মুহম্মদ আকবর, দ্য রিপোর্ট : ওস্তাদ গৌরাঙ্গ আদিত্য বাংলাদেশের যাত্রাশিল্পের এক কিংবদন্তির নাম। শিল্প সাধনার স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন বহু পুরস্কার ও সম্মাননা। সম্প্রতি তিনি অমলেন্দু বিশ্বাস স্মৃতিপদক পেয়েছেন। সম্প্রতি দ্য রিপোর্টের সঙ্গে বর্ণাঢ্য জীবনের নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেন তিনি। সাক্ষাৎকারের উল্লেখযোগ্য অংশ তুলে ধরা হলো-

দ্য রিপোর্ট : আপনি যাত্রাপালার সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করলেন কিভাবে?

গৌরাঙ্গ আদিত্য : এটা বলতে গেলে রূপকথার গল্পের শুরুর মতোই হবে। সেই সত্তর বছর আগের কথা বাবা রমেশ চন্দ্র শীলের কাছে গানের হাতেখড়ি হয়। পরবর্তীতে ওস্তাদ বীরেন চন্দ্র গোস্বামী, ওস্তাদ বিজয়কৃষ্ণ ভট্টাচার্য এবং ওস্তাদ গোপাল দত্তের কাছে উচ্চাঙ্গসঙ্গীতে তালিম নেই। কিশোর বয়সে কৃষ্ণলীলায় নদের নিমাই চরিত্রে অভিনয়ের মধ্যে দিয়ে আমার যাত্রাজীবন শুরু। সেই সময়ে পূর্ব পাকিস্তানে নবরঞ্জন অপেরা, বুলবুল অপেরা, গণেশ অপেরা, বাবুল অপেরা এবং বাংলাদেশে আবারও নবরঞ্জন অপেরা, চারণিক নাট্যগোষ্ঠীর, কৃষ্ণকলি অপেরা, বঙ্গশ্রী অপেরা প্রভৃতি যাত্রাদলে তিন শতাধিক যাত্রাপালায় অভিনয় করেছি।

দ্য রিপোর্ট : আপনার অভিজ্ঞতার আলোকে যাত্রাশিল্পে বাংলাদেশের সম্ভাবনার কথা বলুন?

গৌরাঙ্গ আদিত্য : বর্তমানে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে এবং সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের প্রচেষ্টায় যাত্রাশিল্পীদের নিবন্ধনের আওয়তায় আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা খুবই ইতিবাচক। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যলয়ের নাট্যকলা বিভাগে যাত্রা বিষয়ের পাঠদান করা হচ্ছে। এসবই যাত্রাশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য ভাল উদ্যেগ।

দ্য রিপোর্ট : সম্প্রতি অমলেন্দু বিশ্বাস স্মৃতি পদক পেয়েছেন, আপনার ‍অনুভূতি কেমন?

গৌরাঙ্গ আদিত্য : অনুভূতি প্রকাশের কী আছে? সারাজীবন তো এই একটা কাজই করেছি। বিনিময়ে কোন কিছু পাওয়ার প্রত্যাশা ছিল না আমার। মানুষকে আনন্দ দেওয়ার জন্য করেছি এবং নিজে আনন্দ পেয়েছি। মোহ ত্যাগ করে কাজ করে গেলে স্বীকৃতি আসবেই- এটা মনে প্রাণে বিশ্বাস করি।

দ্য রিপোর্ট : যতটুকু জানি উচ্চাঙ্গসঙ্গীতে আপনার বেশ দখল আছে। সমকালের জনপ্রিয় অনেক শিল্পীরই আপনার কাছে হাতেখড়ি হয়েছে। এ প্রসঙ্গে কিছু বলুন?

গৌরাঙ্গ আদিত্য : আমি আশাবাদী মানুষ। স্বপ্ন দেখতে ভালবাসি। বিশাল জনগোষ্ঠীর কিছু মানুষ প্রতিক্রিয়াশীল এবং সহিংস অপকর্মের সঙ্গে সম্পৃক্ত। কিন্তু মুক্তচিন্তার অনেক মানুষ শেকড় সন্ধানী, দেশের প্রতি দায়বদ্ধ থেকে কাজ করে যাচ্ছে। আমার তো মনে হচ্ছে অচিরেই উচ্চাঙ্গসঙ্গীতের একটা বড় পরিসর এদেশে তৈরি হবে।

দ্য রিপোর্ট : জীবনের কোন স্বপ্নটি পূরণ হয়নি?

গৌরাঙ্গ আদিত্য : আমি গানটা শিখতে পারিনি। এই স্বপ্নই আমার পূরণ হয়নি। এটা আমার জীবনের জন্য খুবই বেদনার কথা। সাধনা করে যাচ্ছি কিন্তু মনে হয় কিছুই পারলাম না। হিন্দু ধর্মে পুনঃজন্মে বিশ্বাস আছে। যদি আবার জন্ম নেই তাহলে বিধাতার কাছে চাইব তিনি যেন আমায় সঙ্গীতশিল্পী করে পাঠান। পুনঃজন্মে সঙ্গীতশিল্পী হতে চাই।

দ্য রিপোর্ট : অন্যের কাছে আপনার প্রত্যাশা কী?

গৌরাঙ্গ আদিত্য : অন্যদের কাছে আমার প্রত্যাশা, ভাল কাজ যদি না করেন, তবে খারাপ কাজও করবেন না।

(দ্য রিপোর্ট/এমএ/এমসি/শাহ/ডিসেম্বর ২৪, ২০১৩)