‘অবরোধের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে না’
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : ‘গত দুই মাসে হরতাল-অবরোধে দেশের অর্থনীতির যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে না’ বলে আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
সচিবালয়ে রবিবার দুপুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ আশঙ্কা ব্যক্ত করেন। এর আগে দুপুর ১২টার দিকে ঢাকাস্থ কানাডিয়ান রাষ্ট্রদূত হিদার ক্রুডেন অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে তার সরকারের উদ্বেগের কথা জানান।
অর্থমন্ত্রী বলেন, `অবরোধের কারণে রফতানি ব্যাহত হচ্ছে, মানুষের যাতায়াত ও দেশের অভ্যন্তরে পণ্য সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে সঙ্কটে কৃষি উৎপাদনেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষ অবরোধ সফল করেছে বলে বিএনপি নেতারা দাবি করে থাকেন। কিন্তু এটা সত্য নয়। দেশের মানুষ অবরোধ-হরতাল সফল করা তো দূরের কথা তারা সেটা মনে-প্রাণে ঘৃণা করে। সরকার কেন এটা শক্ত হাতে দমন করছে না সেজন্য জনগণ সরকারের ওপর ‘ক্ষুব্ধ’ বলে দাবি করেন তিনি।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে ক্ষমতায় যাওয়া, দেশের সেবা করা নয়। দেশ সেবা তার লক্ষ্য হলে তিনি কখনোই এ ধরনের কর্মসূচি দিতেন না। আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটিয়ে ক্ষমতায় যাওয়া সহজ। এ কারণেই তিনি আন্দোলনকে বেছে নিয়েছেন। খালেদা জিয়ার এই আচরণ ‘রাষ্ট্রের সঙ্গে শত্রুতা’ বলে আখ্যায়িত করেন তিনি।
‘এ ধরনের পরিস্থিতি বেশিদিন চলতে পারে না এবং চলতে দেওয়া উচিৎ নয়’- এমন মন্তব্য করে মুহিত বলেন, ‘নির্বাচনী পরিবেশ বজায় রাখায় জন্যই সরকার এখনও এসব বিষয়ে নমনীয় রয়েছে। ৫ জানুয়ারির পর এ ক্ষেত্রে কঠোর হবে সরকার।’
তিনি আরো বলেন, ‘জানুয়ারির ৫ তারিখের পর আমি মন্ত্রিসভায় জামায়াতকে সন্ত্রাসী দল হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার প্রস্তাব দেব। এরপর সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিলেই পরিস্থিতি আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে’।
নির্বাচন প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘ভোটার ছাড়া নির্বাচন কোনও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নয়। এছাড়া বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলোও নির্বাচনে আসছে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ইতোমধ্যে বলেছেন, তিনিও মনে করেন ভোটের রায় পাওয়া যায়নি। জনগণের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন তিনি চান। সুতরাং বল এখন বিএনপির কোর্টে। তারা ঠিক করবেন, কী তারা করবেন। তারা অসাংবিধানিক পন্থায় যাবেন, না সংবিধান মানবেন। তবে বেগম জিয়া শুরু থেকেই ঠিক করে রেখেছেন, তিনি সংবিধান মানবেন না। তার একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে ক্ষমতা।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপির কিছু দাবি মনে হয় ইতোমধ্যে প্রশমিত হয়েছে। বর্তমানে তাদের শেষ দাবি হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীর অধীনে তারা নির্বাচন করবেন না। এতে মনে হচ্ছে, তারা বুঝতে পারেছেন যে, সর্বদলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের প্রস্তাবটি একটি ভালো প্রস্তাব।’
‘জানুয়ারির ৫ তারিখের পর বর্তমান সরকার কতোদিন থাকবে’- এ প্রশ্নের জবাবে মুহিত বলেন, ‘সেটা এখন বলা সম্ভব নয়।’
কানাডার রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে সাক্ষাৎ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, সাক্ষাতকালে চলমান রাজনৈতিক সহিংসতা ও অর্থনৈতিক ক্ষতির বিষয়ে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এছাড়া নির্বাচন নিয়েও কথা হয়েছে। তবে এটি তার মূল ইস্যু ছিল না। ব্যবসা-বাণিজ্য সংক্রান্ত একটি বিষয় নিয়েই তিনি মূলত এসেছিলেন।
মন্ত্রী জানান, কানাডার সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বি-পাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। কানাডা থেকে আমদানির চেয়ে আমাদের রফতানির পরিমাণ অনেক বেশি। শুরুতে কানাডা থেকে ইউরিয়া, পটাশ সার অনুদান হিসেবে আসতো। এখন আর সেটা আসে না। বিভিন্ন দেশ থেকে এ সার এখন ক্রয় করা হয়। এ সংক্রান্ত একটি ক্রয় চুক্তি ‘অর্থনৈতিক বিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটি’- তে অনুমোদন এবং কবে এটি ওই বৈঠকে উঠতে পারে সে বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে এসেছিলেন। চলতি মাসের ২৯ তারিখে ‘অর্থনৈতিক বিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটি’র একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। ওই বৈঠকে এই ক্রয় চুক্তি প্রস্তাবটি উঠতে পারে বলে অর্থমন্ত্রী জানান।
‘নির্বাচনে কানাডার পক্ষ থেকে কোনো নির্বাচনী পর্যবেক্ষক পাঠানো হবে কীনা’- এ প্রশ্নের জবাবে মুহিত বলেন, ‘আমি জানি না, এটি তাদের বিষয়।’
উল্লেখ্য, সকালে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় কানাডার রাষ্ট্রদূত সাংবাদিকদের জানান, বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতিতে আমরা উদ্বিগ্ন। শুধু আমরা নই, সকলেই উদ্বিগ্ন।
তিনি আরও বলেন, এটা খুবই দুঃখজনক যে, চলমান সঙ্কট নিরসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কেউই এখন পর্যন্ত কোনও কার্যকর উদ্যোগ নিচ্ছে না।
(দ্য রিপোর্ট/এসআর/এমএআর/ডিসেম্বর ২২, ২০১৩)