ইইউ ‘বেয়াদব’ পাকিস্তান ‘বর্বর’ : অর্থমন্ত্রী
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : ঢাকার ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতদের আচরণকে ‘বেয়াদবি’ এবং পাকিস্তানকে ‘বর্বর’ জাতি হিসেবে আখ্যায়িত করলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
সচিবালয়ে দেশের বস্ত্র খাতের তিন সংগঠনকে প্রণোদনা প্রদান সংক্রান্ত বৈঠক শেষে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
বিজয় দিবসে স্মৃতিসৌধে না যাওয়ায় ঢাকার ইউরোপীয় ইউনিয়নের কঠোর সমালোচনা করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন গেল না, দিস ইজ বেয়াদবি, এক্কেবারে বেয়াদবি। আর এটা দুঃখের বিষয় এজন্য যে, আন্তর্জাতিক শিষ্টাচার হিসেবে যা প্রচলতি রয়েছে তথা ভিয়েনা কনভেনশনের জন্মই হয়েছে ইউরোপে, সেজন্য এটা আরো বেশি খারাপ লাগে। যারা এ কনভেনশন তৈরি করলো, তাদের রাষ্ট্রদূতেরা এরকম দুর্বৃত্ত হলো যে, ভায়োলেটেড ইট ফান্ডামেন্টালি।’
অপরদিকে পাকিস্তানের জাতীয় সংসদের প্রস্তাব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তারা (পাকিস্তান) কোনখানে দোষ করেছে, কোনখানে করেনি, সেটা তারা এখনো জানে না, বোঝে না। দুঃখ হয় এজন্য যে, ৪২ বছর পরেও ওই বর্বর কালচার থেকে তারা বেরিয়ে আসতে পারেনি। দেশটাকে তারা ধ্বংস করে ফেলছে নিজেরাই। ভাঙ্গন আসছে তাদের দেশে, এটা কেউ রোধ করতে পারবে না। জাতি হিসেবে তারা এখনো প্রতিষ্ঠিত হতে পারে নি।’
বস্ত্রখাতের তিন সংগঠনকে (বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমএ) প্রণোদনা প্রদান সংক্রান্ত বৈঠক প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘তাদের দাবি মূলত: দুটি। যেহেতু তারা মজুরি বাড়িয়েছেন সেহেতু তারা কিছু সুবিধা চাচ্ছেন। এর আগে তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছেও গিয়েছিলেন, সেখানে তারা তিনটি দাবি তুলেছিলেন। এর প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী আমাকে বলেছেন তাদের কিছু সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার জন্য। গতবার যেভাবে দেওয়া হয়েছিল সেভাবে।’
তিনি বলেন, ‘তাদের প্রধান দাবিটি হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে। ঋণখেলাপী সংক্রান্ত। সে মোতাবেক তারা বেসরকারি ব্যাংকগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেছেন, সেখানে তারা কিছু আশ্বাস পেয়েছেন।’
ব্যবসায়ীদের কী প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কিছু প্রণোদনা তো তাদের দিতেই হবে। তারা অনেক বড় ক্রাইসিসে পড়েছেন। বেতনের চেয়ে বড় হচ্ছে তাদের ক্রাইসিস। ৩১ ডিসেম্বরের পর অনেকে ঋণখেলাপী হয়ে যাবেন। সুতরাং এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতেই হবে।’
তবে কী প্রণোদনা দেওয়া হবে সে বিষয়ে কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন অর্থমন্ত্রী। এ বিষয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আবার বসতে হবে এমন ইঙ্গিতও দেন তিনি।
উল্লেখ্য, চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে গত ১১ ডিসেম্বর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে ৮ দফা দাবি জানায় বস্ত্রখাতের তিন সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও বিটিএমএ।
তিন সংগঠনের উল্লেখযোগ্য দাবিসগুলোর মধ্যে রয়েছে- উৎসকর দশমিক ৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে সেটা দশমিক ২৫ শতাংশ করা, নতুন বেতনস্কেল অনুযায়ী গার্মেন্টস শ্রমিকদের চার মাসের (নভেম্বর ’১৩-ফেব্রুয়ারি ’১৪) বেতন ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে প্রদান এবং এই অর্থ একটি সুদবিহীন ব্লকড একাউন্টে রেখে ২ বছর মেয়াদে প্রদানের সুযোগ, সব ধরনের মেয়াদী ঋণ/প্রকল্প ঋণ/এলটিআর/এমপিআই/ফোর্সড ২ বছরের জন্য সুদবিহীন ব্লকড একাউন্টে রাখা, লোন চলমান পরিস্থিতিতে পোশাকশিল্প খাতের কোনো ব্যাংক ঋণ শ্রেণীবিন্যাসিত না করা, রফতানি আয়ের উপর প্রতি ডলারের বিনিময় হারে ৩ টাকা হারে বিশেষ বোনাস প্রদান, টিটি’র বিপরীতে বিশেষ প্রণোদনা প্রদান ইত্যাদি।
তাদের দাবির প্রেক্ষিতে অর্থমন্ত্রী সেদিন বলেছিলেন, ‘সবগুলো দাবি পূরণ করা হবে- এটা বলা যাচ্ছে না। তবে প্রয়োজন যে আছে সেটা স্বীকার করি। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে এ মাসের মধ্যেই সরকারের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হবে।’
বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ড. আতিউর রহমান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মোঃ গোলাম হোসেন বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
(দ্য রিপোর্ট/এসআর/জেএম/নূরুল/ডিসেম্বর ১৯, ২০১৩)