পর্যবেক্ষকবিহীন নির্বাচন
বাংলাদেশের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইউরোপীয় ইউনিয়ন পর্যবেক্ষক পাঠাচ্ছে না। পূর্বেই বোঝা যাচ্ছিল চলমান নির্বাচন নিয়ে ইইউ আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। শেষ পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করল মাত্র। দেশে যারা নির্বাচন পর্যবেক্ষণের কাজ করে থাকে তারা ইতোপূর্বে ইলেকশন কমিশনকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণে তাদের অপারগতার আভাস দিয়েছে।
প্রচেষ্টা চালালে সরকার বা নির্বাচন কমিশন যে আর কোনো পর্যবেক্ষক পাবে না এমন কথা বলার সময় এখনো আসেনি। তবে ইইউ পর্যবেক্ষক হিসেবে ইতোমধ্যে সারা দুনিয়ায় যে আস্থা অর্জন করেছে, তাতে তাদের অস্বীকৃতিতে সরকার এবং নির্বাচন কমিশন বড় আকারের একটি ধাক্কা খেল। বলা যায় দেশ ও বিদেশে এই নির্বাচন নিয়ে সরকার ও নির্বাচন কমিশন আজ প্রবল আস্থার সংকটের মুখোমুখি।
ইইউ সেখানেই পর্যবেক্ষক পাঠায়, যেখানে তারা নির্বাচনকে অর্থবহ মনে করে। বাংলাদেশের চলমান দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন যাতে সব দলের অংশগ্রহণমূলক হয় সে ব্যাপারে ইইউ তাদের মতামত দিয়ে আসছিল। জাতিসংঘ, আমেরিকাসহ গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তিসমূহ বাংলাদেশে একটি অর্থবহ নির্বাচনের জন্য সরাসরি চেষ্টাও করেছে। কিন্তু সেসব মতামত ও উদ্যোগের তোয়াক্কা না করে সরকার ও নির্বাচন কমিশন যে নির্বাচনের আয়োজন করেছে তা ‘স্রেফ সিট ভাগাভাগি ও উপঢৌকন’-এর চরিত্র লাভ করেছে। এক্ষেত্রে ইইউর মতো একটি দায়িত্বশীল সংস্থা যে এখানে পর্যবেক্ষক পাঠাতে পারে না তা বোঝার জন্য বেশি প্রজ্ঞার দরকার হয় না।
এখন প্রশ্ন হল, সংবিধানের দোহায় দিয়ে সরকার যে নির্বাচনটি করতে যাচ্ছে সেখানে সেনা মোতায়েন করলে বিদেশিদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাবে কিনা এবং সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্তটি প্রশ্নবিদ্ধ হবে কিনা। কারণ সাধারণত নির্বাচনে অংশ নেওয়া পক্ষসমূহের দাবির পরিপ্রেক্ষিতেই সেনা মোতায়েন হয়ে থাকে। কিন্তু বর্তমান দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সে বাস্তবতা সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। আমরা মনে করি, সরকার শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের আনুষ্ঠানিকতা সেরে ফেলবে। তাতে সংবিধান রক্ষা হলেও গণতন্ত্রের পরাজয় ঘটার আশঙ্কা এখন অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে উঠছে। এমতাস্থায় নির্বাচনের আয়োজন এবং তার আনুষঙ্গিক ব্যয় জাতির জন্য বাড়তি বোঝা হয়ে দাঁড়াবে কিনা সেটাও এখন প্রশ্ন।