সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতায় ভয়াবহ ঝুঁকিতে পড়েছে দেশের তৈরি পোশাকশিল্পের ১ হাজার ৭৫৯টি কারখানা। যে কোনো সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে এই কারখানাগুলো। এমনই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন পোশাকশিল্প মালিক ও এ সংক্রান্ত সংগঠনের নেতারা।

এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইএবি) সভাপতি ও বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী দ্য রিপোর্টকে বলেন, গত ৩০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তৈরি পোশাকশিল্প। ইতোমধ্যে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর সদস্যভুক্ত প্রায় ৪ শতাধিক উদ্যোক্তা ব্যবসা ছেড়ে দেওয়ার জন্য আবেদন করেছে।

আব্দুস সালাম মুর্শেদী দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘বর্তমানে তৈরি পোশাকশিল্পের যে করুণ অবস্থা তা আগে কেউ ভাবেনি এবং চোখেও দেখেনি। চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা, স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের পোশাক কারখানায় অগ্নিকাণ্ড, শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধি ইত্যাদি ঘটনায় এই শিল্পের সমস্যা প্রবল আকার ধারণ করেছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘এ পরিস্থিতে বন্ধ হয়ে যেতে পারে ১ হাজার ৭৫৯টি পোশাক কারখানা। সরকারের সহযোগিতা ছাড়া পোশাকশিল্প ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না। দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থেই এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।’

তৈরি পোশাকশিল্প কারখানা ইয়ার্ন এপারেলসের কর্ণধার জাহান আক্তার সিমা জানান, ইউডির (ইউটিলাইজেশন ডিক্লারেশন) হিসাব অনুযায়ী, বিজিএমইএর অনুমোদিত গার্মেন্টের সংখ্যা ৫ হাজার ৫০০টিসহ প্রায় ৭ হাজার ৫০০। যার সঙ্গে জড়িত দেশের লাখ লাখ মানুষের ভাগ্য। ২০১০ সালে সর্বনিম্ন মজুরি নির্ধারণ করার পর থেকে শ্রমিক আন্দোলন, রাজনৈতিক আন্দোলন, তাজরীন ও রানা প্লাজায় হঠাৎ দুর্যোগের কারণে সময়মত শিপমেন্ট করতে পারে নি উদ্যোক্তারা। এদের ৩০ ভাগ ব্যাংক ঋণের দায়ে জর্জরিত হয়ে গাড়ি, বাড়ি, জমি, মেশিন ইত্যাদি বিক্রি করে বেতন দিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়ায় বিকল্প পথ খুঁজছে। এই পোশাক কারখানার সংখ্যা কমপক্ষে ১ হাজার ৭৫৯টি।’

বিজিএমইএর সহসভাপতি শহিদুল আজিম বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে চরম খারাপ অবস্থায় আছে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকরা। ৫ নভেম্বরের পর এখন পর্যন্ত তৈরি পোশাকশিল্পে উৎপাদন ক্ষতি হয়েছে সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা। আর অর্ডার কমেছে প্রায় ৪০ শতাংশ। কার্যাদেশ বাতিল, মূল্যছাড়, এয়ারফ্রেইট, জাহাজীকরণে বিলম্ব ও নাশকতায় পোশাকশিল্পের মোট ৪৫০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে।

তিনি আরো জানান, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সরকারের কাছে যে নগদ সহায়তা চাওয়া হয়েছে তা দেওয়া না হলে আগামী ১০ জানুয়ারির পর আবারো পোশাকশিল্পে অরাজক পরিস্থিতির উদ্ভব হবে। যা মোকাবেলা করা খুব কঠিন হয়ে পড়বে।

অন্যদিকে বিজিএমইএর একটি সূত্র জানিয়েছে বড় বড় ৩০টি পোশাক কারখানায় পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, গত ১৭ দিনে ১৬ লাখ ডলারের ডিসকাউন্ট দিতে হয়েছে বিদেশি ক্রেতাদের। বন্দরে সময়মত পোশাক না পৌঁছানোয় ১১ লাখ টাকার এয়ারশিপমেন্ট করতে হয়েছে। এ অবস্থায় নতুন বাজারের খোঁজ করছেন আন্তর্জাতিক ক্রেতারা।

সম্প্রতি শ্রমমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খোন্দকার মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করে বিদেশি ক্রেতারা। তারা বেশ উদ্বেগের সঙ্গে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাকশিল্পের ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার কথা জানিয়েছেন।

অতি সম্প্রতি হংকংয়ে অনুষ্ঠিত ক্রেতা সম্মেলনে ক্রেতারা বাংলাদেশ থেকে ৩০ শতাংশ পোশাক আমদানির আদেশ কমিয়ে আনার আলোচনা করেছে বলে জানিয়েছেন এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইএবি) সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী।

(দ্য রিপোর্ট/এআই/এইচএসএম/ডিসেম্বর ২৩, ২০১৩)