‘প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য উস্কানিমূলক’
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : দেশে সহিংসতা সৃষ্টির জন্য প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ‘উস্কানি’র অভিযোগ তুলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের পরিবারের সদস্যদের ওপর এবং বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এখন যেসব হামলার ঘটনা ঘটছে এর সব দায়দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীকেই নিতে হবে।’
গুলশানে দলীয় চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে ১৮ দলের ডাকা চতুর্থ দফার অবরোধের ৭২ ঘণ্টার শেষদিনের চিত্র তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘গতকাল (বুধবার) প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের পরিবারের সদস্য, তাদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নিয়ে যে উক্তি করেছেন, তা উস্কানিমূলক। কোনো দেশের সরকারপ্রধানের মুখ থেকে একরকম বক্তব্য কেবল বেমানানই নয়, জাতির জন্য লজ্জাজনক।’
প্রধানমন্ত্রী বক্তব্যের জবাবে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বিরোধী দলকে ভোট না দিয়ে জাতি অভিশাপমুক্ত হয়েছে। এই কথা থেকে বোঝা যায়, তিনি অভিশাপমুক্ত করতে বিরোধী দলবিহীন নির্বাচনের আয়োজন করেছেন। দলের ও জোটের ১৫৪ প্রার্থীকে কথিত নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতিয়ে আনার নামে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) অভিশপ্ত হয়েছেন বলে জনগণ বিশ্বাস করে। আমরা মনে করি, এই অভিশাপের মধ্য দিয়ে সরকার ও নির্বাচন কমিশন গোটা নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে কলঙ্কিত করেছে। এই অভিশাপের কালিমা প্রধানমন্ত্রীকে চিরদিন বহন করতে হবে।’
সাতক্ষীরা, মেহেরপুরসহ বিভিন্ন স্থানে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সরকার যে কোনো উপায়ে ক্ষমতায় টিকে থাকার অশুভ প্রয়াসে নানা কৌশল নিয়েছে। তারা একদিকে পাতানো নির্বাচনের নাটক চালিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে গণতন্ত্রকামী জনগণের আন্দোলন দমানোর জন্য খুন-গুম-হামলা-মামলার মতো নৃশংস ও নিপীড়নের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও সরকারি বাহিনীসমূহকে জনগণের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে। এ অবস্থা চলতে দেওয়া যায় না। আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলে দিতে চাই, কোনো ধরনের কৌশলে বিভ্রান্ত করে কিংবা শক্তি প্রয়োগে মানুষকে আন্দোলন থেকে বিরত রাখা যাবে না।’
সংবাদ সম্মেলনে নজরুল ইসলাম জানান, অবরোধে বৃহস্পতিবার ১ জন নিহত, ভ্রাম্যমাণ আদালতে ৩৪ জনকে সাজা প্রদান, ৫৩৩ জন গ্রেফতার, ৭২২ জন আহত এবং ৩০০০ জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।
চলমান পরিস্থিতিতে ১৮ দলীয় জোটের আন্দোলন অব্যাহত রাখা ছাড়া কোনো উপায় নেই উল্লেখ করে নজরুল ইসলাম বলেন, ২৫ ডিসেম্বর খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসবের দিন। এটা বিবেচনায় নিয়ে ১৮ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে ২১ ডিসেম্বর শনিবার ভোর ৬টা থেকে ২৪ ডিসেম্বর মঙ্গলবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত সারাদেশে অবিরাম শান্তিপূর্ণ রাজপথ, রেলপথ ও নৌপথ অবরোধ কর্মসূচি চলবে। তবে ২১ ডিসেম্বর শনিবার জাতীয় টিকাদান কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত জাতিসংঘ এবং স্বাস্থ্য বিভাগের যানবাহন, সংবাদপত্রের গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স ও লাশবাহী গাড়ি অবরোধের আওতামুক্ত থাকবে।
উল্লেখ্য, ১৮ দলের চতুর্থ দফা অবরোধ মঙ্গলবার ভোর ৬টা থেকে শুরু হয়ে শুক্রবার ভোর ৬টায় শেষ হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত আসাদুজ্জামান রিপন, সহদপ্তর সম্পাদক আব্দুল লতিফ জনি, শামীমুর রহমান শামীম, আসাদুল করিম শাহীন।
(দ্য রিপোর্ট/এমএইচ/জেএম/নূরুল/ডিসেম্বর ১৯, ২০১৩)