গণজাগরণ মঞ্চে হামলাকারী পুলিশের শাস্তি দাবি
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীদের ওপর পুলিশি হামলায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে আক্রমণকারী ওই পুলিশ সদস্যদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছে ৯টি সামাজিক সংগঠন।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনী মিলনায়তনে শনিবার অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে এ দাবি জানানো হয়।
সেই সঙ্গে নির্বাচনের আগে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের ফলে তাদের দেশত্যাগ ও নারী নিরাপত্তার বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে উদ্বেগ প্রকাশ করে সংগঠনগুলো।
সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে এডাব, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন, কাপেং ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্ক, নারী মৈত্রী, ভার্ড, জনউদ্যোগ, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ (বিএনপিএস), ইনস্টিটিউট ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইইডি)। নারী, আদিবাসী, দরিদ্র ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুসহ সব নাগরিকের জন্য ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড : সমমর্যাদা সম্পন্ন জীবনযাপন, নির্বিঘ্নে মতামত প্রকাশ এবং ভীতি ও সন্ত্রাসমুক্ত পরিবেশ’ শীর্ষক এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
একই দাবিতে সোমবার সকাল ১১টায় জাতীয় জাদুঘরের সামনে মানববন্ধন ও আগামী ২৭ তারিখ সকাল ১০টায় সিরডাপ মিলনায়তনে সেমিনারের ঘোষণা দেয় সংগঠনগুলো।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, স্পর্শকাতর এলাকার অজুহাতে যে সব পুলিশ স্বাধীনতার পক্ষের ছাত্র-জনতার ওপর লাঠিচার্জ ও গ্রেফতার করেছে আমরা মনে করি তারা পাকিস্তানের স্বার্থেরই রক্ষক। আক্রমণকারী এ পুলিশ সদস্যদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন দাবি করে বক্তারা বলেন, সংখ্যালঘুদের বিতাড়িত করা হচ্ছে। নির্যাতনের কারণে কোনো কোনো এলাকায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজন আত্মরক্ষার্থে দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। ইমিগ্রেশন, ভিসা অফিস, কলকাতার হোটেলগুলোর রিপোর্ট থেকে দেখা গেছে, স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে ১০-১২ হাজার নিয়মিত বাংলাদেশের বাইরে চলে যাচ্ছে।
বক্তারা বলেন, জনগণের ওপর অবরোধ চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে সন্ত্রাসের মাধ্যমে। এ সহিংস কর্মকাণ্ডে দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অবরোধের নামে যে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি চলছে ও জনগণের যে সম্পদহানি ঘটচ্ছে তা বিচারের আওতায় আনা উচিত।
বক্তারা আরও বলেন, নির্বাচন নিয়ে দেশে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির পেছনের উদ্দেশ্য হচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানো। যার প্রণোদনা আসছে বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী দেশি-বিদেশি শক্তি ও তাদের মদদপুষ্টদের কাছে থেকে।
বক্তারা দাবি করেন, যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হওয়ার পর দেশে যে বর্বরতা চালানো হয়েছে তা ১৯৭১ এর পাকিস্তান বাহিনীর বর্বরতাকেই স্মরণ করিয়ে দেয়। কিন্তু সাম্প্রতিক এ বর্বরতা রুখতে দেশের পুলিশ প্রশাসন ব্যর্থ হয়েছে।
কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকরের পর পাকিস্তানসহ বিভিন্ন সংস্থা ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যে আপত্তি জানিয়েছে তার নিন্দা জানিয়ে সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়, আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোর উদ্দেশ্যে আমরা এখানে বলে রাখতে চাই যে, একটি স্বাধীন দেশের স্বাধীন বিচার ব্যবস্থায় স্বচ্ছ একটি বিচার নিয়ে আপনারা যদি আপত্তিকর অবস্থান নেন, তাহলে আপনাদের এ আচরণের গ্রহণযোগ্যতা নিয়েই বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠবে।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক ও এডাবের চেয়ারম্যান রোকেয়া কবির বলেন, ‘পুলিশ যে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারকে বলল, এই নাস্তিকটাকে ধর। এ ধরনের মানসিকতার মানুষ বাংলাদেশের জনগণের ট্যাক্সের টাকায় প্রশাসনে থাকতে পারে না। কারণ আমি নাস্তিক হই, আস্তিক হই, নারী হই, আদিবাসী হই, আমি বাংলাদেশের নাগরিক।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- চৈতালী ত্রিপুরা, অভিনেত্রী আফরোজা বানু, ডা. রশীদ-ই মাহবুব, খন্দকার আরিফুল ইসলাম, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী প্রমুখ।
(দ্য রিপোর্ট/এএইচএস/শাহ/এনডিএস/নূরুল/ডিসেম্বর ২১,২০১৩)