রানা হানিফ, দ্য রিপোর্ট : শুক্রবার থেকে দেশের সকল রুটে দূরপাল্লা পরিবহন সচল রাখতে সরকারের নিরাপত্তা দেওয়ার আশ্বাসের পরও ঢাকা থেকে ছেড়ে যায়নি অধিকাংশ গণপরিবহন।

শনিবার প্রধান বিরোধী জোটের ডাকা পঞ্চম দফা অবরোধের প্রথম দিন রাজধানীর গাবতলী, সায়েদাবাদ ও মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যায়নি অধিকাংশ দূরপাল্লার গণপরিবহন।

বুধবার নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের এক জরুরি সভায় মন্ত্রী শাজাহান খান গণমাধ্যমকে জানান, অবরোধ থাকলেও শুক্রবার থেকে দেশের সকল রুটে দূরপাল্লার গণপরিবহন সচল রাখা হবে। আর এ ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে সকল নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।

সরকারের এমন আশ্বাসের পরও শনিবার অবরোধের প্রথম দিন ঢাকা থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। তবে সকালে মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে সরকার সমর্থিত সংসদ সদস্য এনামুল হকের মালিকানাধীন এনা পরিবহনের একটি বাস ছেড়ে যায়। তবে এ পর্যন্ত এই টার্মিনাল থেকে অন্য কোনো কোম্পানির বাস ছেড়ে যাওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।

দেশের বিভিন্ন দূরপাল্লার বাস কোম্পানির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অবরোধ চলা অবস্থায় তাদের কোনো বাস চলাচল করছে না। নিরাপত্তার ব্যাপারে সরকার ‘আশ্বস্ত’ করলেও তাতে ‘ভরসা’ নেই এসব কোম্পানির। শুধু সরকারের প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে ঘোষিত এমন আশ্বাসের ব্যাপারে সরকারের কোনো উদ্যোগও দেখছেন না বলে জানা যায় এসব কোম্পানি থেকে।

ঢাকা থেকে শনিবার যেসব কোম্পানির বাস ছেড়ে যায়নি সেগুলোর মধ্যে রয়েছে হানিফ এন্টারপ্রাইজ, সোহাগ পরিবহন, ঈগল পরিবহন, একে ট্রাভেলস, শ্যামলী পরিবহন, গ্রীন লাইন, এশিয়া এক্সক্লুসিভের মতো বৃহৎ পরিবহন কোম্পানিসহ অন্যান্য দূরপাল্লার পরিবহন।

শুধু অবরোধে নিরাপত্তা কথা বিবেচনায় রেখে তারা বাস চলাচল বন্ধ রেখেছে।

এ ব্যাপারে হানিফ পরিবহনের কলাবাগান কাউন্টারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে কাউন্টার ম্যানেজার নিপু দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘শুধু শনিবারই নয় শুক্রবার রাত থেকে হানিফ পরিবহনের কোনো বাস ঢাকা থেকে ছেড়ে যায়নি এবং অন্যান্য জেলা থেকে ঢাকায় ফিরে আসেনি।’

নিরাপত্তার ব্যাপারে সরকারের আশ্বাস থাকার পরও কোনো বাস চলাচল করছে না এমন প্রশ্নের উত্তরে নিপু বলেন, ‘এটা মালিকের ব্যাপার। সরকারের সঙ্গে কথা হলে মালিকের হয়েছে। মালিক বাস বন্ধ রাখতে বলেছেন তাই আমরা বন্ধ রেখেছি।’

একই বিষয়ে শ্যামলী পরিবহনের হেড অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কোম্পানিটির কর্মকর্তা আনন্দ লাল দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘শুক্রবার রাত থেকেই সারাদেশে আমাদের কোম্পানির বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। অবরোধ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সার্ভিস বন্ধ থাকবে।’

সরকারের নির্দেশনা প্রসঙ্গে আনন্দ বলেন, ‘অনেকেই অনেক কথা বলেন। বাস্তবতা ভিন্ন। সরকার নিরাপত্তা দিবে এটা বলেই খালাস। বললেই কি নিরাপত্তা পাওয়া যায়। রিস্ক নিয়ে আমরা রাস্তায় বাস নামাতে চাই না।’

এদিকে অবরোধের শেষ দিন পর্যন্ত সকল সিডিউল বন্ধ রেখেছে গ্রীন লাইন বাস কোম্পানি। গ্রীন লাইনের মালিবাগ হেড অফিসের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ‘অবরোধ শেষ হওয়ার পর মঙ্গলবার রাত থেকে গ্রীন লাইনের সকল বাস ঢাকা থেকে ছাড়া হবে। এর আগে সকল সিডিউল স্থগিত করা হয়েছে।’

সায়েদাবাদ বাস টার্মিলান থেকে চলাচলকারী ঢাকা-রামগঞ্জ রুটের এশিয়া এক্সক্লুসিভ পরিবহনটিও অবরোধে বন্ধ রাখা হয়েছে, বন্ধ রয়েছে ঢাকা-লক্ষ্মীপুর-নোয়াখালী-রায়পুর রুটের ঢাকা এক্সপ্রেস দূরপাল্লার বাস কোম্পানিটির সকল বাস।

এশিয়া এক্সক্লুসিভের ম্যানেজার মনিরুজ্জামান ভূইয়া ভুট্টু দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘প্রতিটি অবরোধের মতো আজ থেকে শুরু হওয়া অবরোধে আমাদের কোম্পানির সকল বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। অবরোধ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমরা কোনো বাস ছাড়ছি না।’

সরকারের আশ্বাসের পরও অধিকাংশ দূরপাল্লা বাস চলাচল সচল না হওয়ার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নৌপরিবহন ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী শাজাহান খান দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী আজ বেশ কয়েকটি কোম্পানি তাদের বাস চলাচল শুরু করেছে। ঢাকার সঙ্গে উত্তর ও দক্ষিণ বঙ্গে অধিকাংশ জেলায় আজ দূরপাল্লার বাস চলাচল শুরু হয়েছে। ধীরে ধীরে সব কোম্পানির বাসেই ছাড়তে শুরু করবে। এ ব্যাপারে সরকার সকল নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে।’

(দ্য রিপোর্ট/এইচআর/এসবি/রাসেলে/ডিসেম্বর ২১, ২০১৩)