রাজধানীর পুরান ঢাকার ওয়ারী থানার গোপীবাগের অভয় দাস লেনের একটি বহুতল ভবনের ফ্ল্যাটে ছয়জন শক্ত-সমর্থ পুরুষকে গলা কেটে খুন করা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার সন্ধ্যায়। দেশে চলমান রাজনৈতিক সংকটের মধ্যে এই হত্যাকাণ্ডে দেশময় জনমনে চাঞ্চল্যের পাশাপাশি চরম আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে।

প্রাথমিকভাবে পত্রপত্রিকায় যে সংবাদ এসেছে তা থেকে জানা যায়, নিহত ছয়জনের একজন লুৎফর রহমান ফারুক নিজেকে একটি বিশেষ মতের পীর দাবি করতেন। নিহতদের মধ্যে তার নিজের ছেলে সিটি ব্যাংকের কর্মচারী মনির ছাড়াও তার কয়েকজন অনুসারী ছিলেন। বাড়ির অন্যান্য সদস্যদের একটি ঘরে আটকে রেখে সাত-আট জনের খুনি দলটি এই নৃশংসতা চালিয়ে নির্বিঘ্নে চলে যায়। দুঃখজনক হলেও সত্য বহুতল এই ভবনের অন্য ফ্ল্যাটগুলোতে বসবাসরতরা ঘটনার কোনো আভাস পর্যন্ত পায়নি। সঠিক তদন্ত ও খুনিরা আটক হলে হত্যার প্রকৃত কারণ জানা যাবে। ঘটনার পেছনে যে একটি পরিকল্পনা কাজ করেছে তা হত্যাকাণ্ডের ধরন দেখে বোঝা যায়।

খুনের ধরন ও খুনিদের নৃশংসতা থেকে যে মানসিক বিকৃতির পরিচয় মেলে সেটাই এই মুহূর্তের প্রধান ভাবনা। এটা মানতেই হবে যে আমাদের সমাজেরই কিছু মানুষ আজ এই বিকৃতির অভিশাপে অভিশপ্ত।

সম্প্রতি আমাদের নগর-জীবনে বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায় একের পর এক নৃশংস সব খুনের ঘটনা ঘটে চলেছে। এক্ষেত্রে সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি এবং পুলিশ দম্পতির বহুতল ভবনের নিজ ফ্ল্যাটে খুনের ঘটনা বিশেষভাবে উল্লেখ করা যায়। পুলিশের তদন্ত মতে, পুলিশ দম্পতি খুন হন নিজ কন্যার হাতে। যদিও সাংবাদিক দম্পতি খুনের ঘটনাটি এখনো উদঘাটিত হয়নি।

আলোচ্য ছয় খুনসহ এই ঘটনাগুলোতে সামাজিক অবক্ষয়ের যে চিত্র আমাদের সামনে ফুটিয়ে তোলে তা রীতিমতো ভয়ঙ্কর। এসব ঘটনার সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ করে তা রোধে দ্রুতই ব্যবস্থা নেওয়া দরকার বলে আমরা মনে করি।

নগর-জীবনে নতুন ধারায় মানুষ যেভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে তাতে অপরাধ সংগঠন হয়ে পড়েছে প্রায় বাধাহীন। আধুনিক বহুতল ভবন কালচারের যে নগরায়ন ঘটছে তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়নি। যার ফলে ‘বিচ্ছিন্ন ফ্ল্যাট জীবনে’ ঘটছে বাধাহীন মারাত্মক সব অপরাধ। বিপুল অর্থ বিত্তের সঙ্গে নতুন নগর-জীবন আমাদের চিরাচরিত মানবিক অনুভূতি ও গুণাবলী কেড়ে নিয়েছে। পাশাপাশি যে নতুন কসমোপলিটন জীবনধারার জন্ম দিচ্ছে সেখানে ঘটছে নানা বিকৃতির ক্রমবিস্তার। উল্লেখিত নৃশংসতা তারই প্রতিরূপ বলে আমরা মনে করি।