সরাইলে প্রভাবশালী জালালের হাতে জিম্মি কয়েকটি পরিবার
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সংবাদদাতা : জেলার সরাইল উপজেলার ভাটি অঞ্চলে নদীর তীরবর্তী রানীদিয়া গ্রামের এক প্রভাবশালীর অত্যাচার-নির্যাতনে জিম্মি কয়েকটি পরিবার। একাধিকবার সালিশ-দরবার এমনকি মামলা-মোকদ্দমা করেও প্রভাবশালী জালাল আবেদীন এবং তার তিন পুত্রের কবল থেকে রেহাই পাচ্ছে না পরিবারগুলো।
পৈত্রিক সম্পত্তি এককভাবে ভোগদখলের অভিপ্রায়ে অন্য ওয়ারিশদের বছরের পর বছর ধরে নাজেহাল করতে করতে এলাকায় মূর্তিমান ত্রাসে পরিণত হয়ে উঠেছেন এই জালাল আবেদীন। তার ভয়ে আশপাশের লোকজনও মুখ খুলতে নারাজ।
সরেজমিনে এলাকায় গিয়ে গ্রামের মরহুম হাজী তমিজ উদ্দিনের ওয়ারিশগণসহ আশপাশের লোকদের কাছ থেকে জানা গেছে এসব তথ্য।
হাজী তমিজ উদ্দিনের মেয়ে আলহাজ্ব আনোয়ারা হক, রেহেনা বেগম, নাতি জিয়াউদ্দিন (মরহুম ডা. জয়নাল আবেদীনের ছেলে), নাতনি পারভীন বেগমসহ (মরহুম আউয়াল উদ্দিনের কন্যা) আশপাশের বাড়ির লোকজন জানান, প্রায় ৪০ বছর আগে স্ত্রী, চার পুত্র, দুই কন্যার মাঝে ৫০ কানিরও অধিক সম্পত্তি রেখে হাজী তমিজ উদ্দিন মারা যান। বণ্টননামার মাধ্যমে তমিজ উদ্দিনের ওয়ারিশগণের ন্যায্য হিস্যা পাওয়ার কথা থাকলেও সু-চতুর জালাল আবেদীন প্রায় ২০ বছর আগেই পৈত্রিক সম্পত্তির অর্ধেকেরও বেশি নিজের জিম্মায় নিয়ে নেন।
এই নিয়ে ভাইদের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। এরই মাঝে অবিবাহিত অবস্থায় সর্বকণিষ্ঠ গিয়াস উদ্দিন এবং দুই কন্যা রেখে তার বড় ভাই আউয়াল উদ্দিন মারা যান। এরপর আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন জালাল আবেদীন। বড় ভাই ডা. জয়নাল আবেদীন, বোন রেহেনা বেগম ও মৃত ছোট ভাই আউয়াল উদ্দিনের কন্যাদ্বয়ের উপর চালাতে থাকেন অন্যায়-অত্যাচারের স্টিমরোলার। বাধা দিতে গিয়ে কয়েক দফা মারধরের শিকার হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেন গর্ভধারিণী মা। যার পরিণতিতে পরবর্তী সময়ে মৃত্যু ঘটে ওই বৃদ্ধার। দেড়বছর আগে বড় ভাই ডা. জয়নাল আবেদীন মারা যাওয়ার পর ভাতিজাগণ ও ছোট বোন রেহেনার পরিবারের উপর শ্যেন দৃষ্টি পড়ে দখলবাজ জালালের। দফায় দফায় চালাতে থাকেন অত্যাচার-নির্যাতন। কয়েক মাস আগে ছোট বোন রেহেনার দীর্ঘদিন ধরে ভোগদখলে থাকা বাড়ির দক্ষিণ দিকে অনতিদূরে ১৯০১, ১৯০০ দাগের ৩৬ শতক ফসলি জমি জোরপূর্বক দখলের অপচেষ্টায় লিপ্ত হন জালাল গংরা।
১৩ ডিসেম্বর রেহেনা বেগম নিজের ওই জমিতে ধান রোপণের পর জালাল গং রোপিত ধান ধ্বংস করে ফেলে এবং জমির ধারে-কাছে গেলে রেহেনা বেগমকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। দুদিন পর ১৬ ডিসেম্বর রেহেনা বেগম বড় ভাইকে এসব জিজ্ঞাসা করাতেই পিতা-পুত্র চারজন মিলে হামলা চালায়। এসময় ফুফু রেহেনাকে রক্ষায় এগিয়ে আসায় জালাল গং জিয়াউদ্দিনকেও মারধর করে। আহতাবস্থায় জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাশেষে রেহেনা বেগম বাদী হয়ে হামলাকারী জালাল আবেদীন, তার তিন পুত্র রেজাউল হাসান, দেলোয়ার হোসেন, কামাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে সরাইল থানায় লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন।
এসব বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত মোঃ জালাল আবেদীনের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে (০১৭১৮০৪২১৬৪) একাধিকবার যোগাযোগ করেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সরাইল থানার পুলিশ পরিদর্শক মোঃ আলী আরশাদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, উভয়পক্ষের লিখিত অভিযোগ পেয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে নিয়ে সরেজমিনে যাবার পর উভয়পক্ষই নিজেদের মধ্যে বিষয়টি আপোস নিষ্পত্তি করতে সম্মত হয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যান দায়িত্ব নেওয়ায় এই বিষয়ে আমরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা থেকে আপাতত বিরত আছি।
(দ্য রিপোর্ট/এইচএমএস/এমএআর/নূরুল/ডিসেম্বর ২৪, ২০১৩)