হলফনামা প্রকাশে আওয়ামী লীগের আপত্তি!
গত কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক চলমান দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীরা যে হলফনামা দাখিল করেছেন তার আলোকে কারো কারো সম্পদের হিসাব প্রকাশ করছে। এই সব হিসাবে ক্ষমতাসীন জোটের যেসব প্রার্থী নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হলফনামায় সম্পদের যে হিসাব দিয়েছিলেন তার থেকে এবারের হিসাবে সম্পদের পরিমাণ অস্বাভাবিক হারে বেশি দেখা যায়। এতে সরকারি দলকে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হচ্ছে। পত্রিকাগুলো নির্বাচন কমিশনের বরাত দিয়ে হলফনামায় দেওয়া সম্পদের তুলনামূলক চিত্রটি তুলে ধরায় আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশনে গিয়ে এ রকম তথ্য দান থেকে বিরত থাকার জন্য কমিশনকে অনুরোধ জানিয়েছে। সে কারণেই নির্বাচন কমিশন এ ব্যাপারে আইন খতিয়ে দেখার তাগিদ অনুভব করছে।
যদিও তথ্য অধিকার আইন অনুযায়ী গণপ্রতিনিধিদের সম্পদের হিসাব প্রকাশ না করার কোনো বিধান আছে বলে আমাদের জানা নেই। সে ক্ষেত্রে যদি সরকারি দলের অনুরোধ মানতে কমিশন নির্বাচনী আইনকে অজুহাত হিসেবে দেখাতে চায় তাহলে তারা আরেক দফা নিজেদের বিতর্কিত করবে।
নবম সংসদ নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছিলেন তাদের মধ্যে যারা এবারও প্রার্থী হয়েছেন নির্বাচন কমিশনের হলফনামায় শুধু তাদের সম্পদের হিসাব রয়েছে। গত পাঁচ বছরে ক্ষমতায় থেকে বিভিন্ন পদ-পদবী ব্যবহার করে মহাজোটের প্রধান শরিক আওয়ামী লীগসহ শরিকদের একটি বড় অংশ অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন হলফনামা তার একটি ক্ষুদ্র দালিলিক প্রমাণ মাত্র। এই ছোট্ট দলিলটিকে তারা ভয় পাচ্ছে। তাই নিজেদের দাখিলকৃত হলফনামা প্রকাশ করতে সরকারি দল আজ জনগণের জানার অধিকার খর্ব করতে তৎপর। এটা শুধু আওয়ামী লীগ বা মহাজোটকে নয়, আমাদের পুরো রাজনৈতিক পরিমণ্ডলকেই প্রশ্নবিদ্ধ করবে।
আমরা বিশ্বাস করতে চাই যে, এই হলফনামায় দাখিলকৃত হিসাবের বাইরে প্রার্থী বা তার পরিবারের আর কোনো সম্পদ নেই। আমরা আরো বিশ্বাস করতে চাই যে, হলফনামায় বর্ণিত সমস্ত সম্পদই তারা বৈধ ও স্বচ্ছ পথে অর্জন করেছেন। কিন্তু এটা ঢাকার প্রয়াস আমাদের সেই বিশ্বাসকে দুর্বল করে দিচ্ছে। তাদের এই প্রয়াস জনমনে রাজনীতিবিদদের সম্পর্কে নানা প্রশ্নের জন্ম দেবে। এমন কি একতরফা নির্বাচন করার এই প্রয়াসের পিছনে তাদের অবৈধ অর্জন রক্ষার বাসনা কাজ করছে বলেও জনগণ বিশ্বাস করতে শুরু করবে।