আল হেলাল শুভ, দ্য রিপোর্ট : চলতি সপ্তাহে নিত্যপণ্যের বাজারে দামের বেশ তারতম্য দেখা গেছে। চাল, মুরগি (ব্রয়লার), গুঁড়ো দুধ ও আটার দাম বেড়েছে। সবজির দাম কিছুটা কমলেও পেঁয়াজের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। শুক্রবার রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে এ তথ্য জানা গেছে। চালের দাম বাড়তি হওয়ার পেছনে হরতাল -অরোধের প্রভাব রয়েছে। এ জন্য অতিরিক্ত যানবাহন ভাড়াকেই দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা।

সব চালে কেজিতে ১ থেকে ২ টাকা দাম বেড়েছে। মিনিকেট চাল প্রতি কেজি ৪৮ থেকে ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অথচ গত সপ্তাহে একই চাল বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৪৬ থেকে ৪৭ টাকায়। নাজিরশাইল চাল বাজারভেদে ৫৭ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪২ টাকায়।

চালের দাম বাড়তি হওয়ার কারণ প্রসঙ্গে মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজারের রহমান স্টোরের মালিক আব্দুর রহমান বলেন, ‘হরতাল-অবরোধে চালবাহী ট্রাক ঠিকমত ঢাকায় আসছে না, তাই দাম কিছুটা বেড়েছে।’ একই কথা বললেন হাতিরপুল কাঁচাবাজারের ভাই ভাই স্টোরের মোহাম্মদ আমীর।

বাজারে গুঁড়োদুধের দাম প্রতি কেজিতে ২০ টাকা ও হাফ কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে। মোহাম্মদপুর বাজারের শাহজালাল স্টোরের লোকমান বলেন, ‘ডিপ্লোমা ও ডানো গুঁড়োদুধ আগে হাফ কেজির দাম ছিল ৩৩০ টাকা কিন্তু বর্তমানে একই দুধ বিক্রি হচ্ছে ৩৪৫ টাকায়।’

চলতি সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগিরও দাম বেড়েছে। প্রতি কেজি ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়। এছাড়া দেশি মুরগি প্রতি কেজি ৩৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে বলে জানান হাতিরপুল বাজারের মাসুম পোল্ট্রি হাউজের কর্মচারী মোহাম্মদ মোস্তফা। গত সপ্তাহে প্রতি কেজি ব্রয়লার বিক্রি হয়েছে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকায়।

গরু মাংস ব্যবসায়ীরা মাংসের দাম কম বলে দাবি করলেও মোহাম্মদপুর বাজারের মাংস ক্রেতা সাদাত হোসেন বলেন, মাংসের দাম একটু বেশি বলেই মনে হচ্ছে।

ওই বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস ২৭০ থেকে ২৮০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। এছাড়া খাসির মাংস বিক্রি হয় ৪২০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি।

মোহাম্মদপুর কাঁচাবাজারের খাসির মাংস ব্যবসায়ী খুরশিদ আলম বলেন, আসল খাসির মাংস প্রতি কেজি আমরা বিক্রি করি ৫০০ টাকায়। তবে ভেড়ার মাংস যাকে খাসি বলে চালিয়ে দেওয়া হয় তা বিক্রি হচ্ছে ৪২০ থেকে ৪৫০ টাকায়।

এদিকে মাছের দাম আগের চেয়ে বেশি বলে জানান কেরানীগঞ্জ থেকে মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজারে আসা ক্রেতা হাফেজ রফিকউল্লাহ।

হাতিরপুল ও মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজারে সবজির দোকান ঘুরে দেখা গেছে, বাজারভেদে সবজির দামে তারতম্য রয়েছে। ফুলকপি প্রতি পিস ২৫ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া টমেটো প্রতি কেজি ৫০ টাকা, বেগুন প্রতি কেজি ৩০ টাকা, মরিচ প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, শসা প্রতি কেজি ২৫ থেকে ৩০ টাকা, শিম প্রতি কেজি ২৫ থেকে ৩০ টাকা, করলা প্রতি কেজি ৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। নতুন আলু প্রতি কেজি ২৫ থেকে ৪০ টাকা দরে ও পুরাতন আলু ১৮ থেকে ২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

মোহাম্মদপুর টাউন হল কাঁচাবাজারের সবজি ব্যবসায়ী জিয়াউর রহমান বলেন, দেশে অবরোধ-হরতালের কারণে প্রতি সপ্তাহে ব্যবসায় ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা ক্ষতি হচ্ছে। গত ১০-১২ দিন ৫ হাজার টাকারও বিক্রি হয়নি। অথচ স্বাভাবিক দিনগুলোতে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার সবজি বিক্রি হতো।

জানা গেছে, গত সপ্তাহে ফুলকপি প্রতি পিস ৩০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এছাড়া টমেটো প্রতি কেজি ৬০ টাকা, বেগুন প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, মরিচ প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা, শসা প্রতি কেজি ৪০ টাকা, শিম প্রতি কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, করলা প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

গত সাত দিন ধরে অপরিবর্তিত রয়েছে পেঁয়াজের দাম। দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা দরে। এছাড়া ভারতীয় পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৯০ থেকে ৯৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। হাতিরপুল কাঁচাবাজারের এক পেঁয়াজ ব্যবসায়ী বলেন, দেশে টানা অবরোধের কারণে বাজারে পেঁয়াজ আনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাই পেঁয়াজের দাম কমেনি। তবে জিরা ছাড়া অন্য কোনো মসলার দাম চলতি সপ্তাহে বাড়েনি বলে জানান মোহাম্মদপুর কাঁচাবাজারের মসলা ব্যবসায়ী শাওন। অবশ্য রাজধানীর আদাবর থেকে মসলা কিনতে আসা ইশিতা বলেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, ‘মসলার দাম বাড়তি বলেই মনে হচ্ছে। গত কোরবানির ঈদের পর মসলার দাম কমার কথা থাকলেও তা কমেনি।’

অন্যান্য নিত্যপণ্যের মধ্যে দেশি ডাল প্রতি কেজি ১১০ টাকা ও বোল্ডার প্রতি কেজি ৮০ টাকা, ডিম প্রতি হালি ২৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

(দ্য রিপোর্ট/ এএইচএস/ এইচএসএম/ রাসেল/ ডিসেম্বর ২০, ২০১৩)