতে স্থানীয় এক জামায়াতকর্মী নিহত ও কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়ার দিন দুই দফা হামলা হয় তাদের বাড়িতে। সেই থেকে তারা বাস করছেন সাতক্ষীরা শহরে। এখনও বাড়ি ফিরতে সাহস পাচ্ছেন না।

সদর উপজেলার সাতানী নারায়ণজোল গ্রামের ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের নেতা প্রয়াত কেশব চন্দ্র সমাজদারের ছেলে পল্লী চিকিৎসক অমল সমাজদার দ্য রিপোর্টকে জানান, ১২ ডিসেম্বর রাত ২টার দিকে জামায়াত-শিবিরকর্মীরা তার বাড়িঘর ভাঙচুর করে অগ্নিসংযোগ করে। এর পর তিনি পরিবার নিয়ে চলে এসেছেন সাতক্ষীরা শহরে এক আত্মীয়ের বাড়িতে।

দেবহাটা উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার সুভাষ ঘোষের দোতলা বাড়ি ১৩ ডিসেম্বর সকালে গানপাউডার দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। বাড়ির ২১ সদস্য সবাই নিজের পৈতৃক বাসস্থান ছেড়ে চলে গেছেন অজানা গন্তব্যে।

দীর্ঘদিন ধরে থানার মধ্যে কনস্টেবলদের সঙ্গে রাতযাপন করেন আগরদাড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক কুচপুকুর গ্রামের নজরুল ইসলাম।

তিনি জানান, তার পরিবারের ওপর অনেকবার হামলা হয়েছে। নিজবাড়িতে ৫ ডিসেম্বর গুলি করে হত্যা করা হয় তার বড় ভাই সিরাজুল ইসলামকে। এ ছাড়া পুড়িয়ে দেওয়া হয় তার বাড়ি ও ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান।

সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম দ্য রিপোর্টকে জানান, সাম্প্রতিক সহিংসতায় আওয়ামী লীগের কমপক্ষে ১৬ জন নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে জামায়াত-শিবিরকর্মীরা। এ ছাড়াও আওয়ামী লীগ ও হিন্দু সম্প্রদায়ের কমপক্ষে ৫০টি বাড়িঘর, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এ কারণে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী বাড়িঘর ছেড়ে চলে গেছেন।

আশাশুনির প্রতাপনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. জাকির হোসেন দ্য রিপোর্টকে জানান, তার ইউনিয়নের পাঁচ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুজ্জামান, সহ-সভাপতি শওকত গাজী, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল আজিজ ফকির, তিন নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আমজাদ হোসেন, যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে বাড়ি ছাড়া। এমন অসংখ্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী বাড়ি ছাড়া মাসের পর মাস।

এ পরিস্থিতিতে রবিবার রাতে জেলায় যৌথবাহিনীর অভিযান শুরু হয়েছে। যৌথবাহিনী ও বিক্ষুব্ধ জনতার হাতে জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা আবদুল খালেক মণ্ডলসহ বেশ কিছু জামায়াত নেতার বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়েছে।

অন্যদিকে যৌথবাহিনীর অভিযানের খবর পেয়েও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এখনও বাড়ি ফিরতে সাহস পাচ্ছেন না।

জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা আবদুল খালেক মণ্ডল সাতক্ষীরাকে তাদের ঘাঁটি উল্লেখ করে জানান, তারা ১৮ দলের কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে পালন করেন। এর মধ্যে পুলিশের গুলিতে কমপক্ষে ২১ জন জামায়াত-শিবিরকর্মী নিহত হয়েছেন। তাদের হাতে কোনো আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী নিহত হয়নি বলে দাবি করেন তিনি।

তিনি আরো জানান, সাতক্ষীরায় জামায়াতের অবস্থান দুর্বল করতে আওয়ামী লীগ পরিকল্পিতভাবে প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে নেতাকর্মীদের বাড়িঘর ভাঙচুর করছে। বর্তমান পুলিশ সুপারকে একটি রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের ‘ক্যাডার’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, তিনি (এসপি) হেফাজতে ইসলামের ওপর শাপলা চত্বরে গুলিবর্ষণ করেছিলেন। তাকে সাতক্ষীরায় এনে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করা হচ্ছে।

সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবীর দ্য রিপোর্টকে জানান, কাউকে বাড়ি ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব পুলিশ নেবে না। সাধারণ মানুষ যতক্ষণ নিরাপদ বোধ না করবে ততক্ষণ যৌথবাহিনীর অভিযান অব্যাহত থাকবে।

অভিযানের মধ্যে জামায়াত নেতাদের বাড়িঘর ভাঙচুরের বিষয়ে তিনি বলেন, বাড়িঘর তো অনেক দিন ধরে ভাঙচুর হচ্ছে। ভাঙচুরের বিষয়ে কেউ অভিযোগ দিলে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান নবাগত এ পুলিশ সুপার।

(দ্য রিপোর্ট/এমআরইউ/এমএইচও/এপি/শাহ/এসবি/ডিসেম্বর ১৯, ২০১৩)