আঞ্চলিক ট্রান্সপোর্ট ও ট্রান্সশিপমেন্ট গড়ে তুলতে বিনিয়োগ করছে দাতারা
জোসনা জামান, দ্য রিপোর্ট : আঞ্চলিক ট্রান্সপোর্ট ও ট্রান্সশিপমেন্ট ব্যবস্থা গড়ে তুলতে বিনিয়োগ করছে দাতারা। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ ও পাশ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ উন্নত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আর্থিক সহযোগী জোটের নেতৃত্ব দিচ্ছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। অন্য সংস্থাগুলো হচ্ছে আবুধাবি ফান্ড এবং ওপেক ফান্ড।
এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে ইতোমধ্যেই গ্রহণ করা হয়েছে জয়দেবপুর চন্দ্রা-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা সড়ক চার লেনে উন্নত করার কাজ। এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় করা হচ্ছে ২ হাজার ৭৮৮ কোটি ৪৫ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। এর মধ্যে দাতারা যৌথভাবে বিনিয়োগ করছে ১ হাজার ৮৪৩ কোটি ৬৮ লাখ ২১ হাজার টাকা। বাকী ৯৪৪ কোটি ৭৭ লাখ ৩৪ হাজার টাকা ব্যয় করা হচ্ছে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে।
২০১৮ সালের মার্চ মাসের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ শেষ করবে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের আওতায় সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। এ বিষয়ে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ঢাকা কার্যালয়ে নিযুক্ত যোগাযোগ কর্মকর্তা গোবিন্দবার বৃহস্পতিবার দ্য রিপোর্টকে বলেন. ‘এই অঞ্চলের যোগাযেগের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে ট্রান্সপোর্ট ও ট্রান্সশিপমেন্ট ব্যবস্থা গড়ে ওঠা জরুরি। এজন্য এডিবির নেতৃত্বে ও আগ্রহে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। সরকারের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী সবকিছু চলছে। তিনি বলেন, আমরাই বাকি দুটি দাতাকে এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত করেছি।
এ বিষয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের যুগ্ম সচিব ও এডিবি ডেস্কের প্রধান সাইফুদ্দিন আহমেদ দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘এ প্রকল্পটির কাজ চলছে। এটি বাস্তবায়িত হলে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে গোটা উত্তরবঙ্গ ও পাশ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ উন্নত হবে, যানজট নিরসন হবে, সড়ক নিরাপত্তা উন্নত হবে, আঞ্চলিক ট্রান্সপোর্ট ও টান্সশিপমেন্ট গড়ে উঠবে এবং দারিদ্র্য হ্রাসে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে। এজন্য উন্নয়ন সহযোগীরা এ প্রকল্পটিতে বিনিয়োগ করছে।
প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে, বিদ্যমান ৭০ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ককে ২ লেন হতে চার লেনে উন্নীত করা। এই ৭০ কিলোমিটার মহাসড়কে দুর্ঘটনার ঝুঁকিপূর্ণ স্থান চিহ্নিত করে সড়ক নিরাপত্তার উন্নয়ন, এ সড়কে ৫টি ফ্লাইওভার, ২৭টি সেতু ও ৬০টি কালভার্ট নির্মাণ এবং এক হাজার ছয়শ’ বর্গমিটার আয়তনের সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় নির্মাণ করা হবে।
এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. শামসুল আলম দ্য রিপোর্টকে জানান, বর্তমান বাস্তবায়িতব্য ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার (২০১১-১৫) এক্সিলারেট গ্রোথ এন্ড রিডিউচিং প্রভার্টি এর পার্ট টু সেক্টরার স্ট্রাটেজিস প্রোগ্রাম এন্ড পলিসিস এর চ্যাপ্টার ফোর এ বলা হয়েছে ট্রান্সপোর্ট সার্ভিস টু রিডিউস কস্ট এন্ড ইমপ্রুভ ওয়েলফেয়ার। তাই এ প্রকল্পটি ট্রান্সপোর্ট সেক্টর অবজেকটিভস স্ট্রাটেজিস এন্ড পলিসিস এর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার আওতায় সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের জন্য ৪ হাজার ৬৭২ কিলোমিটার নতুন রাস্তা নির্মাণ এবং ৮ হাজার ৪৩৩ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সরকারের এ উদ্যোগ ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হবে।
সুত্র জানায়, বাংলাদেশ ও পাশ্ববর্তী এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ উন্নত করার মাধ্যমে ট্রান্সপোর্ট ও ট্রান্সশিপমেন্ট ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রকল্পটি গ্রহণ করার আগে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) আর্থিক সহায়তায় টেকনিক্যাল অ্যাসিসটেন্স ফর সাব রিজিওনাল রোড ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্ট প্রিপারেটরী ফ্যাসিলিটি প্রকল্পের মাধ্যমে সাসেক রোড কানেকটিভিটি প্রজেক্ট অব জয়দেবপুর চন্দ্রা-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা রোড ফোর লেন হাইওয়ে নামের এ প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছিল।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বছরভিত্তিক দাতাদের অর্থ বরাদ্দ ধরা হয়েছে, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ১৯ কোটি ২৩ লাখ ১৭ হাজার টাকা, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৪৩৫ কোটি ৭৮ লাখ ৯৬ হাজার টাকা, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৫৫১ কোটি ৯৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৫৩২ কোটি ২০ লাখ ২৫ হাজার টাকা, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ২৩৮ কোটি ৫০ লাখ ১১ হাজার টাকা এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৬৬ কোটি ১ লাখ ৩৩ হাজার টাকা। মোট ১ হাজার ৮৪৩ কোটি ৬৮ লাখ ২১ হাজার টাকা।
অন্যদিকে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে বছরভিত্তিক বরাদ্দ ধরা হয়েছে, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৩৮৪ কোটি ৩ লাখ ৫ হাজার টাকা, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ১৩৫ কোটি ৮ লাখ ২৭ হাজার টাকা, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১৭৫ কোটি ৪৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১৭২ কোটি ৭৯ লাখ ২৯ হাজার টাকা, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৬৭ কোটি ৫৮ লাখ ৫৪ হাজার টাকা এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৯ কোটি ৫৫ লাখ ৭৭ হাজার টাকা। মোট ৯৪৪ কোটি ৭৭ লাখ ৩৪ হাজার টাকা।
(দ্য রিপোর্ট/জেজে/এমসি/লতিফ/ডিসেম্বর ১৯, ২০১৩)