খালেদ খান স্মরণে
বুঝি আমার ব্যথার আড়ালেতে দাঁড়িয়ে থাকো
মুহম্মদ আকবর, দ্য রিপোর্ট : খ্যাতিমান নাট্যাভিনেতা ও নির্দেশক খালেদ খান চলে গেলেন না ফেরার দেশে। শুক্রবার রাত ৮টা ১৮ মিনিটে বারডেম হাসপাতালের আইসিইউতে তার লাইফ সাপোর্ট খুলে নেওয়া হয়। খালেদ খানের মৃত্যুতে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। মঞ্চ ছিল তার ভালোবাসার জায়গা। মঞ্চে তার সুহৃদ, স্বজন, সতীর্থরা জানিয়েছেন শোক।
রামেন্দু মজুমদার : খালেদ খান খুব অল্প সময় অভিনয় করার সময় পেয়েছে। কিন্তু এ সংক্ষিপ্ত সময়ে অভিনয় করে সবাইকে মুগ্ধ রেখেছে সে। আমি মনে করি এ সময়ে তারমতো বাচিক অভিনেতা খুব কম আছে। তার চমৎকার সঙ্গীত প্রতিভা ছিল। অভিনয়ের পাশাপাশি গান পরিবেশন করে সবাইকে মুগ্ধ করে রাখত। শারীরিক অক্ষমতার জন্য দীর্ঘদিন হুইল চেয়ারে বসেও থেমে থাকেনি খালেদ, নির্দেশনা দিয়ে গেছে। এরকম একজন গুণী অভিনেতা ও নির্দেশককে হারিয়ে আমরা গভীর শোকাহত।
আতাউর রহমান : খালেদ মঞ্চ নাটকে সবচেয়ে বেশি কাজ আমার সঙ্গেই করেছে। বয়সে আমার ছোট হলেও সে ছিল আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু। খালেদবিহীন পৃথিবীতে আমি যতদিন বাঁচব ততদিন স্বজন হারানোর ব্যথা আমাকে তাড়িত করবে। ওই যে রক্তকরবীতে সে গাইতো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানটি ‘বুঝি আমার ব্যথার আড়ালে দাঁড়িয়ে থাকো...’। যতদিন তার কথা মনে পড়বে এ গানটিও ততদিন মনে থাকবে। কী অপূর্ব করে সে গাইতো! বলিষ্ঠ কণ্ঠ, শুদ্ধ উচ্চারণ, পরিমিতিবোধ, অপূর্ব ভঙ্গিমায় সংলাপ প্রক্ষেপণ সব মিলিয়ে দর্শক শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছে খালেদ। তার মৃত্যু এ অঙ্গনের অপূরণীয় ক্ষতি।
ঝুনা চৌধুরী : মঞ্চ, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রে দাপিয়ে বেড়ানোর অভিনয় প্রতিভা আমি খুব কম মানুষের মধ্যে দেখেছি। অভিনয়ের সব শাখাতেই সব দিক দিয়ে সে পারদর্শী ছিল। সমকালে তার দ্বিতীয়টি মিলবে না।
গোলাম কুদ্দুছ : স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে যে কয়জন তরুণ তাদের নিজস্ব যোগ্যতায় বাংলাদেশের মঞ্চ ও টিভি নাটককে এগিয়ে নেওয়ার জন্য কাজ করেছেন খালেদ খান তাদের অন্যতম। অভিনয়, নির্দেশনা, আবৃত্তি, সাংস্কৃতিক আন্দোলন সবক্ষেত্রেই ছিল তার সরব উপস্থিতি।
আহমেদ গিয়াস : ১৯৯৬ সাল থেকে যুব দার সঙ্গে আমার পথচলা। কখনো নির্দেশক হিসেবে, কখনো বন্ধু আবার কখনো শিক্ষক। আমার সুখ-দুঃখ আমি তার সঙ্গে সব শেয়ার করতাম। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ক্ষুধিত পাষাণ’ এবং নাসরিন জাহানের ‘রূপবতী’ নাটক দুটি সুবচনের হয়ে যুব দা নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি নিজে যেমন প্রশংসিত হয়েছেন সেই সঙ্গে সুবচন নাট্য সংসদকেও মর্যাদার আসনে বসিয়েছেন। সর্বশেষ ‘ওয়েটিং ফর গডো’ নাটকের নির্দেশনায় হাত দিয়েছিলেন কিন্ত আর হলো কই...? আজ সুবচন আছে অথচ যুব দা নেই এটা মানা যায়?
(দ্য রিপোর্ট/এমএ/শাহ/এমডি/ডিসেম্বর ২১, ২০১৩)