কবি আবদুল কাদির
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : কবি, সাহিত্য সমালোচক ও ছান্দসিক হিসেবে খ্যাত আবদুল কাদির ১৯৮৪ সালের ১৯ ডিসেম্বর ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।
বর্তমান ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আড়াইসিধা গ্রামে আবদুল কাদির ১৯০৬ সালের ১ জুন জন্মগ্রহণ করেন। ১৯২৩ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া অন্নদা মডেল হাইস্কুল থেকে ৫টি বিষয়ে লেটারসহ ম্যাট্রিক পাস করেন। ১৯২৫ সালে ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজ থেকে আইএসসি পাস করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ পাস করেন।
১৯২৬ সালে আবদুল কাদির কলকাতায় বিখ্যাত সওগাত পত্রিকায় সম্পাদনা বিভাগে চাকরি নেন। ১৯৩০ সালে কলকাতা কর্পোরেশনের অধীন একটি প্রাথমিক স্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। বাংলা ১৩৩৭ সনে জয়তী নামে একটি মাসিক পত্রিকা প্রকাশ এবং সম্পাদনা ছাড়াও একই বছর নবশক্তি পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৩৮ সালে তিনি কলকাতার যুগান্তর পত্রিকায় যোগ দেন। ১৯৪২ সালে কবি কাজী নজরুল ইসলামের দৈনিক নবযুগ পত্রিকার বার্তা সম্পাদক নিযুক্ত হন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষদিকে সরকারের প্রচার সংস্থার বাংলা অনুবাদক পদে যোগ দেন। ১৯৪৬ সালে সাপ্তাহিক মোহাম্মদী ও অর্ধ-সাপ্তাহিক পয়গাম পত্রিকায় চাকরি করেন। ১৯৫২ সালে পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের মুখপত্র বিখ্যাত মাসিক মাহে নও পত্রিকায় কর্মরত থাকার পর ১৯৬৪ সালে কেন্দ্রীয় বাংলা উন্নয়ন বোর্ডের প্রকাশনা কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পান। ১৯৭০ সালের ১ জুন তিনি সরকারি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
মুসলিম সাহিত্য সমাজের (১৯২৬) নেতৃত্বে ঢাকায় ‘বুদ্ধির মুক্তি’ আন্দোলন সূচিত হয়- কবি আবদুল কাদির সেটির নেতৃস্থানীয় উদ্যোক্তা। তিনি ছিলেন সাহিত্য সমাজের মুখপত্র বার্ষিক শিখা (১৯২৭) পত্রিকার প্রকাশক। ছন্দ সমীক্ষণ (১৯৭৯) নামে তার একটি বিখ্যাত বই রয়েছে। যাতে তিনি বাংলা ছন্দ সম্পর্কে মৌলিক বক্তব্য রেখেছেন। তার ছন্দ বিচারের ক্ষমতা ছিলো অতুলনীয়। সাহিত্য সম্পাদক হিসেবেও তিনি পরিশ্রমী এবং একনিষ্ঠতার ছাপ রেখেছেন।
তিনি ছন্দ বিষয়ে কিছু সিরিজ বক্তৃতা রাখেন। এগুলো হলো- 'ড. মুহম্মদ এনামুল হক বক্তৃতামালা' (১৩৯০) এবং 'মতীয়র রহমান বক্তৃতামালা: ১৯৭৫'। আবদুল কাদিরের এ বক্তৃতামালা তার মৃত্যুর পর 'বাঙলা ছন্দের ইতিবৃত্ত' নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হয়। ১৯৮৫ সালে প্রকাশিত প্রথম খণ্ডে স্থান পায় চর্যাপদ থেকে মধুসূদন দত্ত পর্যন্ত। ১৯৯১ সালে প্রকাশিত দ্বিতীয় খণ্ডে স্থান পায় পঞ্চাশের দশকের ওমর আলী পর্যন্ত। বই দুটির মাধ্যমে তিনি বাংলা কবিতার ছন্দের সামগ্রিক মূল্যায়ন করেছেন।
আবদুল কাদিরের কবিতায় মোহিতলাল মজুমদারের ধ্রুপদী সংগঠন এবং নজরুলের উদাত্ত আবেগের চমৎকার সমন্বয় দেখা যায়। তার উল্লেখযোগ্য কবিতার বই হলো- দিলরুবা (১৯৩৩) ও উত্তর বসন্ত (১৯৬৭)। প্রবন্ধ সঙ্কলনের মধ্যে রয়েছে লোকায়ত সাহিত্য (১৯৮৫) ও বাংলা কাব্যের ইতিহাস: মুসলিম সাধনার ধারা (১৯৪৪)। এছাড়া তার রচিত জীবনী গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- কবি নজরুল (১৯৭০), যুগকবি নজরূল (১৯৮৬), মওলানা মোহাম্মদ নঈমুদ্দীন ও কাজী আবদুল ওদুদ (১৯৭৬) ।
আবদুল কাদির বেশ কিছু রচনাবলী সম্পাদনা করেন- কাব্যমালঞ্চ (যুগ্মভাবে, ১৯৪৫), এয়াকুব আলী চৌধুরী রচনাবলী (১৯৬৩), নজরূল রচনাবলী (৫ খণ্ড, ১৯৬৬-১৯৮৪), শিরাজী রচনাবলী (১৯৬৭), কাজী ইমদাদুল হক রচনাবলী (১৯৬৮), আবুল হুসেন রচনাবলী (১৯৬৮), লুৎফর রহমান রচনাবলী (১ম খণ্ড, ১৯৭২), রোকেয়া রচনাবলী (১৯৭৩), বাংলা সনেট (১৯৭৪) ইত্যাদি।
আবদুল কাদির বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৬৩), আদমজী সাহিত্য পুরস্কার (১৯৬৭), একুশে পদক (১৯৭৬), নজরুল একাডেমি স্বর্ণপদক (১৯৭৭), কুমিল্লা ফাউন্ডেশন পদক (১৯৭৭), মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন স্বর্ণপদক (১৯৭৭) ও মুক্তধারা পুরস্কার লাভ করেন।
১৯৩৫ সালে তিনি কমরেড মুজফ্ফর আহমদের মেয়ে আফিয়া খাতুনকে বিয়ে করেন।
(দ্য রিপোর্ট/ওএস/ডব্লিউএস/এসবি/লতিফ/ডিসেম্বর ১৯, ২০১৩)