ইসলাম ধর্মে সত্যবাদিতা
দিরিপোর্ট২৪ ডেস্ক : সত্যবাদিতা ঈমানের পূর্ণতাদানকারী গুণ। সত্যবাদিতা নির্ভেজাল ও নির্মল ঈমানের জন্ম দেয়। সত্যবাদী ব্যক্তিরাই প্রকৃত অর্থে দুনিয়া-আখিরাতে সফলকাম হয়ে থাকে। সত্যবাদী-সত্যাশ্রয়ী ব্যক্তিরাই আল্লাহর ওপর যথোপযুক্ত তাওয়াক্কুল ও ভরসা রাখে। কল্যাণকর কাজে পরস্পর প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয় এবং অকল্যাণকর কাজে হয় প্রতিবাদী। এসব কারণেই আল্লাহ মুমিনদেরকে তাকওয়া, আল্লাহ-ভীত ও সত্যবাদী লোকদের সঙ্গ অবলম্বন করার জোর নির্দেশ দিয়েছেন। তাই ইসলামে সত্য-মিথ্যার পার্থক্য ও সত্য সাক্ষ্য দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
পবিত্র কোরানে বলা হয়েছে- ‘তোমরা সত্যকে মিথ্যার সহিত মিশ্রিত করিও না এবং জানিয়া শুনিয়া সত্য গোপন করিও না।’ (সুরা বাকারা : ৪২)
‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সঙ্গে থাক।’ (সূরা আত-তাওবা : ১১৯)
সত্যবাদীদের বলা হয় সাদেকীন। এর অর্থ যারা বোধ ও বিশ্বাসে সত্যবাদী, কাজে সত্যবাদী এবং লেনদেন, বেচাকেনাসহ সকল ক্ষেত্রে সত্যাশ্রয়ী।
‘ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েই (ক্রয়-বিক্রয় প্রক্রিয়া নাকচ করার) ইখতিয়ার রাখে যতক্ষণ না তারা পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তারা যদি সত্য বলে এবং ক্রটি-বিচ্যুতি বলে দেয়, তাহলে উভয়ের ক্রয়-বিক্রয়ে বরকত দেওয়া হয়। আর যদি তারা মিথ্যা বলে এবং পণ্যের দোষ লুকিয়ে রাখে তাহলে তাদের বেচাকেনার বরকত ধ্বংস করে দেয়া হয়।’ (মুসলিম)
সত্যবাদী ব্যক্তিদের জন্য আল্লাহতায়ালা জান্নাতের ওয়াদা দিয়েছেন।
‘আজকের দিনে সত্যবাদীদের সত্যবাদিতা তাদের উপকার করবে। তাদের জন্য জান্নাতে রয়েছে; যার তলদেশে প্রবাহিত হবে নদী। তারা তাতেই থাকবে চিরকাল।’ (সূরা আল মায়েদা : ১১৯)
‘এবং মুমিনদেরকে সুসংবাদ প্রদান কর যে, তাদের রবের নিকট তাদের জন্য রয়েছে উচ্চ মর্যাদা।’ (সূরা ইউনুস : ২)
সত্যবাদিতা এমন মহৎ গুণ যে আল্লাহ নিজেই এ গুণে গুণান্বিত বলে উল্লেখ করেছেন। সত্যবাদিতা আল্লাহর গুণ। আর মুমিন মাত্রই আল্লাহর গুণে গুণান্বিত হতে চান। ইরশাদ হয়েছে ‘আর কথায় আল্লাহর চেয়ে অধিক সত্যবাদী কে’? (সূরা নিসা : ৮৭)।
সত্যবাদিতা শুধু কথায় নয়, কর্ম ও সার্বিক অবস্থায় প্রযোজ্য। কথার ক্ষেত্রে সত্যবাদিতার অর্থ সকল প্রকার মিথ্যা থেকে নিজের জবানকে হেফাজত করা। কর্মে সত্যবাদিতা হলো ব্যক্তির অন্তর ও বহির একরকম হওয়া। ভেতরে একরকম বাইরে অন্যরকম এরূপ না হওয়া। যাতে ব্যক্তির কথা ও কাজে মিল থাকে। সার্বিক অবস্থার ক্ষেত্রে সত্যবাদিতা হলো সর্বোচ্চ পর্যায়ের সত্যবাদিতা। যেমন ইখলাস ও ভয়, তাওবা ও আশা, যুহদ, আল্লাহ ও তার রাসূল (স.) এর মহব্বত, আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল ইত্যাদির ক্ষেত্রে সত্যবাদিতা।
এসব কারণে ‘আ‘মালুল কুলূব’ বা অন্তরাশ্রিত সকল আমলের মূল হলো সত্যবাদিতা। মুমিন যখন এসব অবস্থায় সত্যবাদী হন তখন তিনি উঁচু পর্যায়ে চলে যায়। আল্লাহর কাছে তার মর্যাদা বেড়ে যায়। আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে : ‘ভালো কাজ এটা নয় যে, তোমরা তোমাদের চেহারা পূর্ব ও পশ্চিম দিকে ফিরাবে; বরং ভালো কাজহলো যে ঈমান আনে আল্লাহ, শেষ দিবস, ফেরেশতাগণ, কিতাব ও নবীগণের প্রতি এবং যে সম্পদ প্রদান করে তার প্রতি আসক্তি সত্ত্বেও নিকটাত্মীয়গণকে, ইয়াতীম, অসহায়, মুসাফির ও প্রার্থনাকারীকে এবং বন্দিমুক্তিতে এবং যে সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং যারা অঙ্গীকার করে তা পূর্ণ করে, যারা ধৈর্যধারণ করে কষ্ট ও দুর্দশায় ও যুদ্ধের সময়ে। তারাই সত্যবাদী এবং তারাই মুত্তাকী’ (সূরা আল বাকারা:১৭৭)।
ইসলাম সত্যবাদিতা ও সত্যবাদীদের সম্মান করে, মর্যাদা দেয়। আর যারা মিথ্যাবাদী তাদেরকে ঘৃণা করে, তাদের বিরুদ্ধে কঠিন অবস্থান নেয়। মিথ্যা ভয়ংকর খিয়ানতের আলামত; নিফাক ও কপটতার আলামত। হাদীসে এসেছে: ‘মুনাফিকের আলামত তিনটি- সে কথা বললে মিথ্যা বলে, ওয়াদা করলে ভঙ্গ করে, তার কাছে কিছু আমানত রাখা হলে খিয়ানত করে।’ (বুখারী)
সত্যবাদিতায় মানুষের সংকট নিরসন হয়। আসহাবে কাফাবকে উল্লেখ করে হাদীসে এসেছে: ‘তোমাদেরকে মুক্তি দেবে না তবে তোমাদের সততা। তাই তোমাদেরমধ্যে প্রত্যেক ব্যক্তি সে যে বিষয়ে সত্যবাদী ছিল বলে জানে তা উল্লেখ করে যেন দোয়া করে।’ (বুখারী)।
সত্যবাদিতা অন্তরে শুদ্ধতা আনে। সত্যবাদিতা আস্থা ও প্রশান্তির কারণ। রাসূল (স.) বলেছেন : ‘নিশ্চয় সত্যবাদিতাহলো আস্থার কারণ, আর মিথ্যাবাদিতা হলো সংশয় সন্দেহের কারণ।’ (তিরমিযী)
(দিরিপোর্ট২৪/ডব্লিউএস/জেএম/অক্টোবর ২৬, ২০১৩)