দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : সংসদ উপনেতা ও কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সমন্বয়ক সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী বলেছেন, ‘যারা দেশবিরোধী কার্যক্রমে লিপ্ত তাদের সঙ্গে কোনো আপোস নয়। যারা আল্লাহর নামে মানুষ হত্যা করে তারা মানুষ নয়, শয়তান।’

কেন্দ্রীয় ১৪ দলের পূর্বঘোষিত প্রতিবাদ সমাবেশে মঙ্গলবার এসব কথা বলেন অনুষ্ঠানের সভাপতি সৈয়দা সাজদো চৌধুরী। প্রতিবাদ সমাবেশটি বিকেল সাড়ে তিনটায় শুরু হয়ে সাড়ে পাঁচটায় শেষ হয়। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সাজেদা চৌধুরী বলেন, ‘প্রয়োজনে আরেকটি মুক্তিযুদ্ধ হবে। এ দেশ থেকে স্বাধীনতা বিরোধীদের নিঃশেষ করতে হবে।’

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এ সদস্য বলেন, ‘আমার নেতা বঙ্গবন্ধু এ দেশের মানুষের জন্য ১৪টি বছর জেল খেটেছেন। বাংলার মানুষ তখন নৌকায় উঠে নিজেদের সমর্থন জানিয়েছেন। এবার আবারও সময় এসেছে, নৌকা মার্কায় সমর্থন জানিয়ে শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করুন।’

আমির হোসেন আমু বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া যদি যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার চেষ্টা করেন তাহলে তাকেও সেই বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। পাকিস্তান কাদের মোল্লার ফাঁসির রায়ের বিরোধিতা করেছে। এবার প্রমাণ হয়েছে যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে আমাদের উদ্বেগ সঠিক।’

তিনি বলেন, ‘দেশ ও দুনিয়ার চোখ খুলে গেছে। ’৭১-এর চিত্র ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে জামায়াত-শিবির। তাদের রুখে দিতে হবে। বিকল্প কিছু নেই।’

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি, ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন নির্বাচন কেউ পছন্দ করে না। আমরাও চাই না। যদি প্রতিপক্ষ না আসে তাহলে কী করার আছে? বিদেশি পর্যবেক্ষক না এলেও সমস্যা নেই। বাংলাদেশের জনগণই এখানে পর্যবেক্ষণ করবেন।’

জাসদ সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘এখনকার সংগ্রাম এসপার-ওসপারের সংগ্রাম।’

‘তিনটি কাজ আমাদের করতে হবে। সংবিধান সমুন্নত রাখা, নির্বাচন করা এবং জঙ্গিবাদ দমন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা এসব কাজ করে যাচ্ছি। আর এতে বাধা দিচ্ছেন খালেদা জিয়া’ বলেন তিনি।

বিএনপি প্রধানকে উদ্দেশ্ করে এ মন্ত্রী বলেন, ‘গায়ের জোরে কোনো দাবি আদায় করা যাবে না।’

সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, ‘বিরোধী দল কায়দা বদলাইছে। ভিডিও কল ছেড়ে এখন নজরুল ইসলাম খানকে এনেছেন। তিনি সংসদ ডেকে এখনো সমস্যা সমাধানের সময় আছে বলেছেন। কিন্তু কেন সংসদ ডাকতে হবে? আমাদের নেত্রী তো সময় দিয়েছেন। আপনারা তা গ্রহণ করেননি।’

বর্ষীয়ান এ পার্লামেন্টারিয়ান কৌতুকের সুরে বিএনপির উদ্দেশে বলেছেন, ‘আপনারা কি জামায়াতকে তালাক দিয়েছেন? অস্ত্র ছেড়েছেন? যুদ্ধাপরাধীদের ত্যাগ করেছেন? যদি করেন তাহলে আলোচনা হতে পারে।’

সমাবেশে উপস্থিত রাশেদ খান মেননকে বন্ধু উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর এ সদস্য বলেন, ‘আগে বলেছিলাম বাঘে ধরলে বাঘে ছাড়ে, শেখ হাসিনা ধরলে শেখ হাসিনা ছাড়ে না। যারা প্রথমবার মন্ত্রিত্ব নেননি তারা ঠিকই দ্বিতীয়বার মন্ত্রিত্ব নিয়েছেন। তাই বিদেশি বন্ধুদের উদ্দেশে বলি, যদি ভাবেন শেখ হাসিনাকে চাপ দিয়ে কোনো কাজ আদায় করবেন তাহলে সেটা ভুল হবে। দেশের স্বার্থের বাইরে আমার মহান নেত্রীর কোনো পদক্ষেপ নেই। তাই চাপ দিয়ে কাজ হবে না।’

এ সময় সাবেক এ মন্ত্রী কমনওয়েলথ, জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আমেরিকার নির্বাচনী পর্যবেক্ষক বিষয়ে কটাক্ষ করে বলেন, ‘অন্য দেশের নির্বাচনে আপনাদের জিগায় না। এ দেশে না আসলেও কিছু হবে না।’

১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘৫ জানুয়ারি নির্বাচনের মাধ্যমে শেখ হাসিনা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হবেন। কোনো ষড়যন্ত্রই তা রুখতে পারবে না।’

তিনি বলেন, ‘বিএনপি কী আল্টিমেটাম দেবে? আমরাই আল্টিমেটাম দিচ্ছি, জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ না করলে আপনাদেরকেই নিশ্চিহ্ন করা হবে।’

১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘কথায় আছে মানুষ তার প্রথম প্রেম ভুলতে পারে না। পাকিস্তানের সেই প্রেম খালেদা জিয়াও ভুলতে পারছেন না। কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় নিয়ে পাকিস্তান প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে কিন্তু খালেদা জিয়া কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি।’

তিনি বলেন, ‘৪২ বছর পর পাকিস্তান আবারও হুমকি দিয়েছে। এদেরকে আবার শিক্ষা দিতে হবে।’

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবীর নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক এবং সাবেক খাদ্যমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক। মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ আজিজ, সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম।

কেন্দ্রীয় ১৪ দলের নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা দিলীপ বড়ুয়া, গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক নূরুর রহমান সেলিম, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের আহ্বায়ক ডা. ওয়াজেদ আলী খান, সাম্যবাদী দল ঢাকা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক হারুন চৌধুরী প্রমুখ।

(দি রিপোর্ট/বিকে/এনডিএস/নূরুল/ডিসেম্বর ২৪,২০১৩)