কাওসার আজম, দ্য রিপোর্ট : দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে হেফাজতে ইসলামকে ঢাকার শাপলা চত্বরে সমাবেশ করতে দেবে না সরকার। তবে হেফাজতের আশা, ২৪ ডিসেম্বর তাদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে সরকার শেষ পর্যন্ত অনুমোদন দেবে।

হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমীর মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘সরকারের একটি সংস্থার কর্মকর্তারা আমাদের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর সমাবেশ করার অনুরোধ জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, সরকার কোনো অবস্থাতেই বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মধ্যে আপনাদের সমাবেশ করতে দেবে না্। তাই আপনারা সমাবেশ স্থগিত রাখেন। নির্বাচনের পরে তা করেন।’

তিনি আরো বলেন, ‘জবাবে আমরা বলেছি, সংগঠনের আমীর আল্লামা আহমদ শফীর পরামর্শ ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবো না। তিনিই সিদ্ধান্ত জানানোর মালিক। এ ছাড়া যেহেতু এটি বৃহত্তর ঢাকার সমাবেশ, তাই তাদের সঙ্গেও বসতে হবে।’

কর্মসূচি স্থগিত করবেন কিনা কিংবা সরকার অনুমতি না দিলে কী করবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আপাতত কর্মসূচি স্থগিতের কোনো চিন্তা-ভাবনা নেই। আমীর সাহেবের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত জানানো হবে। আর সরকার অনুমতি না দিয়ে সকলে বসে করণীয় ঠিক করবো।’

রবিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমীসহ কয়েকজন শীর্ষ নেতা সরকারের একটি সংস্থার কার্যালয়ে যান। সেখানে প্রায় ২ ঘণ্টা তাদের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে হেফাজতের ঢাকা মহানগর যুগ্ম আহবায়ক মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী, মাওলানা মাহফুজুল হক, সদস্য সচিব মাওলানা জুনাইদ আল হাবিব, মাওলানা আবুল হাসনাত আমিনী, মাওলানা নাজমুল হাসান উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে রবিবার বেলা পৌনে ১টার দিকে মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমীসহ পাঁচজনকে র‌্যাব-১ এর কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। দীর্ঘ ২ ঘণ্টা তাদের বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

এদিকে, ২৪ ডিসেম্বরের সমাবেশ সফল করার লক্ষ্যে রবিবার সকাল থেকে নূর হোসাইন কাসেমীসহ শীর্ষ নেতারা রাজধানীর রামপুরা-খিলগাঁও, মিরপুর, কামরাঙ্গীরচর-কেরানীগঞ্জ এবং ডেমরা-যাত্রাবাড়ী এই চার জোনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সকালেই বিষয়টি দ্য রিপোর্টকে নিশ্চিত করেন হেফাজতের প্রচার বিভাগের সদস্য মাওলানা অলিউল্লাহ আরমান।

চার জোনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে দুপুরে শীর্ষ নেতাদের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বৈঠকের ঠিক আগমুহূর্তে নূর হোসাইন কাসেমীসহ পাঁচজনকে আটক করে নিয়ে যায় র‌্যাব।

২৪ ডিসেম্বরের সমাবেশ সফল করতে যাবতীয় প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছে হেফাজতে ইসলাম। ইতোমধ্যে পাঁচ হাজারেরও বেশি স্বেচ্ছাসেবক নিয়ে সাতটি উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে।

নারী উন্নয়ন নীতিমালার বিরোধিতা করে ২০১০ সালের ২০ মার্চ চট্টগ্রামের হাটাহাজারী দারুল উলুম মইনুল ইসলাম মাদরাসায় হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়। ওই মাদরাসার মহাপরিচালক আল্লামা আহমদ শফীর নেতৃত্বে হেফাজতে ইসলাম একটি অরাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে দাবি করে আসছিল। কিন্তু দু-একজন বাদে এর অধিকাংশ নেতাই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বা জোটের শীর্ষ স্থানীয় নেতা।

চলতি বছর মার্চে তাদের ভাষায় 'নাস্তিক' ব্লগারদের বিচারের দাবিতে রাজপথে আকস্মিক উত্থান হয় সংগঠনটির। ৬ এপ্রিল ঢাকায় মহাসমাবেশ করে শক্তি প্রদর্শন করে তারা। ৫ মে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি শেষে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে অবস্থান নিয়ে শক্তি দেখালেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানের মুখে উচ্ছেদ হয় হেফাজতের নেতাকর্মীরা।

(দ্য রিপোর্ট/কেএ/এমএআর/ডিসেম্বর ২২, ২০১৩)