দিরিপোর্ট২৪ প্রতিবেদক : থাইল্যান্ডে ইংলাক সিনাওয়াত্রা সরকার ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পরই অঙ্গীকার করেছিল, সেদেশের ৯০ লাখ স্কুলপড়ুয়া শিশুর প্রত্যেকের হাতে একটি করে ট্যাবলেট কম্পিউটার তুলে দেবে।
সেই প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ এখন চলছে।

থাইল্যান্ডের বড় শহরগুলো থেকে বহু বহু দূরে মিয়ানমার সীমান্তসংলগ্ন পাহাড়ি এলাকায় প্রত্যন্ত গ্রামেও ছাত্রছাত্রীরা হাতে পাচ্ছে ট্যাবলেট। যে সব শিশুরা আধুনিক জীবনের খুব বেশি কিছু দেখেনি, তার হাতেও পৌঁছে যাচ্ছে একবিংশ শতাব্দীর সর্বাধুনিক প্রযুক্তির নিদর্শন।
থাই সরকারের 'এক শিশু এক ট্যাবলেট' নীতির উদ্দেশ্য হলো স্কুলের বাচ্চাদের ব্ল্যাকবোর্ড থেকে টাচস্ত্রিনের জগতের পথে এগিয়ে দেয়া।
স্কুলছাত্রদের জন্য হাতে ট্যাবলেট পাওয়াটা নিশ্চয়ই একটা বিরাট আনন্দ এবং উত্তেজনার বিষয়। কিন্তু অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, এতে কি সেদেশের শিক্ষার মানের প্রকৃত কোনো উন্নতি হচ্ছে?
সরকার অবশ্য বলছে, এটা দেশের ভবিষ্যতের জন্য বিনিয়োগ।
থাইল্যান্ডের অফিস অব দি বেসিক এডুকেশন কমিশনের বেনজালুক নামফা বলছেন, "সরকার যখন এই নীতি ঘোষণা করে তখন অভিভাবকরা আমাদের বলেছিলেন – আপনারা এসব কি করছেন? কারণ তাদের ভয়, বাচ্চারা সবসময়ই গেম খেলা নিয়ে মেতে থাকবে। আমরা বললাম, এর শিক্ষাদানের যন্ত্র - শুধু খেলা নয়। আর স্কুলের কাজ এই যন্ত্রটি কিভাবে কাজে লাগানো যায় তা শেখানো।"
সমস্যা হলো, থাইল্যান্ডে শিক্ষার জন্য অন্য দেশের চাইতে বেশি অর্থ খরচ করা হলেও শিক্ষার মানের দিক থেকে দেশটি প্রতিবেশীদের চাইতে পিছিয়ে আছে।
সেটা বোঝা যায় ব্যাংককের টিউটোরিয়াল স্কুলগুলোয় ছাত্রদের ভিড় দেখলে। শনিবারের সকালেও দেখা যাবে এগুলোতে শত শত ছেলেমেয়ের সমাগম, কারণ স্কুলের শিক্ষা নিয়ে অভিভাবকরা সন্তুষ্ট নন।
সংকোয়াস সেকোর মেয়েও পড়ে একটি টিউটরিয়ালে। তিনি বলছেন, "আমি আমার মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন। এই অতিরিক্ত ক্লাসের খরচ না যোগালে শুধু স্কুলের পড়াশোনা দিয়ে ও কিছু করতে পারবে না।"
সুতরাং সরকারের কি ট্যাবলেট স্কিমের মতো চটকদারি প্রকল্পের চাইতে বরং থাইল্যান্ডের শিক্ষা ব্যবস্থার যেসব গভীরতর সমস্যা – যেমন, দুর্নীতি আর স্বল্প-প্রশিক্ষিত শিক্ষক – সেগুলো নিয়ে ভাবা উচিত নয়?
কোয়ালিটি লার্নিং ফাউন্ডেশনের আমরনউইচ নাকোর্নথাপ বলছেন, "শিক্ষকদের মান উন্নত করাটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তবে ট্যাবলেট একটা ফ্যাশনেবল জিনিস, এবং অনেকেই এটাকে একটা চমক বলে মনে করে। কিন্তু আমি মনে করি বুদ্ধি-বিবেচনার সাথে এটা ব্যবহার করতে পারলে কোন সমস্যা নেই।"
স্কুলে স্কুলে ট্যাবলেট দেবার এই প্রকল্পকে কার্যকর করার জন্য সরকার অনেক চেষ্টা করছে। তবে এতে কোন সন্দেহ নেই এসব প্রকল্প দিয়ে ভোটারদের সহজেই খুশি করা যায়। কারণ সরকার কি করছে তা লোকে চোখে দেখতে পাচ্ছে। কিন্তু দেশটির শিক্ষাব্যবস্থার গভীরতর সংস্কারের ক্ষেত্রে তা বলা চলে না।

(দিরিপোর্ট২৪/এইচএস অক্টোবর ০৫, ২০১৩)