‘সেনাবাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করানো হচ্ছে’
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : ‘অপ্রয়োজনে সেনাবাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করানোর অপ্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে’ বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে পঞ্চম দফা ৮৩ ঘণ্টার অবরোধের প্রথম দিন শনিবারের সার্বিক চিত্র তুলে ধরে তিনি এ মন্তব্য করেন।
‘ভোটার ও প্রার্থীবিহীন নির্বাচনে সেনাবাহিনীর প্রয়োজন নেই’ মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য আরো বলেন, ‘যে নির্বাচনে ভোটার নেই, প্রার্থী নেই, বিরোধী দলের অংশগ্রহণ নেই, জনগণ যে নির্বাচন বর্জন করেছে সেই নির্বাচনে সেনাবাহিনীর অংশগ্রহণ প্রয়োজন নেই।’
তিনি বলেন, ‘প্রহসনের নির্বাচনে অর্ধেকের বেশি আসনে পছন্দনীয় প্রার্থীদের বিজয়ী দেখানো হয়েছে। অবশিষ্ট আসনেও তা করা হচ্ছে। প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও প্রচারণাহীন এই নির্বাচনে দেশপ্রেমিক সশস্ত্র বাহিনীকে নিয়োগ দেওয়ায় আমরা বিস্মিত হয়েছি। অযোগ্য নির্বাচন কমিশন সরকারের ইচ্ছাপূরণের হাতিয়ার হয়ে নিজেরা জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। তারা সশস্ত্র বাহিনীকে জনগণের বিপক্ষে দাঁড় করানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে।’
‘ফল নির্ধারণপূর্বক নির্বাচন সুস্পষ্ট প্রহসন। এই প্রহসনে আওয়ামী লীগ জিতবে, হারবে বাংলাদেশ’ আন্তর্জাতিক সাময়িকী ‘দ্যা ইকোনমিক টাইমস’র উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ হারতে জানে না। হারেনি কখনও। এবারও হারবে না ইনশা আল্লাহ।’
‘চলমান আন্দোলন ব্যর্থ করার জন্য সরকারের সকল কূটকৌশল ব্যর্থ হতে বাধ্য’ উল্লেখ করে নজরুল ইসলাম বলেন, সরকার ইতোমধ্যে নির্বাচনী নাটক করতে গিয়ে দেশে-বিদেশে কঠোর সমালোচনার মুখে পড়েছে। নির্বাচনে কোন আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক আসছে না। দেশিয় পর্যবেক্ষকরাও অনীহা প্রকাশ করেছেন। সবাই বলছেন, এ নির্বাচন পাতানো, অর্থহীন, অগ্রহণযোগ্য ও অপর্যবেক্ষণযোগ্য। এই নির্বাচনে জনসমর্থন নেই, জনগণের অংশগ্রহণও নেই।
জনগণের মুখোমুখী হতে সরকার ভয় পায়- এমন মন্তব্য করে তিনি আরো বলেন, সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটারকে কৌশলে তাদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করে সরকার নিজেই স্বীকার করে নিয়েছে তারা জনগণের মুখোমুখি হতে ভয় পায়। অবশিষ্ট আসনগুলোর নির্বাচনে জনগণের তো বটেই প্রার্থীদেরও কোন আগ্রহ নেই, তৎপরতা নেই। কারণ, সবাই জানে ফলাফল কি হবে। স্বাধীনতার ৪২ বছর পর গণতন্ত্র ও নির্বাচন নিয়ে এই নির্মম রসিকতার মূল্য ক্ষমতাসীন সরকারকে জনগণ কড়ায়-গণ্ডায় পরিশোধ করার প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে। অপেক্ষা শুধু সময়ের।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, নির্বাচনী ইশতেহার এমনকি প্রধানমন্ত্রীর বলার পরেও সরকারের কোন মন্ত্রী তাদের আয়-ব্যয়ের হিসাব গত ৫ বছরে প্রকাশ করেননি। তারা না করলেও গত ক’দিনে বিভিন্ন পত্রিকা ও অনলাইনে প্রধানমন্ত্রীসহ বর্তমান ও সাবেক মন্ত্রীদের সম্পদের বিবরণী প্রকাশিত হয়েছে। যে সব সম্পদের কথা তারা প্রকাশ করতে চেয়েছেন শুধু তা-ই এসেছে। এর বাইরে আর কি কি আছে তা যথাসময়ে দেশবাসী নিশ্চয়ই জানবেন। তবুও যা প্রকাশ পেয়েছে তাও আঁতকে ওঠার মতো। মনে হয় এই সরকারের সব নেতা ও মন্ত্রীকে একটা করে আলাউদ্দিনের চেরাগ দেওয়া হয়েছিল। যা দিয়ে তারা এতো সম্পদ করতে পেরেছেন!
তিনি বলেন, এতদিন আমরা যখন এই সরকারের মন্ত্রী, উপদেষ্টা ও সরকারি দলের নেতাদের দুর্নীতি, অনাচারের কথা বলেছি তখন অনেকেই বিষয়টি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেছেন। এখন তো প্রমাণ হলো, আমাদের অভিযোগ মিথ্যা ছিল না। তারা নিজেরাই হলফ করে যা বলেছেন তা তাদের দুর্নীতি-অনাচার প্রমাণের জন্য যথেষ্ট। পত্রিকায় দেখলাম, দুদকের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, কারও বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ করলে তখন তারা দেখবেন। যখন কেউ নিজেই হলফ করে এমন তথ্য দেয় স্পষ্টতই তা সন্দেহজনক। দুদকের অবশ্যই বিষয়টি জরুরি ভিত্তিতে দেখা উচিৎ। সর্বগ্রাসী দলীয়করণের আর কত প্রমাণ জনগণ দেখবে?
‘আলোচনা চলছে এবং নির্বাচনের পরেও আলোচনা চলবে। নির্বাচনের পরে যদি আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতায় আসা যায় তা হলে প্রয়োজনে সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে নতুন নির্বাচন দেওয়া যেতে পারে’- প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করেন তিনি।
নজরুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলে দিতে চাই, একাদশ কিংবা পরবর্তীসময়ে কোন নির্বাচন নিয়ে আলোচনার কোন অবকাশ কিংবা আগ্রহ আমাদের কখনও ছিল না- এখনও নেই। আমরা সরকারকে বলবো বাস্তবতা অনুধাবন করুন। জনগণের বিপক্ষে যাবেন না এবং জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করবেন না। অথচ সবাই জানেন যে, জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় যে আলোচনা শুরু হয়েছিল তা ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালীন সময়ে সরকারের ধরন কী হবে তা নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা নিরসনের জন্য। নির্বাচনের পরেও আলোচনার কথা বলে প্রকৃতপক্ষে তিনি সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করে দিলেন যে, নির্বাচনের আগে এ বিষয়ে সরকার কোন সমঝোতায় আসবে না। যে তিন দফা নিয়ে আলোচনা হয়েছে তা ছিল লোক দেখানো। প্রমাণ হলো যে, আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা সরকারই নস্যাৎ করে দিল।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি অভিযোগ করেন, শান্তিপূর্ণ অবরোধ কর্মসূচি প্রতিরোধে দেশের বিভিন্ন এলাকায় যৌথবাহিনীর পাশাপাশি সরকারদলীয় সন্ত্রাসীদের আক্রমণে গত দুদিনে বিরোধী দলের নেতা-কর্মী খুন হয়েছেন, জখম ও গ্রেফতার করা হয়েছে অসংখ্য। মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার, হয়রানি এবং স্বাভাবিক শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও মিছিলে বাধা দেওয়ার ঘটনা তো চলছেই।
শনিবারের অবরোধে একজন নিহত, ৫২৩ জন আহত, ৩৮৫ জন গ্রেফতার এবং ভ্রাম্যমাণ আদালত তিনজনকে সাজা ও ২৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে বলে জানান তিনি।
(দ্য রিপোর্ট/টিএস-এমএইচ/এমএআর/নূরুল/ডিসেম্বর ২১, ২০১৩)