কলকাতায়ও নিন্দিত পাকিস্তান-জামায়াত
কলকাতা প্রতিনিধি : বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামের সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসির পর পাকিস্তানের পার্লামেন্টে যেভাবে আইন পাস হয়েছে তার কড়া নিন্দা করলেন পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দোপাধ্যায়। তিনি বলেন, এটা বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ বিয়য় কিন্তু সেখানে পাকিস্তান যেভাবে না গলাচ্ছে তা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। বাংলাদেশ কাকে দোষী সাব্যস্ত করবে কিংবা কাকে করবে না সেটা তারাই ঠিক করবে। কিন্তু কাদের মোল্লার ফাঁসির পর তাকে শহীদ আখ্যা দিয়ে যেভাবে সেদেশের (পাকিস্তানের) পার্লামেন্টে আইন পাস করা হলো তা ঠিক কাজ হয়নি।
শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা ভবনে সৈয়দ নৌসর আলি কক্ষে ‘সোনার বাংলা-মুক্ত ভাবনা না মৌলবাদ’ শীর্ষক এক আলোচনা চক্রে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দোপাধ্যায় একথা বলেন। এদিনের এই আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির, বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম, তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ সৌগত রায়, বিধায়ক অসিত মিত্র, কলকাতায় বাংলাদেশি কমিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারি তোফাজ্জেল হোসেন, ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী সমন্বয় কমিটির সভাপতি অজয় দেসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।
বিমান বাবু আরও বলেন, প্রতিবেশি দেশ হিসেবে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের অত্যন্ত সুসম্পর্ক আছে, ভবিষ্যতেও এটা বজায় রাখতে হবে। দুই দেশের মধ্যে যদি এই মৈত্রী না থাকে তাহলে কোনো উন্নয়ন সম্ভব নয়। সেই মৈত্রীতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে মৌলবাদ শক্তি। এখনই এই মৌলবাদকে ধ্বংস করতে না পারলে সেদেশের উন্নতির অগ্রগতি থমকে যাবে বলে মনে করেন বিমান বন্দোপাধ্যায়।
সেই সাথে মৌলবাদকে গণতন্ত্রের পক্ষে বিপজ্জনক বলে উল্লেখ করে বিমান বাবু বলেন, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠা করতে গেলে সবার আগে মৌলবাদকে শেষ করতে হবে। এ কাজে সমাজের শিক্ষিত সমাজ, বুদ্ধিজীবীদেরএগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ সৌগত রায় বলেন, ভাষা সংস্কৃতি এক হওয়ার কারণে বাংলাদেশকে কখনোই আলাদা রাষ্ট্র বলে মনে হয় না। শেখ হাসিনাকে কখনো অন্য দেশের রাষ্ট্রপ্রধান বলে মনে হয় না। কারণ তার সঙ্গে এত আবেগ জড়িয়ে আছে, তাকে বঙ্গবন্ধুর কন্যা হিসেবেই দেখে আসছি। তিনি বলেন, অন্য দেশের আভ্যন্তরীণ ব্যাপারে আমাদের কখনোই নাক গলানো ঠিক হবে না। সে দেশের জনগণ কাকে নির্বাচিত করবেন, কাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেছে নেবেন তা তারাই ঠিক করবেন। এ বিষয়ে ভারত নাক গলাবে না। তবে এটুকু বলা যায়, আমরা চাই সে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হোক।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের অবদানের কথা উল্লেখ করে বিশিষ্ট কবি শাহরিয়ার কবির বলেন, মৌলবাদের বাড়বাড়ন্তে সেই স্বাধীন বাংলাদেশ আজ অস্থির হয়ে উঠেছে। সন্ত্রাসের আগুন জ্বলছে। চারিদিকে হানাহানি, দেশের সম্পত্তি নষ্ট করছে, জ্যান্ত মানুষ পুড়িয়ে মারছে, বাস, ট্রেনে আগুল লাগানো হচ্ছে, ট্রেনলাইন উপড়ে ফেলা হচ্ছে। এমনকি পরিকল্পিতভাবে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর হামলা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন শাহরিয়ার কবীর। আর এই কাজে বিএনপি’র সঙ্গে হাত মিলিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। অবিলম্বে এই সহিংসতা বন্ধ করতে হবে। তার অভিযোগ ৭১-এর পরাজয়ের প্রতিশোধ নেয়ার জন্য, যুদ্ধাপরাধদের বিচার প্রক্রিয়া বানচাল করার জন্য, বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন বানচাল করতে পরিকল্পিতভাবে এই কাজ করছে। তারা বাংলাদেশকে মুসলিম রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায় বলে জানান বিশিষ্ট এই কবি-সাহিত্যিক। বিশ্বজুড়ে মৌলবাদকে প্রশ্রয় দেয়ার জন্য আমেরিকাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে শাহরিয়ার কবীর বলেন, আসলে বাংলাদেশের জঙ্গিবাদ চাষ হলে তা আমেরিকার পক্ষে সুখকর হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম বলেন, মৌলবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মধ্যে দিয়েই বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়। কিন্তু আজ দেশজুড়ে ফের সেই মৌলবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। তার অভিযোগ রাজনৈতিক শক্তির আশ্রয়-প্রশ্রয়ে বাংলাদেশে মৌলবাদ রাজনীতির বিকাশ শুরু হয়েছিল ১৯৭২ সাল থেকে। এই মৌলবাদ শক্তিকে ধ্বংস করতে না পারলে বাংলাদেশের অর্থনীতি, রাজনীতি ক্ষতির সম্মুখীন হবে। তিনি বলেন, ব্যাংক, বীমা, শিক্ষা, হাসপাতাল সব কিছুতেই জামায়াতে ইসলামীর মতো মৌলবাদী দলগুলি তাদের শক্তি বৃদ্ধি করছে। মৌলবাদকে ধ্বংস করতে তাদের আর্থিকভাবে পঙ্গু করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।
নঈম নিজাম বলেন, ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে বর্তমানে সুসম্পর্ক বজায় আছে। তার আশা ভবিষ্যতেও সেই সুসম্পর্ক বজায় থাকবে। যদিও ভারত-বাংলাদেশের বকেয়া সমস্যা সমাধান করা উচিত বলে মনে করেন তিনি। একাজে ভারত সরকার ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে একত্রে উদ্যোগী হওয়া উচিত বলেও মনে করেন তিনি। নঈম নিজাম বলেন, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে শেখ হাসিনা সরকারকে সাহায্য করা উচিত। বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এলে তা গণতন্ত্রের পক্ষে ক্ষতিকর। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত যেভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল এবারও গণতন্ত্রের স্বার্থে নতুন করে ভারতের উচিত সেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়া। কারণ বাংলাদেশে অস্থিরতা তৈরি হলে তার আঁচ ভারতে পড়তে বাধ্য।
(দ্য রিপোর্ট/এসএম/জেএম/লতিফ/ডিসেম্বর ২১, ২০১৩)