অনিশ্চিত রয়ে গেল ব্যাংকের নিরাপত্তা
সারা দেশের তফসিলি ব্যাংকের নিরাপত্তা জোরদারের জন্য গত ১৫ ডিসেম্বর পুলিশের মহাপরিদর্শককে চিঠি দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এক সপ্তাহেও এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এতে ব্যাংকগুলোর নিরাপত্তা ঝুঁকি থেকেই গেল।
সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতায় বিভিন্ন ব্যাংকে হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। হরতাল-অবরোধে নিরাপত্তার ভয়ে বন্ধ থাকে ব্যাংকগুলোর প্রধান ফটক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত দেশের ব্যাংকিং খাতে ৫১ হাজার ৯শ’ ২৫ কোটি টাকার ডিমান্ড ডিপোজিট (যে কোনো সময় উত্তোলন করা যায়) রয়েছে। সারা দেশের ব্যাংকের ১১ হাজার শাখায় টেলার, এটিএম, অনলাইন ব্যাংকিং এর মাধ্যমে প্রতিদিন এই অর্থ থেকে লেনদেন হয়।
এ ছাড়া টাইম ডিপোজিট (একটি নির্দিষ্ট মেয়াদান্তে উত্তোলন করা যায় এমন) রয়েছে ৫ লাখ ১২ হাজার ৬১৫ কোটি টাকা। ব্যাংকের বিনিয়োগ (অ্যাডভান্স, বিল, ইনভেস্টমেন্টস) রয়েছে আরো ৬ লাখ পাচঁ হাজার ৩০ কোটি টাকা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মাহফুজুর রহমান দ্য রিপোর্টকে বলেন, নিরাপত্তা চেয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে পুলিশের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে চিঠির সর্বশেষ অবস্থার বিষয়ে আমার জানা নেই। ব্যাংকগুলোর চিঠি দেওয়া সাপেক্ষে পরবর্তী সময়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের ডিসি (মিডিয়া) মো. মাসুদুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠির ব্যাপারে আমার কিছু জানা নেই।
কবে নাগাদ ব্যাংকের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হবে এ প্রশ্নের জবাবে মাসুদুর রহমান বলেন, ‘আমার কাছে কোনো দিকনির্দেশনা আসেনি। আপনি পুলিশ হেড-কোয়ার্টারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।’
পুলিশ হেড-কোয়ার্টারের তথ্য কর্মকর্তা কামরুল আহসান দ্য রিপোর্টকে বলেন, এই বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, সারা দেশে ব্যাংকগুলোর ১১ হাজার শাখা রয়েছে। এসব শাখায় দুইজন করেও যদি পুলিশ দেওয়া হয়, তাহলে অন্তত ২২ হাজার পুলিশ সদস্য প্রয়োজন। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে যা অনেকটা অসম্ভব।
এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জাআজিজুল ইসলাম দ্য রিপোর্টকে বলেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠানে যে কোনো ধরনের হামলা নিন্দাযোগ্য। এটি প্রতিরোধে সরকারের পক্ষ থেকে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। অন্যথায় গ্রাহক পর্যায়ে যদি অনাস্থা সৃষ্টি হয়, তবে এতে সার্বিক অর্থনীতিতে নীতিবাচক প্রভাব পড়বে। এই কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তরফ থেকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।
এ বিষয়ে বিশিষ্ট ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদ মামুনুর রশীদ দ্য রিপোর্টকে বলেন, রাজনৈতিক অস্থিশীলতার কারণে সার্বিক অর্থনীতি এমনিতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তার ওপর ব্যাংকিং খাতে হামলা হলে গ্রাহকরা আস্থার সংকটে পড়বে| সরকার যদি এই বিষয়ে নতুন কোনো সিদ্ধান্ত না নেয় তবে বাজারে নেতিবাচক বার্তা পৌঁছাবে।
মতিঝিলের ব্যাংক পাড়া ঘুরে দেখা যায়, অন্য অবরোধের দিনের মতো রবিবারও ব্যাংকগুলোর প্রধান ফটক বন্ধ ছিল। কোথাও পুলিশি নিরাপত্তা চোখে পড়েনি।
এ বিষয়ে সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের উপ-ব্যবস্থাপক আবদুর রব মিয়া দ্য রিপোর্টকে বলেন, পুলিশি নিরাপত্তার ব্যাপারে আমার কিছু জানা নেই। নিজস্ব নিরাপত্তারক্ষী দিয়ে ব্যাংকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করছি।
ডাচ-বাংলা ব্যাংকের মতিঝিল শাখার ব্যবস্থাপক আবদুল্লাহ আল কাফি বলেন, পুলিশি নিরাপত্তার বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। আমরা এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো দিকনির্দেশনা পাইনি।
নিরাপত্তার বিষয়ে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের দিলকুশা শাখার ব্যবস্থাপক সাইফুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠির বিষয়ে শুনেছি। তবে পুলিশের তরফ থেকে আমাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করা হয়নি।
প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতায় বিভিন্ন ব্যাংকে হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে ১৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের তরফ থেকে পুলিশ মহাপরিদর্শককে চিঠি দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চিঠিতে বলা হয়, সম্প্রতি বিরাজমান অস্থিরতা ও নাশকতার ফলে দেশে কার্যরত ব্যাংকসমূহে বিভিন্ন ধরনের হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের মতো অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটছে। এ ধরনের ঘটনা ব্যাংকসমূহের নিরাপত্তার জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এ সহিংসতা একদিকে সাধারণ গ্রাহক ও ব্যবসায়ীদের নিরবচ্ছিন্ন ব্যাংকিং সেবা প্রদানে বাধা সৃষ্টি করছে, অপরদিকে ব্যাংক কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের মধ্যে বিশেষ উদ্বেগ সৃষ্টি করছে। ব্যাংকের স্থাপনা সুরক্ষাসহ ব্যাংকসমূহের কার্যক্রম নির্বিঘ্নে ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা প্রয়োজন।
এমতাবস্থায় দেশে কার্যরত ব্যাংকসমূহের প্রধান কার্যালয় ও শাখার সুরক্ষাসহ ব্যাংকিং কার্যক্রম নির্বিঘ্ন ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করাসহ বিদ্যমান নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে পুলিশের মহাপরিদর্শককে অনুরোধ জানানো হচ্ছে।
(দ্য রিপোর্ট/এএইচ/এইচএসএম/ডিসেম্বর ২৩, ২০১৩)