‘মিথ্যা ঢাকতেই ইমনের আত্মহত্যা’
কাজী জামশেদ নাজিম, দ্য রিপোর্ট : ‘আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়, এছাড়া আমার কোনো পথ ছিল না।’ এমন একটি চিরকুট লিখে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন ইমন। আর আত্মহত্যার মাধ্যমেই তিনি তার মিথ্যাকে ঢাকার চেষ্টা করেছেন বলে পুলিশের সন্দেহ।
নিহত ইমনের চাচাতো ভাই স্বপন দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়া শেষ করে ৩১তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় ইমন। সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হিসেবে সারদা পুলিশ একাডেমীতে প্রশিক্ষণ নিচ্ছিল। প্রশিক্ষণরত অবস্থায় ৪/৫ বার ছুটিতে বাড়ি বেড়াতেও এসেছেন। প্রশিক্ষণ শেষে এএসপি হিসেবে কাজে যোগ দিয়ে দেশের সেবা করার প্রবল ইচ্ছা ছিল। প্রশিক্ষণের সময় ঘোড়া থেকে পড়ে গিয়ে পায়ে ব্যথা পান, চিকিৎসার জন্য ঢাকা আসেন ইমন।’
স্বপন বলেন, ‘প্রশিক্ষণ ও পুলিশের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়ার পুলিশি পোশাক পরা ছবি টাঙানো রয়েছে ইমনের বাড়িতে। তার বাবা-মাও জানেন, ইমন পুলিশ অফিসার হিসেবে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। কিন্তু তার আত্মহত্যার পরে পুলিশ বলছে, ইমন পুলিশে যোগদান করেননি।’
ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘ইমন পুলিশে যোগদান করেছে, এই ভুল তথ্যগুলোই এতদিন জেনেছে তার পরিবারের সদস্যরা। সে আসলে পুলিশ সদস্য না। তবে বিসিএস পরীক্ষায় ইমন পাশ করলেও ভাইভায় গিয়ে আর পাশ করতে পারেনি। যে কোনো কারণে হয়তো ইমন পুলিশে যোগ দেওয়ার বিষয়ে তার পরিবারকে মিথ্যা তথ্য জানিয়েছে। দীর্ঘদিন তিনি এই মিথ্যাকে পরিবারের কাছে বলে আসছিলেন।’
এক পর্যায়ে হতাশা থেকে হয়তো ইমন আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন বলে ধারণা প্রকাশ করেন উপ-পুলিশ কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার।
পুলিশ একাডেমী সারদার পুলিশ সুপার (এসপি ট্রেনিং) সেলিম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর দ্য রিপোর্টকে মুঠোফোনে বলেন, ‘ইমন সারদায় প্রক্ষিণকালে ঘোড়া থেকে পড়ে গিয়ে আঘাত পান, অসুস্থকালীন ছুটিতে ঢাকায় যান, এই তথ্যগুলো মিথ্যা। ইমন নামের কোনো ব্যক্তি সারদায় প্রশিক্ষণ নেয়নি। হয়ত এ মিথ্যাকে ঢাকতেই ইমন আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন।’
কুড়িগ্রাম জেলা সদরের নতুন শহর নুরুল ইসলাম বাবলুর ছেলে ইমন, বাবা স্থানীয় সোনালী ব্যংকে কর্মরত আছেন। মা স্কুল শিক্ষিকা। ছোট ভাই অয়ন স্কুল জীবন শেষ করেছ। দুই ভাইয়ের মধ্যে ইমন বড়। রংপুর ও রাজশাহী থেকে স্কুল এবং কলেজের পাঠ সম্পন্ন করেন। পরিবারের পিছুটান ছিল না বললেই চলে।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের মোহাম্মাদীয়া হাউজিংয়ের ২ নম্বর রোডের ২৫২/১০ নম্বর বাড়িতে মেসে ভাড়া থাকতেন ইমন। ওই মেসের একটি কক্ষ তিনি আরেকজনের সঙ্গে ভাগাভাগি করে থাকতেন। গত বৃহস্পতিবার রাত ১১টার পর মেসের কয়েকজন সদস্য থানায় ফোন করে ইমনের মৃত্যুর খবর জানায়। পুলিশ গিয়ে ওই কক্ষের দরজা ভেঙে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ইমনের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে।
মোহাম্মাদপুর থানার সহকারী পরিদর্শক (এসআই) নজরুল ইসলাম বলেন, ‘মৃতদেহটি উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। এ সময় তার শরিরে আঘাতের কোন চিহ্ন পাওয়া যায়নি।’
নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ধারণা করা হচ্ছে, ইমন আত্মহত্যা করেছেন।’ তাকে হত্যা করা হতে পারে এমন কোনো নমুনা পাওয়া যায়নি বলেও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
(দ্য রিপোর্ট/কেজেএন/জেএম/ডিসেম্বর ২১, ২০১৩)