দু’টি মার্চেন্ট ব্যাংকের অমনিবাস (স্যাডো) একাউন্টে অস্বাভাবিক শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় এবং জমাকৃত টাকা উত্তোলনে অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। আলহাজ্ব মোহাম্মদ মোসাদ্দেক আলী ফালু, গোলাম মোস্তফা ও তার স্ত্রী নাসিমা আক্তার লতা এসব অনিয়মের সঙ্গে জড়িত বলে দ্বিতীয়বার তদন্ত শেষে বিএসইসি জানতে পেরেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বিএসইসি’র দুই পরিচালক মীর মোশারফ হোসেন চৌধুরী ও জাহাঙ্গীর আলমের সমন্বয়ে গঠিত কমিটি অমনিবাস নিয়ে অধিকতর ও পুনঃঅধিকতর তদন্তের এ কার্যক্রম শেষ করেন। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ‘সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ ১৯৬৯’-এর ১৭ ধারা লঙ্ঘনের প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি।

অমনিবাসের অন্তরালে কারসাজির বিষয়ে অধিকতর তদন্তের সুপারিশ করা হয়েছিল ইব্রাহীম খালেদের প্রতিবেদনে। ওই সুপারিশের আলোকে গত দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে বিএসইসি অমনিবাস কারসাজির তদন্ত করে।

বিএসইসি’র পুনঃঅধিকতর তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অমনিবাস একাউন্টের মাধ্যমে অস্বাভাবিক শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় এবং জমাকৃত টাকা উত্তোলন করার বিষয়ে অনিয়ম পাওয়া গেছে এবং এটা উদ্দেশ্যমূলক বলে প্রতীয়মান হয়েছে।

অমনিবাস একাউন্টের অন্তরালে লুকায়িত এসব হিসাবে ক্রয়-বিক্রয়ের প্রতিফলনই নেই বলে ইব্রাহিম খালেদের প্রতিবেদনও উল্লেখ করা হয়েছে। এ ধরনের কার্যক্রম বিএসইসি আইনের পরিপন্থী।

সিকিউরিটিজ আইন অনুযায়ী, এ ধারা ভঙ্গের জন্য সিভিল অথবা ক্রিমিনাল (ফৌজদারি) যে কোন আইনে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। ফৌজদারি আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হলে কমিশনের আইন বিভাগ কর্তৃক অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করার সুযোগ রয়েছে। তবে গত ৩ ডিসেম্বর কমিশনের ৫০১তম সভায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনের পরিবর্তে সিকিউরিটিজ আইনেই ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এর আগে ১৯৯৬ ও ২০১১ সালের শেয়ার কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাগুলোর নিষ্পত্তি এখনও না হওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে বিএসইসি সূত্র জানায়।

এর আগে গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর বিএসইসির তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী কমিশনের ৪৪৫তম সভায় অমনিবাস হিসাব নিয়ে অধিকতর তদন্তে উল্লিখিত অনিয়মের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। অধিকতর তদন্তে তিনটি মার্চেন্ট ব্যাংকের অমনিবাস হিসাবের মাধ্যমে শেয়ার কারসাজির অভিযোগে পাঁচ পরিবার, দুই ব্যক্তি এবং দুই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। নির্দেশনা কার্যকর করার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগকে তা দ্রুত এনফোর্সমেন্ট বিভাগে পাঠাতে বলা হয়।

পরবর্তীতে ১০ অক্টোবর ৪৪৮তম কমিশন সভায় একই বিষয়ে পুন:অধিকতর তদন্তের সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১৯ ডিসেম্বর বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মোঃ সাইফুর রহমান স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করা হয়।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সভাপতি আহসানুল ইসলাম টিটু সিকিউরিটিজ আইনে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া প্রসঙ্গে দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘পুঁজিবাজার ধসের কারণে বিনিয়োগকারীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাই কারো বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হলে তা অবশ্যই আর্থিকভাবে হওয়া উচিত।’

এ বিষয়ে বিএসইসির দায়িত্বপ্রাপ্ত মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘ইব্রাহিম খালেদের তদন্ত কমিটির সুপারিশের আলোকে সকল বিষয়ের ওপর অধিকতর তদন্ত কার্যক্রম শেষ হয়েছে। এ বিষয়ে গঠিত কমিটি ইতোমধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন কমিশনে দাখিল করেছে। কমিশন সার্বিক দিক বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে এনফোর্সমেন্ট বিভাগকে দায়িত্ব দিয়েছে। যা বিএসইসির প্রকাশিত স্মরণিকায় উল্লেখ রয়েছে।’

জানা গেছে, সিভিল বা সিকিউরিটিজ আইনে ব্যবস্থা নিলে কমিশনের এনফোর্সমেন্ট বিভাগ অভিযুক্তদের শুনানিতে তলব করে অধ্যাদেশের ধারা ২২ মোতাবেক পদক্ষেপ নিতে পারে। এক্ষেত্রে অভিযুক্তদের ন্যূনতম ১ লাখ টাকা জরিমানা করার বিধান রয়েছে। তবে সর্বোচ্চ জরিমানা আদায়ের ক্ষেত্রে কোন সীমা রাখা হয়নি। আর জরিমানা অনাদায়ে অভিযুক্তদের প্রতিদিন অতিরিক্ত ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা গুনতে হবে।

(দ্য রিপোর্ট/এনটি/এইচকে/এইচএসএম/নূরুল/ডিসেম্বর ১৯, ২০১৩ )