পটুয়াখালী সংবাদদাতা : জেলার সাগর উপকূলীয় উপজেলা কলাপাড়া, গলাচিপা, রাঙাবালীর একাধিক চরাঞ্চলে শীত মৌসুমের শুরুতেই বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।

এতে চরাঞ্চলবেষ্টিত তিনটি উপজেলায় অন্তত ১৫টি গ্রামের কয়েক হাজার পরিবার দুর্ভোগের শিকার হয়েছে। ভুক্তভোগী এসব পরিবার বিশুদ্ধ পানির সংকটে সাগর পাড়ে ১০/১৫ ফুট গভীর কুয়া (গর্ত) খুঁড়ে পানি সংগ্রহের চেষ্টা করছে। ফলে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে শিশুসহ বৃদ্ধরা।

এলাকাবাসী জানায়, নভেম্বরের শেষ দিকে এ পানি সংকট দেখা দিয়েছে ও পুরো শীত মৌসুমে এ সংকট থাকবে। এ সকল চরাঞ্চলে শিশুসহ বয়স্করা পানির জন্য হাহাকার করলে সহায়তা দিতে এগিয়ে আসেনি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বা বেসরকারি কোনো দাতা সংস্থা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কলাপাড়া উপজেলার কয়েকটি চরের অধিকাংশ শিশু বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। এ চরের ২/৩ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো টিউবওয়েল নেই। গত একমাসে এ গ্রামের পানিবাহিত রোগে অন্তত শতাধিক শিশু আক্রান্ত হয়েছে বলে স্থানীয়রা দাবি করেন।

গ্রামের অধিবাসী আলেয়া বেগম দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘আমরা এ্যাহন গর্ত কইরা পানি উডাইয়া খাই। এই পানিই মোরা হগল কামে ব্যবহার করি।’

গোটা গ্রাম ঘুরে অন্তত: দুইশতাধিক গর্ত করে এভাবে পানি সংগ্রহ করতে দেখা গেছে স্থানীয়দের, যা প্রচণ্ড লবণাক্ত। এ ছাড়া এসব গর্তের পানি খোলা জায়গায় থাকায় বিভিন্ন পোকা-মাকড় পানিতে মরে থাকছে। এতে পানি নষ্ট হলেও বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় তারা ওই পানিই খেতে বাধ্য হচ্ছে।

পার্শ্ববর্তী গ্রামের জয়গুননেছা বিবি দ্য রিপোর্টকে জানান, ‘মোগো বাচ্চাগো এ্যাহন রোগই ছাড়েনা। পানির কারণেই নাকি এই রোগ হইছে এইয়া ডাক্তাররা কইলেও আমনেরাই দ্যাহেন আমরা পানি পামু কই।’

এ ছাড়া গোটা গ্রামে একটি টিউবওয়েল নেই। এমনকি নেই স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন। গ্রামবাসীর মতে গত একমাসে অন্তত: ৪০ শিশু ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে।

ধুলাসার ইউপি চেয়ারম্যান কেএম খালেকুজ্জামান খলিফা দ্য রিপোর্টকে জানান, কাউয়ারচর গ্রামে এখন পানির জন্য হাহাকার চলছে। কিন্তু সরকারিভাবে এখনও কোনো টিউবওয়েল তারা বরাদ্দ পাননি।

একই অবস্থা দেখা গেছে গলাচিপা ও রাঙাবালীর কয়েকটি চরাঞ্চলে। এলাকাগুলোতে পানির তেমন সংকট দেখা না দিলেও টিউবওয়েল দূরে থাকায় গ্রামের অধিকাংশ মানুষ বাধ্য হয়ে পুকুর বা খাল-বিলের পানি ব্যবহার করছে। ফলে শিশুসহ বয়স্করা নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

চরমোন্তাজ ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল মুন্সি দ্য রিপোর্টকে জানান, কিছু এলাকায় পানির স্তর নিচে নেমেছে বলে শোনা যায়। তবে বেশিরভাগ এলাকায় টিউবয়েল দূরে হওয়ায় গ্রামের মানুষ পুকুর বা খালের পানি ব্যবহার করছে। চরাঞ্চলে শিক্ষার হার কম থাকায় মানুষ অসচেতন, তাই দ্রুত রোগবালাই ছড়ায়।

ছোটবাইদা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাজি আবদুল মান্নান দ্য রিপোর্টকে বলেন, প্রতি বছর শীত মৌসুমে এ অঞ্চলে বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দেয়। এ সকল এলাকায় আরো টিউবওয়েল প্রয়োজন। তাহলে হয়তো সাধারণ মানুষ পানিবাহিত নানা রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারে। তবে এ অঞ্চলে সেনিটেশন পদ্ধতি এখনও পুরোপুরি চালু না হওয়ায় মানুষ নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে তিনি বলেন।

কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবদুল রহিম দ্য রিপোর্টকে বলেন, বালি খুঁড়ে যে পানি পাওয়া যায় তা পানির উপরিস্তর। এ পানিতে প্রচুর পরিমাণ ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ও আর্সেনিকের জীবাণু থাকে। এ পানি পান করলে যেকোনো সুস্থ মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে বলে জানান তিনি।

(দ্য রিপোর্ট/বিএস/এমএইচও/এসবি/নূরুল/ডিসেম্বর ২১, ২০১৩)