চাটমোহরে সার না পেয়ে ডিলারের দোকান ঘেরাও
পাবনা সংবাদদাতা : পাবনার চাটমোহরে সরকার অনুমোদিত ডিলারের দোকানে সারের দাম বেশি নেওয়ায় এবং অনেকে সার না পেয়ে ডিলারের দোকান ঘেরাও করেছে কৃষকরা। শনিবার বেলা ১১টার দিকে চাটমোহর পৌর সদরের নতুন বাজার খেয়াঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
সার কিনতে আসা কৃষকদের অভিযোগ, নতুন বাজার খেয়াঘাট এলাকার মেসার্স বিলচলন কৃষি বিতানের সার ডিলার কালাম সরকার সার বিক্রির সময় কৃষকদের কাছ থেকে নির্ধারিত মূল্যের চাইতে বেশি দাম নিচ্ছেন। প্রতি বস্তা সারের দাম ৮শ’ টাকা সরকারিভাবে নির্ধারিত হলেও ডিলার নিচ্ছেন ৮শ’ ২০ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত। আবার কিছুক্ষণ পর বলা হচ্ছে সার নেই।
অনেক কৃষক আবার সার কিনতে না পেরে ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছে। এরই এক পর্যায়ে শনিবার বেলা ১১টার দিকে ভুক্তভোগী কৃষকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে নির্ধারিত মূল্যে সকল কৃষককে সার দেবার দাবিতে মেসার্স বিলচলন কৃষি বিতানের ডিলার কালাম সরকারের দোকান ঘেরাও করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। পরে পুলিশের উপস্থিতিতে কৃষকদের মধ্যে সার বিক্রি করা হয়।
অপরদিকে পৌর সদরে মেসার্স আকাশ ট্রেডার্সের মালিক সার ডিলার আনন্দ কুমার সাহার দোকানেও সারের দাম বেশি নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন একাধিক কৃষক। বস্তা প্রতি ৮শ ৫০ টাকা নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ কৃষকদের। দাম বেশি নেওয়ায় সার কিনতে আসা কৃষকদের সঙ্গে ডিলারের তর্ক-বিতর্ক হতে দেখা গেছে।
এদিকে শনিবার সার কিনতে না পেরে ফিরে গেছেন অনেক কৃষক। ধুলাউড়ি গ্রামের সোনাউল্লাহ, সোহেল, দয়রামপুর গ্রামের মোতালেব হোসেন, নাছির উদ্দিন, উথুলী গ্রামের ফজলু হোসেনসহ অনেক কৃষক জানান, শুনেছি সারের সংকট নাই। কিন্তু সার কিনতে গিয়ে তো সার পেলাম না। এভাবে চললে কীভাবে চাষাবাদ করবো। ডিলাররা সারের দামও বেশি নিচ্ছে। আবার কিছুক্ষণ পর বলছে সার নাই।
কুমারগাড়া গ্রামের আজির উদ্দিন, রামনগর গ্রামের আমজাদ হোসেন, বোঁথড় গ্রামের ছিফাত আলী ও নটাবাড়িয়া গ্রামের ডাবলু হোসেন অভিযোগ করে বলেন, ডিলাররা সারের কৃত্রিম সংকট তৈরি করছেন। এছাড়া একজন কৃষককে এক বস্তার বেশি দিচ্ছে না। অথচ অনেকের বেশি জমি রয়েছে তাদের সারও বেশি দরকার। সাধারণ কৃষক এক বস্তা কিনতে পারছে। অথচ সরকারি দলের সমর্থক কৃষকরা নেতাদের ধরে কয়েক বস্তা সার কিনতে পারছে। তারা আরও অভিযোগ করেন সার কেনার পর ডিলাররা নিচ্ছে বস্তাপ্রতি ৮শ’ ২০ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত। কিন্তু রশিদে লিখছে ৮শ’ টাকা। এটি দেখার কেউ নেই।
অভিযোগের বিষয়ে মেসার্স বিলচলন কৃষি বিতানের ডিলার কালাম সরকার জানান, বাঘাবাড়ি ও জামালপুর থেকে সার আনতে অবরোধের কারণে আমাদের পরিবহন খরচ কিছুটা বেড়ে যায়। যার কারণে আমরা কৃষকদের কাছ থেকে বস্তা প্রতি কিছু টাকা বেশি নেই। না নিলে আমরা লোকসানে পড়বো। আর সার যতক্ষণ আমাদের কাছে আছে ততক্ষণ বিক্রি করছি। সংকট তৈরির অভিযোগ সত্য নয়।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, চাটমোহর উপজেলায় বিসিআইসি অনুমোদিত মোট ডিলারের সংখ্যা ১২ জন। এর মধ্যে ১১টি ইউনিয়নে একজন করে ১১ জন এবং পৌর সদরে একজন ডিলার রয়েছে।
এ বিষয়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুস সালাম জানান, ডিলাররা কৃষকদের চাহিদা অনুসারে টিএসপি, ডিএপি, এমওপি ও ইউরিয়া সার বিক্রি করবে। দাম বেশি নেবার কথা নয়। হরতাল অবরোধের কারণে কিছু বেশি নিতে পারে। তবে আমরা কৃষকদের বলেছি যদি কেউ বেশি নেয় তাহলে তার রশিদ নিয়ে আমাদের জানাতে।
তিনি আরও জানান, উপজেলায় ডিসেম্বর মাসে মোট সার বরাদ্দ রয়েছে ৮ ‘ মেট্রিকটন। এর মধ্যে বাঘাবাড়ি বাফার গুদামের ৪শ’ মেট্রিকটন এবং জামালপুরের যমুনা সার কারখানার ৪শ’ মেট্রিকটন। বাফার গুদামের ৪শ’ মেট্রিকটন এবং যমুনা সার কারখানার ২৯৩ মেট্রিকটন সার ইতিমধ্যে নিয়ে এসেছে ডিলাররা। সার সংকট নেই। তবে হরতাল-অবরোধে পরিবহন সংকটের কারণে কিছু সার এখনও আনা সম্ভব হয়নি।
(দ্য রিপোর্ট/এসআর/এপি/নূরুল/ডিসেম্বর ২১, ২০১৩)