দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে শুক্রবার এক মাস পূর্ণ করেছে নির্বাচনকালীন সরকার। এ সরকারে বিএনপিকে যুক্ত করার চেষ্টা করা হলেও তা সফল হয়নি। বরং এ সরকারের বড় একটি অংশজুড়ে থাকা জাতীয় পার্টি নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে টানাপোড়েন। এ টানাপোড়েনে জাতীয় পার্টির নির্বাচনকালীন সরর্কারে থাকা না থাকা, নির্বাচনে অংশ নেয়া না নেয়ার বিষয়টি এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে। একই সঙ্গে এ মন্ত্রিসভার সদস্যরা নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে বেশি ব্যস্ত থাকায় এ এক মাসে বেশিরভাগ মন্ত্রণালয়ে নেমেছে স্থবিরতা।

গত ২১ নভেম্বর ২৯ সদস্য বিশিষ্ট (প্রধানমন্ত্রীসহ) নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়। এরমধ্যে ২১ জন মন্ত্রী, ৭ জন প্রতিমন্ত্রী। মন্ত্রীদের মধ্যে নতুন ৬ জন ও পুরনো ১৬ জন। প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে নতুন দুই জন, মহাজোট সরকারের ৫ জন রয়েছেন। পুনর্গঠিত এ মন্ত্রিসভায় মহাজোট সরকারের ১৬ জন মন্ত্রী ও ১৪ জন প্রতিমন্ত্রী বাদ পড়েন।

নির্বাচনকালীন সরকারে আওয়ামী লীগ ছাড়াও জাতীয় পার্টি, জাসদ ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সংসদ সদস্যরা রয়েছেন।

২৪ নভেম্বর পুনর্গঠিত মন্ত্রিসভার সদস্যরা অফিস শুরু করেন। সর্বদলীয় মন্ত্রিসভার দুটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রথম বৈঠক ২৫ নভেম্বর ও ৯ ডিসেম্বর দ্বিতীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

গত ৩ ডিসেম্বর জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দেন। সব দল নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলেও জানান তিনি। ৪ ডিসেম্বর নির্বাচনকালীন সরকারে থাকা দলের ছয় মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও একজন উপদেষ্টাকে অবিলম্বে পদত্যাগের নির্দেশ দেন এরশাদ। একইসঙ্গে ২৪৮টি সংসদীয় আসনে মনোনয়নপত্র দাখিলকারী দলীয় প্রার্থীদের দ্রুত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারেরও নির্দেশ দেন জাপা চেয়ারম্যান।

৮ ডিসেম্বর জাতীয় পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমীন হাওলাদার জানান, নির্বাচনকালীন সরকারে জাপার ছয়জন মন্ত্রী ও একজন উপদেষ্টার পদত্যাগপত্র প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে ডাকের মাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। এরপর জাতীয় পার্টির নেতারা মন্ত্রিসভা বৈঠকে যোগ দেননি, সেই থেকে অফিসও করছেন না তারা। তাদের পদত্যাগপত্রের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

নির্বাচনীকালীন সর্বদলীয় মন্ত্রিসভায় জাতীয় পার্টির চারজন মন্ত্রী, দুইজন প্রতিমন্ত্রী ও একজন উপদেষ্টা রয়েছেন। এরা হচ্ছেন বাণিজ্যমন্ত্রী জিএম কাদের, এবিএম রুহুল আমীন হাওলাদার বেসমারিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী, পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী রওশন এরশাদ। এছাড়া মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সালমা ইসলাম, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু রয়েছেন। উপদেষ্টা হিসেবে আছেন জিয়াউদ্দীন আহমেদ বাবলু।

নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের আগেই সচিবালয় অনেকটা প্রাণ চাঞ্চল্যহীন হয়ে পড়েছিল। জাতীয় পার্টির সদস্যদের এ ঘটনার পর সংশ্লিষ্ট ছয়টি মন্ত্রণালয় একেবারেই স্থবির হয়ে পড়ে।

অপরদিকে নির্বাচনকালীন সরকারের নীতি-নির্ধারণী সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা না থাকায় নিয়োগ, বদলি, কেনাকাটাসহ বিভিন্ন নীতি-নির্ধারণী সিদ্ধান্তের ফাইল চলছে না। সচিবরাও এ মুহূর্তে চুপসে আছেন, আগ বাড়িয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন না। তাই বেশিরভাগ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এক মাস ধরে অনেকটা অলস সময় কাটাচ্ছেন।

নির্বাচনকালীন সরকারের এক মাসের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী পুরনো উপদেষ্টার মধ্যে পাঁচজন পদত্যাগ করেন। এরমধ্যে ছিলেন- জনপ্রশাসন বিষয়ক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান, জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, শিক্ষা বিষয়ক উপদেষ্টা আলাউদ্দিন আহমেদ ও স্বাস্থ্য বিষয়ক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী। এরপরই প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টার সংখ্যা ১১ থেকে কমে ছয় জন হলো। নতুন কয়েকজন নিয়োগ দেয়ায় উপদেষ্টা সংখ্যা ১১ জনে দাঁড়ালে বিভিন্ন মহলের সমালোচনার মুখে পড়ে সরকার।

নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮দলীয় জোট নির্বাচনী তফশিল বাতিল, নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলন করে যাচ্ছে।

(দ্য রিপোর্ট/আরএমএম/জেএম/লতিফ/ডিসেম্বর ২১,২০১৩)