আব্দুল্লাহ শুভ, দ্য রিপোর্ট : প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি খ্যাত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য অজস্র গুণ বৃদ্ধি পায় যখন অতিথি পাখিরা আসে। তখন যেন এক অন্য রকম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। আর সেই মুখরিত পরিবেশ আরও উৎসবমুখর হয়ে ওঠে দর্শনার্থী ও শিক্ষার্থীদের উপভোগে।

প্রতি বছরের ন্যায় এবারও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকগুলোতে আসতে শুরু করেছে অতিথি পাখি। শিক্ষার্থীদের ঘুম ভাঙছে অতিথি পাখির স্নিগ্ধ কলতানে। বর্তমানে ক্যাম্পাসে নানা সংকটের মাঝে আনন্দের খোরাক তাদের এই আগমন।

সেপ্টেম্বর মাসে হিমালয়ের উত্তরের দেশ সাইবেরিয়া, চীন, মঙ্গোলিয়া, ভারত, ও নেপালে প্রচুর তুষারপাত হয়। তুষারপাতে টিকতে না পেরে সে সময়েই সবচেয়ে বেশি পাখি আসে নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়ার অঞ্চল বাংলাদেশে।

অতিথি পাখির উচ্ছ্বাস দেখতে ক্যাম্পাসে পর্যটকদের ভিড়ও বেড়ে গেছে। বেড়েছে বিদেশি পর্যটকদের আনাগোনাও। দর্শনার্থীদের আপ্যায়নে লেকের পাড়ে পিঠার পসরা নিয়ে বসেছে দোকানিরা। সব মিলিয়ে ক্যাম্পাস এক মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের লেকগুলোর মধ্যে জাহানারা ইমাম ও প্রীতিলতা হল সংলগ্ন লেক দুটিতে অতিথি পাখির আনাগোনা বেশি। লেকগুলোকে অতিথি পাখিদের জন্য অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। ক্যাম্পাসে অতিথি পাখির অবাধ বিচরণের জন্য নেওয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ। এর আওতায় ক্যাম্পাসের লেকের চারপাশে কাঁটা তারের বেড়া দেওয়া হয়েছে। লাগানো হয়েছে সতর্কতামূলক ব্যানার ও ফেস্টুন।

অতিথি পাখির আগমনে বিশ্ববিদ্যালয়ের লালপদ্মময় লেকগুলো যেন পূর্ণতা পায়। তাদের উচ্ছ্বাস ক্যামেরাবন্দি করতে সেভাবে খুঁজতেও হয় না, বরং তারাই যেন আপনা-আপনিই সুযোগ করে দেয়।

ক্যাম্পাসে সাধারণত সেপ্টেম্বর-অক্টোবর, নভেম্বর-জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি-এপ্রিল এ তিন সময়ে অতিথি পাখিরা আসে। আর মার্চের শেষ দিকে তারা আপন আপন আলয়ে ফিরে যায়।

জাবিতে সাধারণত দুই ধরনের অতিথি পাখির আগমন ঘটে। এক ধরনের পাখি ডাঙ্গায় ও অন্যরা পানিতে বিচরণ করে।

জাবিতে আসা পাখির মধ্যে বেশির ভাগই হাঁস জাতীয়। এদের মধ্যে ফ্লাইফেচার, সরালি, জলকুক্কুট, পচার্ড, জলপিপি, পাতারি, গার্নিগি, কোম্বডাক, পাস্তামুখী ও নর্দানপিন্টেল অন্যতম।

এ ছাড়া মানিকজোড়, কলাই, ছোটলগ্ন, নাকতা, খঞ্জনা, লাল গুরগুটি, বামুনিয়া হাঁস, কাস্তে চড়া ও ছোট জিরিয়ার অবাধ বিচরণ লক্ষ্য করা যায়।

গাজীপুর থেকে আসা দর্শনার্থী শুভ সাহার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শুনেছি এখানে অনেক অতিথি পাখি আসে। আজ দেখতে এলাম। খুব ভালো লাগছে। আবার আসার ইচ্ছা রইল।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মোস্তফা ফিরোজ দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘শীতের শুরুতে পাখি আসতে শুরু করেছে। ডিসেম্বরের শেষের দিকে পাখি মেলার আয়োজন করা হবে।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘ক্যাম্পাসে অতিথি পাখি যেন অবাধে বিচরণ করতে পারে সে জন্য সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে সবার সহযোগিতা চাই।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমি যখন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব নেই তখন ক্যাম্পাসের সবচেয়ে বড় আলোচনার বিষয় ছিল ক্যাম্পাসে পাখি না আসা। তখন সব লেকে মাছ চাষের জন্য লিজ দিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু পরবর্তীকালে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করার ফলে ক্যাম্পাসে উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হয়। তাই এ বছর অনেক বেশি পাখি এসেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু অসুস্থ মানুষের দ্বারা সৃষ্ট অস্থিরতাও পাখিদের এখানে আসার পথে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারেনি।’

(দ্য রিপোর্ট/এএস/আইজেকে/এনডিএস/নূরুল/ডিসেম্বর ২২, ২০১৩)