দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : গণমাধ্যম ও বিভিন্ন বিদেশি শক্তিদের সমালোচনা করলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।

রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে শনিবার বিকেলে আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিজয় দিবসের আলোচনা সভায় এ সমালোচনা করেন তিনি।

সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, নিউজ হবে বস্তুনিষ্ঠ। আন্দাজ করে কোন নিউজ হতে পারে না। বলাই হয়ে থাকে, নিউজ হ্যাজ টু বি বেইজড অন ফ্যাক্ট।

তিনি বলেন, আমি ময়মনসিং এ থাকা কলে একটি সাপ্তাজিক পত্রিকা পড়তাম। প্রায়ই সেখানে কিছু গুজব খবর পাওয়া যেত। যেমন, চাপাইনবাবগঞ্জে আম গাছে কাঁচামরিচ ধরেছে। এখন ময়মনসিং এর লোকজন জানে না চাপাইনবাবগঞ্জে কি হয়েছে। আবার সেই পত্রিকাই কিছু দিন পর নিউজ করে চাপাইনবাবগঞ্জে ছাগলের পেটে বাঘের বাচ্চা হয়েছে।

টকশো’র সমালোচনা করে তিনি বলেন, টকশো মানে ইংরেজি টক না, এটি তেতুলের টক। এখানে যারা আসেন সবাই সর্ব বিষয়ে অভিজ্ঞ।

আশরাফ বলেন, ঘুরে ফিরে একই মুখগুলো সব জায়গাতে দেখা যায়। রাতে যাকে রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে দেখা যায়, সকালে তাকে রান্নার অনুষ্ঠানে দেখা যায়। বিকেলে দেখা যায় শিশু পরিচর্যার অনুষ্ঠানে।

গণতন্ত্রের আরেকটি স্তম্ভ গণমাধ্যম উল্লেখ করে তিনি বলেন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য স্বাধীন, বস্তুনিষ্ঠ ও নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশন করতে হবে। তবেই গণতন্ত্র স্থায়ী রূপ লাভ করবে।

তিনি বলেন, পত্রিকায় বুদ্ধিজীবীদের নিউজের হেডিং ও কলাম দেখলে তাদের গায়ে হাত না দিয়েই বুঝা যায় তাদের গায়ে কত জ্বালা। আমেরিকা ও চীনের কড়া সমালোচনা করে আশরাফ বলেন, তাদের দেশে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলে কোন সমস্যা নেই। শুধু আমাদের এখানে করলে দোষ।

কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর নিয়ে বিদেশীদের অবস্থানের সমালোচনা করে আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘আপনার দেশে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হলে দোষ নাই। আর বাংলাদেশে কাদের মোল্লার রায় কার্যকর হলে সাতখণ্ড রামায়ন অশুদ্ধ হয়ে যায়।’
তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। সমীক্ষায় দেখা যায় যুক্তরাষ্ট্রে এর পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। চীন তাদের বিশ্ব বিবেক বলে দাবি করে। তাদের দেশের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। শুধু আমাদের এখানে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হলেই দোষ।’

তিনি বলেন, ‘এই যে ড্রোন হামলা করে মানুষ হত্যা করা হচেছ। জুডিশিয়াললি না গিয়ে তাদের হত্যা করা হচ্ছে। এই যে সাদ্দাম হোসেনকে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করা হলো। সাদ্দামকে এমন রশি দিয়ে এমন ভাবে ফাঁসি দেওয়া হলো যে তার শরীর থেকে মাথা আলাদা হয়ে গিয়েছিলো। খুবতো সবাই মুসলমান মুসলমান বলে কান্নাকাটি করি। বিচার ছাড়াই লাদেনকে কিভাবে হত্যা করা হলো। কুললি (ঠাণ্ডা মাথায়) তাকে হত্যা করা হলো। তার লাশ পর্যন্ত দাফন করা হলো না। সাগরে ভাসিয়ে দেওয়া হলো। এগুলো কি ধরনের জুডিশিয়াল কিলিং? কি ধরনের সিভিলাইজড কিলিং।’

আশরাফ আরো বলেন, গাদ্দাফীকে ড্রেনের ভিতর থেকে বের করে হত্যা করা হয়েছে। এগুলো কিছু না। আমরা কিছু করলেই দোষ। এগুলো নিয়ে তারা কথা বলে। আমরা যদি কিছু বলি তাহলেই উনারা নাখোশ হন। আর আমাদের এখানে তাদের কিছু দালাল তারা আরো বেশি নাখোশ।’

মুক্তিযুদ্ধ সময়কার কথা তুলে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ না হওয়ার জন্য ভারত মহাসাগরে সপ্তম নৌ-বহর পাঠিয়েছিলো। সিকিউরিটি কাউন্সিলে প্রস্তাব উত্থাপণ করেছিলো। তারা যদি যুদ্ধ থামাতে পারতো তবে এ দেশ অর্জন করা কঠিন ছিলো। তখন আমাদের পাশে ছিলো সোভিয়াত ইউনিয়ন ও ইন্ডিয়া। আমেরিকার পাশে ছিলো চীন।

তিনি বলেন, আমাদের কেউ দয়া করে স্বাধীনতা দেয়নি। পাকিস্তানি সৈন্যরা দয়া করে পরাজিত হয়নি। আমাদের যুদ্ধ করে বিজয়ী হতে হয়েছিল। আমাদের ভয় পেলে চলবে না। আমরা দেশের কোন শত্রুকে ভয় পাই না। বিদেশি শত্রুদেরও ভয় পাই না।

(দ্য রিপোর্ট/এইউএ/এসবি/ডিসেম্বর ২১, ২০১৩)