দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : সংবিধানের আলোকেই ২৪ জানুয়ারির পরও নির্বাচন সম্ভব উল্লেখ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, ‘সরকারের সদিচ্ছা থাকলে এখনও সমঝোতা সম্ভব।’

তিনি বলেন, ‘সমঝোতার মাধ্যমে সকলের অংশগ্রহণে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সংবিধানে কোন সংশোধনীর প্রয়োজন হলে সেটিও করা সম্ভব। কারণ এখনও সংসদ বহাল আছে। বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী আগামী ২৪ জানুয়ারির মধ্যে সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে সংবিধানে নির্দলীয় সরকারের ব্যবস্থা করে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব।’

গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে রবিবার সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় তিনি ১৮ দলের ডাকা ৮৩ ঘণ্টার অবরোধের দ্বিতীয় দিনের চিত্রও তুলে ধরেন।

নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘নির্বাচন অনুষ্ঠানে সময়েরও কোনো অভাব নেই। অভাব শুধু সরকারের সদিচ্ছা। দেশ, দেশের জনগণ ও গণতন্ত্রের স্বার্থে আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতা এবং সমঝোতার মাধ্যমে দশম সংসদ নির্বাচনের উদ্যোগ নিন। সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণকে তাদের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিন।’

তিনি বলেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রের মালিক জনগণ। অন্যায়ভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকার এবং জনগণের মতের বিরুদ্ধে পুনরায় ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য রাষ্ট্রীয় বাহিনীসমূহকে ব্যবহার করছে সরকার।’

বিএনপির এ স্থায়ী সদস্য বলেন, ‘বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় ১৫৪ জনকে বিজয়ী করার মাধ্যমে নির্বাচনী নাটকের প্রথম অংশের পর এবার আগামী ৫ তারিখে প্রতিদ্বন্দ্বিতার নামে ফ্রেন্ডলি ম্যাচ কিংবা পাতানো খেলা অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে সরকার। জনগণ এসব নাটক এবং খেলায় নেই। তারা তাদের অধিকার নিয়ে সরকারের অনৈতিক রসিকতায় ক্ষুব্ধ ও ক্রুদ্ধ। যথাসময়ে তারা এর জবাব দেবে ইনশাআল্লাহ।’

নির্বাচনে অংশ না নিয়ে বিরোধী দল নাকি এখন কপাল চাপড়াচ্ছে- প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের সমালেচনা করে নজরুল ইসলাম বলেন, ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া কোন দলীয় সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচনে বিরোধী দল যে অংশ নেবে না এটা তো বহু আগেই ঘোষণা করা হয়েছে। কাজেই দলীয় সরকারের অধীনে বিরোধীদলের নির্বাচনে না যাওয়া কোন অতর্কিত কিংবা অপ্রত্যাশিত ঘটনা নয়। এটাই স্বাভাবিক ছিল এবং তাই হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘স্বাভাবিক কোন ঘটনা নিয়ে কপাল চাপড়ানো স্বাভাবিক নয়। ঘটনা ইচ্ছানুরূপ না ঘটলে বরং কপাল চাপড়াতে হয়, যেমন ঘটছে ক্ষমতাসীনদের বেলায়। নিজেদের মধ্যে আসন ভাগাভাগির ফলে এতো বেশি আসনে তাদের মনোনীতরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছে। অর্থাৎ ঘটনা প্রত্যাশা অনুযায়ী না ঘটায় আজ দেশে-বিদেশে যে নিন্দার ঝড় উঠেছে তার জন্য তো কপাল চাপড়ানোর কথা আপনাদের। নিজেদের অবস্থা অন্যদের বলে বর্ণনা করার হাস্যকর চেষ্টা কারো জন্যই মর্যাদাকর নয়।’

প্রধানমন্ত্রীসহ তার জোট সরকারের ও দলের নেতা-মন্ত্রীগণ প্রতিনিয়ত নির্বাচনের বিষয়ে চলমান আন্দোলন থেকে জনগণের দৃষ্টি ফেরানোর জন্য বিএনপিকে গণতন্ত্র স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি বলে প্রচারের বৃথা চেষ্টা করছেন বলেও জানান তিনি।

এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, বিএনপি মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের হাতে গড়া দল। ইতিহাস সাক্ষী, বিএনপি কখনও স্বাধীনতার সুবর্ণ ফসল গণতন্ত্রকে হত্যাও করেনি, গণতন্ত্র হত্যাকারী কাউকে কখনও স্বাগতও জানায়নি। এমন অপরাধের জন্য দায়ী বর্তমান সরকারি দল।’

তিনি আরো বলেন, ‘১৯৭৫ সালে তারা গণতন্ত্র হত্যা করে একদলীয় স্বৈরশাসন বাকশাল কায়েম করেছিল। বাক, ব্যক্তি, সংবাদপত্র ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে।’

বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান পুনরায় বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন, মত প্রকাশ ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন নজরুল ইসলাম।

বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্কের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগের জবাবে তিনি বলেন, ‘ব্যক্তির সঙ্গে রাষ্ট্রের কোন সম্পর্ক থাকার সুযোগ নেই। যদি ভালো সম্পর্ক থেকে থাকে তা হলে সেটা সরকারের সঙ্গে আছে।’

‘সরকার কি এখনও পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে’- প্রশ্ন রাখেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি অভিযোগ করেন, ‘খাদ্যনালীর মারাত্মক রোগে আক্রান্ত বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত রুহুল কবির রিজভী আহমেদকে যে বিশেষ ধরনের খাবার খেতে চিকিৎসকগণ পরামর্শ দিয়েছেন তা তার বাড়ি থেকে সরবরাহ করতে দেওয়া হচ্ছে না। তিনি সুচিকিৎসা ও পাচ্ছেন না, পথ্যও পাচ্ছে না ঠিকমতো। তিনি ক্রমান্বয়ে আরও রুগ্ন হয়ে পড়ছেন।’

তিনি রিজভীর সুচিকিৎসার জন্য কেবিনে স্থানান্তর এবং বাড়ি থেকে সরবরাহ করা খাদ্য প্রদানের জন্য কারা কর্তৃপক্ষ ও সরকারের নিকট আহ্বান জানান।

এসময় তিনি জানান, আগামী ২৪ ডিসেম্বর সংবাদ সম্মেলনে দেশবাসীর উদ্দেশ্যে কথা বলবেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

(দ্য রিপোর্ট/টিএস-এমএইচ/জেএম/ডিসেম্বর ২২, ২০১৩)