দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: আবারো একটানা ৮৩ ঘণ্টার অবরোধের ডাক দিয়েছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮দলীয় জোট। লক্ষ্য দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রতিহত করা। কিন্তু নির্বাচন হতে বাকি হাতেগোনা কয়েকদিন। এরপরও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে একটার পর একটা কর্মসূচি দিয়ে যাচ্ছে বিএনপি।

কার্যত কর্মসূচি ঘোষণা পর্যন্তই যেন দলটির দায় শেষ। জনগণ তাদের কর্মসূচি পালন করবে এমন আশায় দিনের পর দিন কর্মসূচি দিয়ে যাচ্ছে দলটি। কিন্তু রাজধানীতে জীবনযাত্রা অনেকটাই স্বাভাবিক। অবরোধও চলে অনেকটা ঢিলেঢালাভাবে।

বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, অবরোধের সমর্থনে কোনো মিছিল করা যায় না। কারণ, নেতা-কর্মীদের পুলিশ মাঠে নামতে দেয় না। রাস্তায় নামলেই চলে গ্রেফতার, গুলি। গুলির ভয়ে মাঠে নামছেন না অধিকাংশ নেতা-কর্মী।

নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলীয় নেতা প্রবেশের চেষ্টা না করলেও গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বসে নিয়মিতভাবেই কর্মসূচি ঘোষণা দেয়া হচ্ছে। ওখানে বসেই সারাদেশের অবরোধের চিত্র তুলে ধরা হয়। দলের চেয়ারপারসনের পক্ষ থেকে নেতা-কর্মীদের রাজপথে থাকার নির্দেশও আসে সেখান থেকেই। কিন্তু সারাদেশে অবরোধে রাজপথে নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি থাকলেও আন্দোলনের প্রাণকেন্দ্র রাজধানীতে নেই তেমন কোনো উত্তাপ।

রাজধানীর আন্দোলন চাঙ্গা করতে অজ্ঞাত স্থানে মহানগরীর নেতা-কর্মীদের নিয়ে মঙ্গলবার ৭২ ঘণ্টার অবরোধ শুরুর আগে এক যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকার আন্দোলন জোরদার করতে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকার পক্ষে নেতা-কর্মীদের মাঠে নামার জন্য নির্দেশ দেন ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবদুস সালাম। কিন্তু অবরোধের শেষ দিনও ঢাকার রাজপথে কোনো ধরনের মিছিল বা শোডাউন দেখা যায়নি।

তফসিল ঘোষণার পর চতুর্থ দফায় বিএনপির অবরোধ কর্মসূচি শেষ হচ্ছে শুক্রবার ভোর ছয়টায়। এ অবরোধে এ পর্যন্ত দুই-একটি ঝটিকা মিছিল ছাড়া নেতা-কর্মীদের মাঠে নামতে দেখা যায়নি।

ঢাকার আন্দোলনের মাঠে বিএনপি নেতাদের দেখা যায় না- এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘সরকারের পেটুয়া বাহিনী নেতা-কর্মীদের কোথাও দাঁড়াতে দিচ্ছে না। র‌্যাব-পুলিশ দিয়ে গুলি করছে। এ ছাড়া বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতা কারাগারে আছেন। বাকি নেতাদের অনেকেই পুলিশের ধর-পাকড়ের ভয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন। অবৈধ ও অসাংবিধানিক নির্বাচন জনগণই প্রতিহত করবে। সে জন্যই সরকার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফলাফল ঘোষণা করছে। মাঠে নির্বাচন না হলে এ নির্বাচন ঠেকানো মুশকিল।’ তবে ৫ তারিখের নির্বাচন ঠিকই প্রতিহত করা হবে বলে ‍তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি আরো বলেন, ‘সরকারের আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ক মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পাশাপাশি শাসকদলীয় ক্যাডারদের সহযোগে বিরোধীদলীয় আন্দোলনকে দমাতে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সে অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন স্থানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতে শাসকদলীয় ক্যাডাররা বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে হামলা শুরু করেছে। যৌথবাহিনী নামিয়ে সরকার হিট লিষ্ট তৈরি করে বিরোধী নেতা-কর্মীদের খুন করা শুরু করেছে।’

একই কথা বলেন বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাজিম উদ্দিন আলমও। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘বর্তমান অবৈধ সরকারবিরোধী দলকে বাইরে রেখে নির্বাচন করে আবার ক্ষমতায় যেতে চাচ্ছে। আমাদের আন্দোলন ছাড়া আর কোনো পথ খোলা নেই। কিন্তু রাজপথে নামলেই পাখির মতো গুলি করে পুলিশ। গ্রেফতার করে, মামলা দেয়। এসব করে আন্দোলন দমানো যাবে না। জনগণ তাদের দাবি ঠিকই আদায় করে নেবে। আন্দোলন সাধারণ মানুষের কাছে চলে গেছে।’

প্রসঙ্গত, ২৫ ডিসেম্বর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর এখন পর্যন্ত চার দফা দাবিতে ১৮ দিন অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে ১৮দলীয় জোট। এছাড়া শনিবার ভোর ছয়টা থেকে আবারো ৮৩ ঘণ্টা অবরোধের ডাক দিয়েছে বিরোধী জোট।

(দ্য রিপোর্ট/এমএইচ/এমএইচও/এসকে/লতিফ/ডিসেম্বর ২০, ২০১৩)