কালকিনিতে সেতুর অভাবে এলাকাবাসীর দুর্ভোগ
মাদারীপুর সংবাদদাতা : মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার ডাসার থানার নবগ্রাম ইউনিয়নে একটি সেতুর অভাবে ৫হাজার গ্রামবাসী চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা বর্ষা মৌসুমে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাঁশের সাঁকো দিয়ে চলাচল করছে। এতে মাঝেমধ্যে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে শিক্ষার্থীসহ এলাকার মানুষ।
দীর্ঘদিনের এ সমস্যার কথা স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান ও এমপির কাছে আবেদন করেও এলাকাবাসী কোনো ফল পায়নি। তাই তারা চরম হতাশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার পশ্চিম শশিকর গ্রামের চৌমুহনী রাস্তার খালের উপর একটি বাঁশের সাকো। এ সাঁকো দিয়ে স্থানীয় লোকজন চরম ঝুঁকি ও আতঙ্কের মধ্য দিয়ে চলাচল করছে। এ সাঁকোর উপর দিয়ে শশিকর শহীদ স্মৃতি মহাবিদ্যালয়, শশিকর উচ্চ বিদ্যালয়, শশিকর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও শশিকর হাটে মানুষ চলাচল করে। এমনকি একটি কমিউনিটি ক্লিনিক ও একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাওয়া আসা করার একমাত্র রাস্তা এটি।
বাঁশের সাঁকোটি পার হয়ে ডান দিকে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া, বামে শশিকর- ডাসার থানা হয়ে কালকিনি উপজেলা সদরে যাওয়ার একমাত্র রাস্তা। দুই উপজেলার শেষ প্রান্তে এ গ্রামটি অবস্থিত হওয়ায় এখানে ৩ কিলোমিটার এলাকা বিদ্যুৎবিহীন রয়েছে। যার ফলে রাতে গ্রামটিতে হাঁটলে মনে হয় একটি ভুতুরে গ্রাম। অথচ শিক্ষার দিক থেকে কালকিনি উপজেলা মধ্যে অগ্রসর এ শশিকর গ্রাম। এখানে সরকারি-বেসরকারিসহ বিভিন্ন সংস্থায় বড় বড় পদে চাকরিজীবী রয়েছেন। হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা হওয়ায় উন্নয়নের ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত রয়েছে বলেও অনেকে মনে করেন। এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি এ বাঁশের সাঁকোটিকে ভেঙে এখানে একটি সেতু নির্মাণ করা হোক। এ সেতুটি নির্মিত হলে ৫হাজার লোকের ভাগ্য খুলে যাবে বলে এলাকাবাসী মনে করেন।
এই গ্রামের অনুপম বাড়ৈ ৫ম শ্রেণি, বৃষ্টি রায় ৬ষ্ঠ শ্রেণি, দুর্জয় রায় ৮ম শ্রেণি, দীপঙ্কর রায় একাদশ ও নূপুর রায় দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। এরা সবাই শশিকর উচ্চ বিদ্যালয় ও শহীদ স্মৃতি মহাবিদ্যালয়ের পড়াশুনা করে। তারা বলেন, আমরা বর্ষা মৌসুমে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করি। এ খালের উপর একটি ব্রিজ হলে আমাদের জীবনের ঝুঁকি থাকত না। সরকার এখানে একটি সেতু নির্মাণ করে আমাদের নিরাপদ চলাচলের ব্যবস্থা করে দিক।
এলাকার ডা. সুরেন্দ্রনাথ বাড়ৈ, মধুসূদন, ডা. স্বপন সরকার, শ্যামল তালুকদার, হরষিত বাড়ৈ, আশিস সরকার, সুমন তালুকদারসহ শতাধিক গ্রামবাসী জানান, কয়েকবার সেতুটি নির্মাণের জন্য মাপজোখ করে নেওয়া হয়েছে।কিন্তু আজও ব্রিজের কোন খবর নেই। আমরা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে জোর দাবি জানাই, এই ব্রিজটি নির্মাণ করে আমাদের কষ্টের অবসান ঘটান।
নবগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান পুলিনবিহারী সরকার বলেন, চৌমুহনীর মাথায় এই ব্রিজটির জন্য আমি একাধিকবার উপর মহলে তদ্বির এবং লেখালেখি করেছি। কিন্তু কোনো ফল পাইনি। ওখানে ব্রিজটি হলে শিশুদের লেখাপড়ার সুবিধা হবে। এলাকার মানুষের ভাগ্য খুলে যাবে। ব্রিজটি নির্মাণের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করছি।
উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিআরডি) মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, আমি সরেজমিনে গিয়ে যতদ্রুত সম্ভব ব্রিজটি নির্মাণ করে সাধারণ মানুষের চলাচলের ব্যবস্থা করা যায়, তার চেষ্টা করব।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফজলে আজিম জানান, আমি এখানে যোগদানের পর কেউ আমাকে ব্রিজটির কথা বলেনি। আমি এখন জানলাম। যতদ্রুত সম্ভব সেতুটি নির্মাণের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
(দ্য রিপোর্ট/এসকে/এপি/ডিসেম্বর ২২, ২০১৩)