চলে গেলেন বর্ণাঢ্য রাজনীতিবিদ
দেশের খ্যাতিমান রাজনীতিবিদ সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন আর নেই। শুক্রবার সকালে রাজধানী ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে তিনি ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।
মরহুমার প্রতি শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি এমএ হামিদ, প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ দেশের সব মত-পথের রাজনৈতিক নেতারা।
এক রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন। স্বামী তাজউদ্দীন আহমদের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে জোহরা কখনো পিছনে পড়ে থাকেননি। বিজয় না হওয়া পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সংগঠক প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীনের ওয়াদার প্রতি সম্মান দেখাতে পারিবারিক জীবনযাপনে জোহরা বিরত থাকেন। প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী স্বামীকে সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে চলেন এই সময়।
স্বাধীনতাত্তোরকালে বাকশাল কায়েম হলে রাজনীতি থেকে ছিটকে পড়েন তাজউদ্দীন। ১৯৭৫-এর পট-পরিবর্তনের পর জেলখানায় নির্মমভাবে খুন হন তিনি। জিয়াউর রহমান বহুদলীয় রাজনীতি পুনঃপ্রবর্তন করলে তৎকালীন সময়ে নেতৃত্বশূন্য আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব দিতে এগিয়ে আসেন জোহরা তাজউদ্দীন। আহ্বায়াক হয়ে তিনি শুরু করেন আওয়ামী লীগের নতুন পথচলা। দলের দুঃসময়ের এই কান্ডারি একসময় নেতৃত্ব থেকে সরে যেতে বাধ্য হলেও দলের আদর্শ থেকে কখনো তাকে সরে আসতে দেখা যায়নি।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে জোহরা তাজউদ্দিনের যত ত্যাগ তার দৃশ্যমান প্রাপ্তি তত নয় সত্য, কিন্তু তার চলে যাওয়ার সময় নিশ্চয়ই মিলবে মূল্যায়ন। আমাদের বিবেচনায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ বিলুপ্ত করে সমমনা সব দল ও ব্যক্তিদের নিয়ে এক দল- বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) গঠন করা হয়। সেখানে সেনাশাসক জিয়াউর রহমান প্রবর্তিত বহুদলীয় শাসন ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তনে আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করার সিদ্ধান্ত ছিল খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। সেই কাজটিই করেছিলেন সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন। আজ আওয়ামী লীগের কয়েক দফা রাষ্ট্রক্ষমতায় আসতে পারা প্রমাণ করে জোহরা তাজউদ্দীন সেদিন কত দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছিলেন। আমরা তাঁর রুহ্-এর মাগফেরাত কামনা করি। আশা করি তার জীবনের ত্যাগ ও দূরদর্শিতা থেকে বর্তমান ও আগামীদিনের রাজনৈতিক নেতৃত্ব শিক্ষা নেবে।