দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : জাতীয় প্রেস ক্লাব, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে সপ্তাহের একাধিক দিনে সরকারদলীয় কয়েকজন নেতার আলোচনা সভা অথবা সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

হুমায়ুন কবির মিজি নামের এক আওয়ামী প্রেমী এসব আলোচনা সভা ও সেমিনারের আয়োজন করে থাকেন। বঙ্গবন্ধু একাডেমি, নৌকা সমর্থক গোষ্ঠীসহ বেশ কয়েকটি সংগঠনের ব্যানারে এসব আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।মিজি বঙ্গবন্ধু একাডেমির সাধারণ সম্পাদক এবং নৌকা সমর্থক গোষ্ঠীর সভাপতিসহ অনেক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন বলে দাবি করেন।

এসব আলোচনা সভার সংবাদ সংগ্রহের জন্য সব সাংবাদিককে নির্দিষ্ট দুটি মুঠোফোন নম্বর (বাংলালিংক ও এয়ারটেল) থেকে ক্ষুদেবার্তা পাঠানো হয়।

লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো এসব অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি ৩ জনের মধ্যে সীমিত। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, বন ও পরিবেশ মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এবং আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম।

এসব অনুষ্ঠানে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় প্রতিদিনই নির্দিষ্ট প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথি, সভাপতি ও আলোচক উপস্থিত আছেন। সাম্যবাদী দল, শ্রমিকলীগ, যুবলীগ, জাসদ, নৌকা প্রজন্ম, রিকশা লীগসহ কিছু সংগঠনের প্রায় অপরিচিত মুখকে এসব অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির উপস্থিতির আগে কথা বলতে দেখা যায়।

প্রধান অতিথি আসা মাত্রই সবার বক্তৃতা কাট-ছাট করা হয়। সভাপতি বক্তৃতা শুরু করেন। তার সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা শেষে প্রধান অতিথি বক্তৃতা দেন, অনুষ্ঠান শেষ হয়।

সরেজমিনে একাধিক আলোচনা সভায় উপস্থিত থেকে দেখা গেছে হলরুমগুলোতে আনুমানিক দুইশ’র মতো আসন থাকে। এর অর্ধেক খালি থাকে। বাকি অর্ধেক আসনের কিছু পূর্ণ করেন আগত সংবাদকর্মীরা, অন্যগুলো বিভিন্নভাবে ম্যানেজ করা লোকবল দিয়ে পূরণ করা হয়।

৩ ডিসেম্বর প্রেস ক্লাবের হলরুমের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন ড. হাছান মাহমুদ। এতে শাহজাহানপুর থেকে যোগ দিয়েছেন জাকির আহমেদ নামের একজন। তার কাছে বেশ কিছু প্রশ্ন করা হলে তিনি এই প্রতিবেদককে জানান, আমি কোনো রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নই। এলাকার ছাত্রলীগের বড় ভাই ডাকছেন তাই আসছি। আসা যাওয়ার খরচ, দুপুরের খাবার এগুলো ভাই দেন। বাড়তি টাকাও অনেক সময় পাওয়া যায়। বড় ভাই আয়োজকদের কাছ থেকে টাকা পান। সেই টাকাই আমাদের দেন।

১৭ ডিসেম্বর কাকরাইলে অবস্থিত ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত। আয়োজক নৌকা সমর্থক গোষ্ঠী। আলোচনা সভায় উপস্থিত নাহেদ মিয়া কেরানীগঞ্জ থেকে এসেছেন। তার এখানে আসার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি কোনো দল করি না। বন্ধু বলছে এই জন্য আসলাম। নাহেদ মিয়া একটি ওয়ার্কসপে কাজ করেন।

যোগাযোগ করলে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত দ্য রিপোর্টকে বলেন, আমি কোন অনুষ্ঠানে যাব এটাও কি কেউ নির্ধারণ করে দিবে?

আপনার মতো সিনিয়র নেতা যখন নাম সর্বস্ব সংগঠন, যারা আলোচনা সভা নিয়ে বাণিজ্য করে বলে অভিযোগ আছে। সেখানে যাওয়াটা কতটুকু যুক্তিসঙ্গত?

-এসব কথা কারা বলছে?

সাংবাদিক মহলে এসব আলোচনা আছে।

-যারা আলোচনা সভার আয়োজন করছেন তাদের সঙ্গে কথা বলুন।

(এরপর তিনি টেলিফোন লাইন কেটে দেন)

এ বিষয়ে আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি দ্য রিপোর্টকে বলেন, আমাদেরকে অনেক সংগঠনই দাওয়াত দেয়। যেগুলোতে যাওয়ার সুযোগ আছে সেগুলোতে যাই। বিশেষ কোনো সংগঠনের প্রতি আমার দুর্বলতা নেই।

সংবাদ সংগ্রহের জন্য আয়োজকদের কাছ থেকে পাঠানো ক্ষুদেবার্তার ভাষা দেখলেই আয়োজকদের অবস্থা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে। তারই কয়েকটি হুবহু তুলে ধরা হলো . . .

AGAMIKAL3 DECAEMBAR MONGOLBAR SOKAL 10.30 TA JATIO PRESS CLAB HOLRUM (2.FLLOR) BONGOBONDHU AKADEMI"R SEMINAR CHIFGEST MONTRI DO. HASAN MAHMUD MP === (MIZI)===

AGAMIKAL10 DECAEMBAR MONGOLBAR BIKAL 4TA DIPLOMA ENJINEARS.KAKRAIL NOWKA SORTHAK GOSTHI"R CEMINAR CHIFGEST SURONJIT SHENGUPTO===(MIZI)===

AGAMIKAL 13 DECEMBAR SUKROBAR SOKAL 11.TA DIPLOMA ENJINEARS.KAKRAIL (G.FLLOR) HOLRUM BONGOBONDHU AKADEMI"R CEMINAR CHIFGEST SURONJIT SHENGUPTO===(MIZI)===

AGAMIKAL 17 DECAEMBAR MONGOLBAR SOKAL 10.30 TA JATIO PRESS CLAB HOLRUM (2.FLLOR) BONGOBONDHU AKADEMI"R SEMINAR GEST MONTRI DO. HASAN MAHMUD ABON KAMROL ISLAM=== (MIZI)===

AGAMIKAL 17 DECEMBAR MONGOLBAR SOKAL 11.30TA DIPLOMA ENJINEARS.KAKRAIL (G.FLLOR) HOLRUM NOWKA SORTHAK GOSTHI"R CEMINAR CHIFGEST SURONJIT SHENGUPTO===(MIZI)===

এসব বিষয়ে কথা বলতে আমরা যোগাযোগ করি হুমায়ুন কবির মিজির সঙ্গে। তিনি নিজেকে পিডব্লিউডি-এর তালিকাভুক্ত ঠিকাদার হিসেবে দাবি করেন। এসব অনুষ্ঠানের সকল খরচ তিনি নিজেই বহন করেন বলে জানান।

নিজেকে সাংবাদিক দাবি করে মিজি বলেন, আমি ৮ বছর দৈনিক সবুজপত্রের প্রধান প্রতিবেদক ছিলাম।

এরপর তার কাছে সাংবাদিকদের মোবাইলে পাঠানো এসএমএস-এর বানান, ‘সভা’ এবং ‘সেমিনার’ এর পার্থক্য, সুনির্দিষ্ট অতিথি থাকেন কেন এসব বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি। জাতীয় প্রেস ক্লাবে গিয়ে তার সঙ্গে কথা বলার আমন্ত্রণ জানিয়ে ফোন কেটে দেন। এরপর মোবাইলে চেষ্টা করলেও তিনি আর ফোন ধরেননি।

এই বিষয়ে আওয়ামী লীগ বিটের সিনিয়র এক সাংবাদিকের কাছে জানতে চাইলে তিনি দ্য রিপোর্টকে বলেন, এগুলো নাম সর্বস্ব কিছু প্রতিষ্ঠানের দোকানদারি। সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মতো সিনিয়র নেতারা যখন এসব অনুষ্ঠানে সপ্তাহে একাধিকবার আসেন তখন বলার কিছু থাকে না। আমাদেরকে সংবাদ সংগ্রহ করতে আসতে হয়। কী আর করব।

একটি প্রথম সারির অনলাইন নিউজ পোর্টালের সাংবাদিক নাম প্রকাশ না করে বলেন, সব অনুষ্ঠানে আসতে চাই না। সরকার ও আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা যখন অতিথি হয়ে আসেন তখন না এসে উপায় থাকে না। কারণ অন্য সাইটে যখন নিউজ চলে যায় তখন আমাদের হাউজও সেটা চায়।

(দ্য রিপোর্ট/এইচএসএম/ডিসেম্বর ১৯, ২০১৩)