দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : ‘৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানিদের দোসর ফরিদপুর নগরকান্দার জাহিদ হোসেন খোকন নিরীহ ছয় গ্রামবাসীকে নিজ হাতে গুলি করে হত্যা করে। এ ছাড়া বাড়ি-ঘর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয় ও লুটপাট করে।’

সোমবার চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবিরের নেতৃত্বে গঠিত তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ রাষ্ট্রপক্ষের ১৭তম সাক্ষী ইয়াকুব মোল্লা ও ১৮তম সাক্ষী চুন্নু শেখ সাক্ষ্য দেওয়ার সময় একথা বলেন।

আদালতে সাক্ষ্য প্রদানকালে ইয়াকুব মোল্লা বলেন, ৭১ সালে ৩১ মে বেলা আনুমানিক তিনটা সাড়ে তিনটার দিকে আমি পুরাপাড়া বাজারে সদাই করতে গিয়ে দেখতে পাই যে, উত্তর দিকে থেকে খোকন ও অন্যান্য রাজাকার বেশ কিছু পাকিস্তানি আর্মি নিয়ে গ্রামের দিকে যায়। তাদের ভয়ে আমি পাট ক্ষেতে পালাই।

তিনি বলেন, পাট ক্ষেত থেকে দেখি তারা আমাদের বাড়িসহ গ্রামের অন্যান্য বাড়ি-ঘরে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিচ্ছে ও গুলির শব্দ শুনতে পাই। গুলির শব্দ থেমে গেলে দেড়-দুই ঘণ্টা পরে পাট ক্ষেত থেকে বের হয়ে বাড়ির দিকে যাই। বাড়িতে গিয়ে দেখি বাড়ি-ঘর আগুনে পোড়ানো। গ্রাম প্রায় জন শূন্য চারিদিকে আগুন দেখে আমি ভয়ে পালিয়ে যাই।

সাক্ষী বলেন, পরের দিন বাড়িতে ফেরার পরে গুরুদাস আমাকে জানায় যে, আমার চাচাতো দাদী ছোট খাতুনকে খোকন রাজাকার খালের পাড়ে নিয়ে রাইফেল দিয়ে নিজ হাতে গুলি করে হত্যা করে। ছোট খাতুনের ছেলে গফুর মোল্লা তার মায়ের লাশ মাটি চাপা দেয়। চুন্নু শেখ আমাকে জানায় তার চাচা রতন শেখকে হালটের পাশে খোকন রাজাকার নিজে গুলি করে হত্যা করে।

তিনি বলেন, আরো জানতে পারি যে, আমাদের গ্রামের বারেক মোল্লাকে মসজিদে কোরআন তেলাওয়াত করা অবস্থায় টেনে বের করে এনে তার ঘরের সামনে গুলি করে ও ঘরসহ তার লাশ আগুনে পুড়িয়ে দেয়। সফেজ উদ্দিন ও মানিক সরদারকেও পলায়নরত অবস্থায় খোকন গুলি করে হত্যা করে। তদের সবাইকে পরে মাটি চাপা দেওয়া হয়েছিল।

তিনি বলেন, আমি আরও জানতে পারি যে খোকন ও অন্যান্য রাজাকার এবং পাকিস্তানি আর্মিরা মিলে পাশের গ্রাম মেহেরদিয়া, কোদালিয়া, গোয়ালদীসহ অন্যান্য গ্রামে লুটপাট করে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় ও বহু নিরীহ নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা করে। আমি এই সকল ঘটনার বিচার চাই। তদন্ত কর্মকর্তার কাছে জবানবন্দি দিয়েছি। খোকনকে আমি চিনি। সে আজ (সোমবার) ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত নেই।

উক্ত এলাকার প্রসিকিউশনের ১৮তম সাক্ষী মো. চুন্নু শেখ (৫৭) একই ধরণের বক্তব্য উপস্থাপন করেন। পরে ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে রাষ্ট্রীয় খরচে নিয়োজিত আইনজীবী ওই দুই সাক্ষীকে জেরা শেষ করেন।

প্রসিকিউশনের ১৭ ও ১৮তম সাক্ষীর জবানবন্দি পেশ ও জেরা শেষে পরবর্তী সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণের জন্য মঙ্গলবার দিন ধার্য করেছে ট্রাইব্যুনাল।

৯ অক্টোবর জাহিদ হোসেন খোকনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের ১১টি অভিযোগে চার্জ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। পলাতক থাকায় খোকনের অনুপস্থিতেই তার বিচার ট্রাইব্যুনালে পরিচালিত হচ্ছে।

(দ্য রিপোর্ট/এসএ/এসবি/নূরুল/ডিসেম্বর ২৩, ২০১৩)