দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত পলাতক বিএনপি নেতা জাহিদ হোসেন খোকনের বিরুদ্ধে ক্যামেরা ট্রায়ালের মাধ্যমে এক নারী সাক্ষী তার সাক্ষ্য পেশ করেছেন। ক্যামেরা ট্রায়ালে সাক্ষ্যগ্রহণের কারণে তার পরিচয় ও সাক্ষ্য গোপন রাখা হয়েছে।

চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীরের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ রাষ্ট্রপক্ষের ১৯ ও ২০তম সাক্ষী তাদের জবানবন্দি পেশ করেন। পরে তাদের জেরা করেন আসামীপক্ষের আইনজীবী আব্দুস শুকুর খান। নারী সাক্ষী ব্যতীত অপর সাক্ষী হলেন আব্দুল গফুর মোল্লা।

আদালতে আব্দুল গফুর মোল্লা বলেন, ১৯৭১ সালের ১৬ জ্যৈষ্ঠ বেলা আনুমানিক ৩টার দিকে আসামী জাহিদ হোসেন খোকন নিজে আমার মাকে গুলি করে হত্যা করে।

নগরকান্দা পৌরসভার পুরাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল গফুর মোল্লা বলেন, ১৯৭১ সালে তার বয়স ছিল আনুমানিক ৪০ বছর। ১৯৭১ সালের ১৬ই জ্যৈষ্ঠ বেলা আনুমানিক ৩টার দিকে খোকন রাজাকারকে তার আরো কিছু সহযোগী রাজাকার এবং পাকিস্তানি সেনাদের নিয়ে তাদের বাড়ির দিকে তিনি আসতে দেখেন।

তিনি বলেন, এ অবস্থায় তিনি বাড়ির ভিতরে ঢুকে তার মাকে পাকিস্তানি সেনারা আসছে বলে খবর দেন। পরে তিনি তার মা ও পরিবার নিয়ে বাড়ির পশ্চিমপাড়ে আশ্রয় নেন।

সাক্ষী বলেন, ‘আমার বৃদ্ধ মা খাল পার হতে না পারায় তাকে সেখানে রেখে আমার পরিবার (স্ত্রী) ও সন্তানকে নিয়ে খাল পার হয়ে দফা গ্রামে চলে যাই। আমি যখন বাড়ির খবর নেওয়ার জন্য খালপাড়ের দিকে যাচ্ছিলাম, তখন গুরুদাস আমার কাছে গিয়ে সংবাদ দেয় যে, আমার মাকে খোকন রাজাকার নিজে গুলি করে খালপাড়ে হত্যা করেছে।”

তিনি বলেন, মায়ের হত্যার খবর শুনে তিনি খালপাড়ের দিকে যেতে চাইলে তার চাচাতো ভাই কাঞ্চু মোল্লা তাকে নিষেধ করে। বেশ কিছুক্ষণ পরে খালপাড়ে গিয়ে মায়ের গুলিবিদ্ধ লাশ পড়ে থাকতে দেখি।

তিনি আরো বলেন, মায়ের লাশ দেখার পরে বাড়ি ফিরে গিয়ে কোদাল নিয়ে এসে খালের পাড়ে গর্ত করে লাশটি মাটিচাপা দেই। এরপর বাড়ি ফিরে এসে শুনতে পাই, খোকন রাজাকার পুরাপাড়া গ্রামের আরো পাঁচ-ছয়জনকে হত্যা করেছে।

সাক্ষ্য দেওয়া শেষ হলে এ সাক্ষীকে জেরা করেন পলাতক খোকনের পক্ষে রাষ্ট্র নিয়োজিত আইনজীবী আব্দুস শুকুর খান। অতঃপর পরবর্তী সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ১৪ জানুয়ারি দিন ধার্য করে মামলার কার্যক্রম মুলতবি করা হয়।

৯ অক্টোবর খোকন রাজাকারের বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, ধর্মান্তরিতকরণসহ ১১টি অভিযোগে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে ট্রাইব্যুনাল।

খোকনের বিরুদ্ধে ১৬জন নারী ও শিশুসহ ৫০জনকে হত্যা, তিনজনকে পুড়িয়ে হত্যা, ২জনকে ধর্ষণ, ৯জনকে ধর্মান্তরিত করা, ২টি মন্দিরসহ ১০টি গ্রামের বাড়িঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ, সাতজন গ্রামবাসীকে স্বপরিবারে দেশান্তরে বাধ্য করা ও ২৫জনকে নির্যাতনসহ সুনির্দিষ্ট ১১টি অভিযোগ আনা হয়েছে।

২০১১ সালে তিনি নগরকান্দা পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন। মেয়র হিসেবে শপথ নেওয়ার পর থেকেই তিনি পলাতক।

(দ্য রিপোর্ট/এসএ/এপি/রাসেল/ডিসেম্বর ২৪, ২০১৩)