এরশাদের সম্মতি ও রওশনের নির্দেশে নির্বাচনে আছি দাবি করে প্রচারে নেমে বিপাকে পড়েছেন জাতীয় পার্টির সরকারপন্থী নেতারা। আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রত্যাহার করা আসনের নেতা থেকে শুরু করে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি হওয়া নেতারাও পদচ্যুতি, কর্মীদের দ্বারা লাঞ্ছিত, এমনকি হামলারও শিকার হচ্ছেন।

জাতীয় পার্টি ও এরশাদ নির্বাচনে নেই- শুক্রবার দুপুরে এরশাদের ছোটভাই জিএম কাদেরের এমন ঘোষণার পর পার্টির নেতাকর্মীদের কোন ধরনের সমর্থন পাচ্ছেন না নির্বাচনে অংশ নেওয়া জাপার নেতারা।

তবে নির্বাচনে অংশ নেয়া জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদের দাবি, ‘আমাদের চেয়ারম্যান স্যার জিএম কাদের ও মহাসচিব রুহুল আমীন হাওলাদারকে দলের মুখপাত্র নিয়োগ করেছেন এটা সত্য। আমরা যারা নির্বাচনে অংশ নিয়েছি তারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে এখন পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব। তাদের কথার বাইরে তো আর আমরা যেতে পারি না।’

কাজী ফিরোজ রশিদ বলেন, ‘ভাই, যারা বলেন নির্বাচনে নেই তারা তো বিয়ে করেই ফেলেছেন। আমরা বিয়ে করার চেষ্টা করছি। আমাদের বিয়ে হলে আমরাও বলতাম, আমরা নির্বাচনে নেই। আমরা যারা ৮৮ জন অবিবাহিত আছি তারা এখন কি করবো আপনিই বলেন। তারপরও যেহেতু জাতীয় পার্টি করি নেতাদের সিদ্ধান্ততো মানতেই হবে। দেখি কি করা যায়।’

জাপা সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা মহানগর জাপা নেতারা নির্বাচনে অংশ নেয়া নেতাদের সর্বাত্মক অহযোগিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অনেককে বহিষ্কারের জন্য জিএম কাদের ও মহাসচিব রুহুল আমীন হাওলাদারকে চাপ দিচ্ছেন নেতা-কর্মীরা। এ উদ্দেশ্যে শুক্রবার দুপুরে জিএম কাদেরের উত্তরার বাসভবনে বৈঠকও করেছেন ঢাকা মহানগর উত্তরের বিভিন্ন থানার নেতারা। সেখানে উপস্থিত ছিলেন জাপা ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন বাবুল।

এছাড়া জাপা ঢাকা মহানগর দক্ষিণও নির্বাচনে অংশ নেওয়া নেতাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে শিগগিরই মহাসচিব ও জিএম কাদেরের কাছে যাবে বলে জানা গেছে।

ঢাকা মহানগর জাপার সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম রুবেল দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘আমাদের দলের সার্বিক দেখভালের দায়িত্বে থাকা প্রেসিডিয়াম সদস্য জিএম কাদের স্পষ্ট করে বলেছেন, যারা পার্টির চেয়ারম্যানের নির্দেশের বাইরে যাবে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমরা যে কি অবস্থায় আছি সেটা আপনাদের বুঝাতে পারবো না। তবে, এরশাদ সাহেবের নির্দেশের পরও যারা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে তাদের জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা ক্ষমা করবে না।’

এদিকে নির্বাচনপন্থী নেতারা একদিকে যেমন নিজের দলের কর্মীদের সমর্থন পাচ্ছেন না তেমনি সরকারি দলের প্রার্থীদেরও সহযোগিতা পাচ্ছেন না। কুমিল্লা-৪ আসনে জাপার প্রার্থী ইকবাল হোসেন রাজুর সমর্থনে আওয়ামী লীগ নেতা এবিএম গোলাম মোস্তফা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিলেও আওয়ামী লীগের দুজন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। তারা হলেন- রওশন মাস্টার ও উপজেলা চেয়ারম্যান রাজি ফখরুল।

এ প্রসঙ্গে জাপার প্রার্থী ইকবাল হোসেন রাজু বলেন, ‘আমার আসনে আওয়ামী লীগের যেসব নেতা দলীয় সিদ্ধন্তের বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছেন তাদের দেবিদ্বার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ জয়নাল আবেদীন ও সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মাস্টার গঠনতন্ত্রের ৪৬(ঢ) ধারা অনুযায়ী বহিষ্কার করেছেন। তাই একটু সমস্যা হলেও নির্বাচনে আছি।’

একই অবস্থা ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসনে জাপার প্রার্থী এ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভুইয়ার। তাকেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী র আ ম ওবায়দুল মুক্তাদির চৌধুরী জোর করে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে বাধ্য করান। এ বিষয়ে রেজাউল ইসলাম ভুইয়া বলেন, ‘আমি স্যারের নির্দেশে নির্বাচন থেকে সরে গেছি।’

নির্বাচনে সিলেট-৫ থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি হওয়া সিলেট জেলা জাপা সভাপতি মোঃ সেলিম উদ্দিনের সিলেটের বাসভবনেও হামলা করেছে জাতীয় পার্টির কর্মীরা। এ বিষয়ে মোঃ সেলিম উদ্দিন টেলিফোনে দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘আমি মিটিংয়ে আছি।’

জাপা সূত্রে জানা গেছে, রংপুর মহানগর জাপা সভাপতি মশিউর রহমান রাঙার মতো ঢাকা মহানগর দক্ষিণ কমিটিও এরশাদ যেকোন মুহূর্তে স্থগিত করতে পারেন। ১৫ ডিসেম্বর নির্বাচনে অংশ নেয়ায় জাপার রংপুর মহানগর সভাপতি মশিউর রহমান রাঙার কমিটি বাতিল করে নতুন কমিটি ঘোষণা করেন এরশাদ। গত সোমবার রংপুর মহানগর কমিটিতে রাঙাকে ফিরিয়ে নিতে এরশাদের কাছে রওশন অনুরোধ জানান। তবে রওশনের অনুরোধ আমলে নেননি এরশাদ।

(দ্য রিপোর্ট/সাআ/নূরুল/জেএম/ডিসেম্বর ২০, ২০১৩)