বিশিষ্টজনদের অভিমত
আন্তর্জাতিক অনুপস্থিতি নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা কমাবে
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সরকার ও বিরোধী দলের ঐকমত্য না হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক ফোরাম নির্বাচনী পর্যবেক্ষক পাঠানো থেকে বিরত থাকার ঘোষণা দিয়েছে।
আন্তর্জাতিকভাবে নির্বাচনী পর্যবেক্ষকদের না আসা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশিষ্টজনদের অনেকে।
বিশিষ্ট লেখক, গবেষক ও বামপন্থী বুদ্ধিজীবী সৈয়দ আবুল মকসুদের মতে, আসন্ন নির্বাচন একটি পাতানো নির্বাচনী খেলা মাত্র।
তিনি দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘যেহেতু এই নির্বাচন একেবারেই গণতান্ত্রিক রীতিসম্মত নয়, সুতরাং ইইউ অথবা অন্যকোনো আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক এখানে আসা অর্থহীন।’
তাঁর মতে, এই নির্বাচনে বিরোধী দলের অংশগ্রহণ না থাকায় অর্ধেক জনগণের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। সুতরাং একে স্বাভাবিক নির্বাচন বলা যায় না।
তবে ভিন্নমত পোষণ করেছেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি অধ্যাপক আবুল বারকাত। তিনি মনে করেন, বিদেশিরা পর্যবেক্ষণে এলেই নির্বাচন সুষ্ঠু হয়, আর না এলেই সেটা অবাধ হয় না এই ধারণা ঠিক নয়।
তিনি বলেন, ‘কে পর্যবেক্ষণে এলো বা না এলো সেটা তাদের বিষয়। ভোট কেন্দ্রে যদি সত্যিকার অর্থে লোকজন যায় অর্থাৎ উপস্থিতি ৬৫ থেকে ৭০ পার্সেন্ট হয় তাহলেই সেটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে। সেখানে পর্যবেক্ষক থাকুন বা না থাকুন। আর যদি পঁচিশ ভাগ ভোটারও না থাকে তাহলে শত পর্যবেক্ষক থাকলেও সেই নির্বাচনকে স্বাভাবিক বলা যাবে না।’
তাঁর ভাষ্য, আমাদের সমস্যা হচ্ছে বিদেশিদের দিকে তাকিয়ে থাকা। আমেরিকা কি তার নির্বাচনে লোকজন ডাকে যে, ভাইয়েরা আসেন। আপনারা না এলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। তদের নির্বাচনে তো আমাদের দেশের চেয়ে অনেক কম ভোটার উপস্থিত থাকে। সেগুলো কি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নয়?
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক ড. ইমতিয়াজ আহমেদের কাছে এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘আমাদের দেশের মতো গণতান্ত্রিক মানের দেশে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের গুরুত্ব আছে। কারণ যে সব দেশে নির্বাচন নিয়ে গণ্ডগোল হওয়ার আশঙ্কা থাকে সে সব দেশে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। আসন্ন নির্বাচন ট্রান্সপারেন্ট, ইনক্লুসিভ ও ক্রেডিবল নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। এই নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশের মিডিয়া এবং জনমানুষের মধ্যেই ব্যাপক সমালোচনা আছে। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় না আসাটাই স্বাভাবিক।’
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘এর আগে ভোটারবিহীন নির্বাচন দেখেছি, প্রার্থীবিহীন নির্বাচন দেখিনি। এবার তাই হতে যাচ্ছে। এটা কোনো নির্বাচন হচ্ছে না। প্রহসন হচ্ছে। মূলত এই কারণেই বিদেশি পর্যবেক্ষকরা আসছেন না।
(দ্য রিপোর্ট/বিকে/এইচএসএম/নূরুল/ডিসেম্বর ২১, ২০১৩)