‘সাতক্ষীরাকে মিনি পাকিস্তান বানানোর অপচেষ্টা চলছে’
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট আবেদ খান বলেছেন, ‘রাষ্ট্রের মধ্য আরেকটা রাষ্ট্র গড়ে তোলার অপচেষ্টা করছে জামায়াত-শিবির। ইসলামী ব্যাংকের অর্থায়নে সাতক্ষীরাকে মিনি পাকিস্তান বানানোর চেষ্টা করছে ধর্মভিত্তিক এ রাজনৈতিক সংগঠনটি।’
২২ ও ২৩ ডিসেম্বর সাংবাদিক আবেদ খানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ‘অবরুদ্ধ সাতক্ষীরার’ কলারোয়া, দেবহাটা, কালীগঞ্জ ও আশাশুনির বুধহাটা পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে মঙ্গলবার আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এ মন্তব্য করেন তিনি।
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে ‘বাংলাদেশ রুখে দাঁড়াও’ নামক একটি সামাজিক সংগঠন এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।
আবেদ খান বলেন, ‘আমরা এলাকাবাসী ও প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি, রাষ্ট্রের মধ্য আরেকটা রাষ্ট্র গড়ে তোলার অপচেষ্টা করছে জামায়াত-শিবির। তারা সাতক্ষীরাকে মিনি পাকিস্তান বানানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে জামায়াত-শিবির পরিকল্পিতভাবে ওই এলাকায় একটি অবস্থানও গড়ে তুলেছে। ইসলামী ব্যাংকের অর্থায়নে তারা কাজ করছে। এছাড়া ইবনে সিনা হাসপাতালও প্রতিষ্ঠা করেছে।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সংখ্যালঘু ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর যেভাবে হামলা হচ্ছে, তাতে আওয়ামী লীগের উপর মহল থেকে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। কারণ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে সাতক্ষীরার নেতাকর্মীদের অন্তর্কোন্দল রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের অনুসন্ধানে জানা গেছে, সাতক্ষীরায় যে জঙ্গি কার্যক্রম চলছে তার পেছনে রয়েছে ইসলামী ব্যাংকসহ বিভিন্ন ইসলামী বাণিজ্যিক এবং সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের অর্থায়ন ও সক্রিয় সহযোগিতা।’
আক্রান্তদের পাশে দাঁড়ানো, সাম্প্রদায়িক সহিংসতা প্রতিরোধ, গণমাধ্যমের বর্তমান দায়িত্বশীল ভূমিকা অব্যাহতের পাশাপাশি প্রত্যন্ত অঞ্চলের ঘটনাগুলোকে তুলে আনা, যুদ্ধাপরাধী ও সহিংস দল হিসেবে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ, যুদ্ধাপরাধের বিচার ত্বরান্বিত এবং রায় দ্রুত কার্যকর, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মাধ্যমে এ ফ্যাসিস্ট শক্তিকে পরাভূত করার দাবি জানান আবেদ খান।
গণমাধ্যমের উদ্দেশে ‘বাংলাদেশ রুখে দাঁড়াও’ এর আহ্বায়ক সুলতানা কামাল বলেন, ‘আমাদের করণীয় যেমন সীমিত, তেমনি আপনাদের (গণমাধ্যমকর্মী) করণীয়ও সীমিত। কিন্তু আমরা এবং আপনারা যদি হাত মিলায় তবে সব সহিংসতা প্রতিরোধে জোরদার প্রভাব ফেলতে পারব।’
সুলতানা কামাল বলেন, ‘সারাদেশে বিশেষ করে সাতক্ষীরায় জামায়াত-শিবিরের অমানবিক নির্যাতন সহ্য করছে স্থানীয়রা। একাত্তরে যেভাবে পাকবাহিনী ও তাদের দোসররা এ দেশে হত্যা, ধর্ষণ, লুটতরাজ ও নির্যাতন চালিয়েছে, তেমনি জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা এখন সাতক্ষীরায় সহিংসতা চালাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘বিশেষ করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা নির্যাতন ও খুনের শিকার হচ্ছেন বেশি । কিন্তু এ ব্যাপারে কোনো মহল থেকেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। আমাদের সবাইকে নৈরাজ্য প্রতিরোধে এগিয়ে আসতে হবে।’
মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানের কথা উল্লেখ করে সুলতানা বলেন, ‘একাত্তরে মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানের কথা আমরা ভুলতে পারি না। তাদের অবদানের যে দায়বদ্ধতা আমাদের কাঁধে রয়েছে, সে দায়বদ্ধতা থেকেই পাকিস্তানের দোসরদের বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে।’
এ সময় প্রতিনিধি দলের অন্য সদস্য মুক্তিযোদ্ধা, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য জিয়াউদ্দিন তারিক আলী, তথ্য কমিশনার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. কাবেরী গায়েন, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জিয়াউর রহমান, নাট্যশিল্পী রোকেয়া প্রাচী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
(দ্য রিপোর্ট/এসআর/এনডিএস/নূরুল/ডিসেম্বর ২৪, ২০১৩)