দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : একপেশে নির্বাচন করতে গিয়ে কুটনৈতিক চাপের মুখে পড়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। এ চাপ কাটাতে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির সঙ্গে সংসদ নির্বাচন নিয়ে সমঝোতা করার কৌশল নিয়েছে ক্ষমতাসীন দলটি। জানুয়ারির ৫ তারিখের ভোটের পর গঠিত সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে খুব শিগগিরই একাদশ সংসদ নির্বাচন করা হবে এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিএনপিকে বাগে আনার কৌশল নিয়েছে দলটি। আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এ সব তথ্য জানা গেছে।

এদিকে সরকার ও আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা কূটনৈতিক চাপকে প্রকাশ্যে গুরুত্ব না দিলেও ভেতরে ভেতরে এ নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন।

আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচন পরিচালনা কমিটির শেষ বৈঠকে দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কূটনীতিক চাপের বিষয়ে তার উদ্বেগের কথা জানান। কোনোভাবেই আন্তর্জাতিক মহলকে আয়ত্বে আনা যাচ্ছে না এমন আভাসও দেন তিনি। তবে আন্তর্জাতিক মহলের যত তৎপরতাই থাকুক দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করেই নতুন করে সব সামাল দেওয়ার বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে, ওই বৈঠকে এমন ধারণাও দিয়েছেন শেখ হাসিনা।

সম্প্রতি রাজধানীতে একটি আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমঝোতায় এলে স্বল্প সময়ে ১১তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করার যে ঘোষণা দিয়েছেন সেটা আন্তর্জাতিক মহলকে খুশি করার জন্যই।

আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা বলছেন, আপাতত চাপ সামাল দেওয়ার অংশ হিসেবে শেখ হাসিনা সমঝোতার ভিত্তিতে ১১তম সংসদ নির্বাচন স্বল্প সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন। এর মর্মার্থ বিদেশি চাপ থেকে মুক্ত হওয়া। পাশাপাশি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নির্বিঘ্ন করা। যাতে এই নির্বাচনে বিদেশি শক্তিগুলোর সহযোগিতা থাকে।

তবে চাপ থাকলেও নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রাখতে ভিন্ন কৌশল গ্রহণ করেছেন দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। রাজধানীতে অপর একটি অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘দেশি-বিদেশি কোনো শক্তিকে ভয় করি না আমরা। বুকে সাহস নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।’

আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কমনওয়েলথ, যুক্তরাষ্ট্র একে একে দশম জাতীয় নির্বাচনে পর্যবেক্ষক না পাঠানোর ঘোষণাই সরকারকে অনেকটা চাপে ফেলে দিয়েছে। কৌশল ছিল আগামী ৫ জানুয়ারি দেশে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া নির্বাচন নিয়ে দেশের ভেতরে বিভিন্ন প্রশ্ন থাকলেও বিদেশি পর্যবেক্ষক দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে আন্তর্জাতিক মহলে এই নির্বাচনকে বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখা। প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে কুটনীতিক সম্পর্ক ভালো থাকায় এই মুহূর্তে কিছুটা স্বস্তি কাজ করলেও অন্যান্য শক্তিধর দেশগুলোর অবস্থান বেকায়দায় ফেলছে সরকারকে। অসহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব পোষণ করে চলেছে শক্তিধর দেশগুলো।

বনানী কবরস্থানে প্রয়াত নেতা আব্দুর রাজ্জাকের সমাধিতে সোমবার সকালে ফুলেল শ্রদ্ধা জানানো শেষে তোফায়েল আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘পর্যবেক্ষক আসুক না আসুক, নির্বাচন হবেই।’

কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জাতিসংঘের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ফর্নান্দেজ তারানকো সফরেও বাংলাদেশের সমস্যা সমাধানে কোনো অগ্রগতি না দেখায় আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সর্বশেষ যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর করতে গিয়ে শক্তিধর রাষ্ট্র আমেরিকার ‘চক্ষুশূল’ হতে হয়েছে সরকারকে। আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা এসব তথ্য জানান। একমাত্র প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত ছাড়া অন্য দেশগুলোর বিভিন্ন পদক্ষেপ সরকারের সঙ্গে অসহযোগিতাপূর্ণ অবস্থানই স্পষ্ট করছে। নির্বাচনে পর্যবেক্ষক না পাঠানো ও বিজয় দিবসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কর্মকর্তাদের স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে না যাওয়া, সরকারের প্রতি চাপ ও অসহযোগিতাপূর্ণ আচরণেরই বহিঃপ্রকাশ।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ফারুক খান বলেন, ‘আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক দল আসছে না এর কারণ দু’টি। প্রথমত এ নির্বাচনে ১৫৪টি আসনে বিনা প্রতিদ্ধন্ধিতায় প্রার্থী বিজয়ী হয়ে গেছে। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা হবে না। তাই এ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করার দরকার নাই। দ্বিতীয়টি হচ্ছে বিএনপি-জামায়াতের নাশকতা। এ কারণে তারা ‘সিকিউরিটি প্রবলেম’ মনে করছে।

(দ্য রিপোর্ট/এইউএ/আইজেকে/ ডিসেম্বর ২৪, ২০১৩)