ডিসেম্বরেই নিজামীর মামলার রায়
এসএম সাকিল আহমেদ, দ্য রিপোর্ট : জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে দায়ের করা মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার রায় ডিসেম্বর মাসেই ঘোষণা করা হবে বলে জানা গেছে। গত ২০ নভেম্বর রায়ের জন্য অপেক্ষমান (সিএভিতে) তালিকায় রেখে দেন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির। নিজামীর রায়ের মধ্যদিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দশম রায় প্রদান পূর্ণ হবে।
নিয়ম অনুযায়ী, শুনানি গ্রহণকারী বিচারপতিই মামলার রায় প্রকাশ করে থাকেন। ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবিরের ৩১ ডিসেম্বর অবসর গ্রহণ করার কথা। তাই অবসর গ্রহণের আগেই অর্থাৎ ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যেই নিজামীর রায় দিতে হবে বিচারপতি এটিএম ফজলে কবিরকে ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট সুলতান মাহমুদ সীমন দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘আইনানুযায়ী যে বিচারক মামলার কার্যক্রম পরিচালনা করবেন, তিনিই মামলার রায় লিখবেন। সুতরাং চেয়ারম্যান বিচারপতি অবসরে যাওয়ার আগে রায় লিখে যাবেন।’
তিনি বলেন, ‘আমি যতটুকু জানি উনি (এটিএম ফজলে কবির) রায় ঘোষণা করে যাবেন। অর্থাৎ এ মাসেই নিজামীর রায় ঘোষণা করা হবে।’
প্রসিকিউটর জানান, বিচারপতিরা সব ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে থেকে কাজ করেন। সুতরাং উনি রায় না লিখে বা ঘোষণা না করে চলে যাবেন না।’
সে ক্ষেত্রে ২৬ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার কিংবা ২৯ ডিসেম্বর রবিবার নিজামীর রায় দেওয়া হতে পারে। ইতোমধ্যেই রায় লেখার কাজ প্রায় সম্পন্ন হয়েছে বলেও জানা গেছে।
সূত্র জানায়, বিচারপতির অবসর গ্রহণের আগে তাকে ট্রাইব্যুনাল থেকে হাইকোর্টে স্থানান্তর করা হতে পারে। সে অনুযায়ী ৩০ ডিসেম্বর তাকে হাইকোর্টে স্থানান্তর এবং ৩১ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে অবসর দেওয়া হবে।
চতুর্দশ সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারকদের অবসরের বয়সসীমা বাড়িয়ে ৬৭ তে উন্নীত করা হয়। ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩ তে তার বয়স ৬৭ বছর পূর্ণ হবে। সে অনুযায়ী ট্রাইব্যুনাল-১ এ চলমান অন্যসব মামলার কার্যক্রম শেষ না করেই ৩১ ডিসেম্বর অবসরে যেতে হচ্ছে এটিএম ফজলে কবিরকে।
গত ১৭ থেকে ১৯ নভেম্বর তিনদিন নিজামীর পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন সম্পন্ন করেন ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক, অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম ও তাজুল ইসলাম।
২০ নভেম্বর প্রসিকিউশনের পক্ষে পাল্টা যুক্তি ও আইনি পয়েন্ট উপস্থাপন করেন প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী, ড. তুরিন আফরোজ ও মোহাম্মদ আলী।
মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে নিজামীর আইনজীবী ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সম্পূর্ণ ভিন্ন মতামত ব্যক্ত করেন।
আসামিপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক সাংবাদিকদের কাছে বলেন, ‘একাত্তর সালে সংঘটিত অপরাধের সঙ্গে নিজামীর যে সম্পৃক্ততার কথা বলা হয়েছে, সে বিষয়ে কোনো ধরনের প্রমাণ প্রসিকিউশন উপস্থাপন করতে পারেনি। ফলে মামলা থেকে মাওলানা নিজামী খালাস পাবেন।’
অপরদিকে প্রসিকিউটর মো. আলী বলেন, ‘নিজামীর বিরুদ্ধে আনিত ১৬টি অভিযোগের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষ ৮ নম্বর অভিযোগ ব্যতীত অবশিষ্ট ১৫টি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। তার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হবে বলে আশা করছি।’
নিজামীর পক্ষে সাক্ষী দেওয়ার জন্য ১০ হাজার ১১১জন সাক্ষীর তালিকা থেকে ৪জন সাফাই সাক্ষীর অনুমতি দিয়ে গত ৬ অক্টোবর আদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল। আসামিপক্ষ ১০ হাজার ১১১জন সাক্ষীর তালিকা জমা দিলেও ২৫জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আদালতে আবেদন করেন। কিন্তু আদালত তা নাকচ করে ২০ অক্টোবর থেকে নিজামীর পক্ষে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু করার আদেশ দেন।
নিজামীর বিরুদ্ধে গত বছরের ২৬ আগস্ট থেকে ৮ অক্টোবর র্পযন্ত প্রসকিউশনের সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন মুক্তিযোদ্ধা, অধ্যাপক, সাংবাদিক ও ইতিহাসবিদ, তদন্ত কর্মকর্তাসহ মোট ২৬জন সাক্ষী।
২০১১ সালের ১১ ডিসেম্বর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন।
২০১২ সালের ৯ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। এবছর ২৮ মে ১৬টি অভিযোগ এনে নিজামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদালত।
তার বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, লুট, র্ধষণ, উস্কানি, সহায়তা, পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্র এবং বুদ্ধিজীবী হত্যাসহ মোট ১৬টি অভিযোগ আনা হয়।
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার মামলায় ২০১০ সালের ২৯ জুন মতিউর রহমান নিজামীকে গ্রেফতার করা হয়। একই বছরের ২ আগস্ট এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।
(দ্য রিপোর্ট/এসএ/এনডিএস/সাদি/ডিসেম্বর ২০,২০১৩)