জোসনা জামান, দ্য রিপোর্ট : পিছিয়ে যাচ্ছে সরকারের ডেল্টা প্ল্যান তৈরির কাজ। পরামর্শক নিয়োগে দাতাদের গড়িমসির কারণেই এমনটি হচ্ছে বলে জানা গেছে। গত জুলাই মাসে এটি তৈরির জন্য পরামর্শক নিয়োগ দেওয়ার কথা ছিল নেদারল্যান্ডের। কিন্তু পরবর্তীতে সেটি পিছিয়ে বলা হয়েছিল অক্টোবর মাসে নিয়োগ দেওয়া হবে। সেটিও করা হয়নি। পরবর্তীতে জানুয়ারিতে নিয়োগ দেওয়ার কথা ছিল। সেটিও হচ্ছে না। এখন নতুন করে সময় দেওয়া হয়েছে। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের ১ তারিখে পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া হবে। এভাবে তিন দফা সময় পিছিয়ে যাওয়ায় গুরুত্বপূর্ণ এ পরিকল্পনা তৈরির প্রক্রিয়া বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে।

এ বিষয়ে ডেল্টা প্লান তৈরির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য ড. শামসুল আলম দ্য রিপোর্টকে জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষিতে দেশের পানি সম্পদ নিয়ে ১০০ বছর মেয়াদী পরিকল্পনা করতে যাচ্ছে সরকার। ‘বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান ২১০০’ শীর্ষক এ পরিকল্পনা তৈরিতে সহায়তা দিচ্ছে নেদারল্যান্ড। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই দুদেশের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। এ চুক্তির আওতায় নেদারল্যান্ড পরিকল্পনা তৈরির জন্য ৪৭ কোটি ৪৭ লাখ টাকা অনুদান দিচ্ছে। পরামর্শক নিয়োগে দেরি হওয়ার কারণে পরিকল্পনা তৈরিতে দেরী হচ্ছে। বার বার চিঠি দিয়ে দ্রুত পরামর্শক নিয়োগের বিষয়ে তাগাদা দিয়ে আসছি। আশা করছি শিগরিরই পরমর্শক নিয়োগ দেবে নেদারল্যান্ড।

সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এর আগে গত বছরের ১৩ মে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকের মাধ্যমে নেদারল্যান্ড সরকারের সঙ্গে সহাযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়। শুধু পরিকল্পনা তৈরিই নয় এটি বাস্তবায়নের জন্যও অর্থসংগ্রহের কাজ শুরু হয়েছে। ওই বছরে ১৪ মে নেদারল্যান্ড দূতাবাসে লোকাল কন্সালটেটিভ গ্রুপের (এলসিজি, ওয়াটার) বিশেষ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এতে বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ও জাইকাসহ অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

ডেল্টা প্ল্যান বিষেয়ে জিইডির সদস্য ড. শামসুল আলম আরো বলেন, সরকার সাম্প্রতিক কয়েক দশকে পানি সম্পদ, কৃষি, ভূমি ব্যবহার, মৎস্য ও বনসহ বিভিন্ন বিষয়ে পরিকল্পনা, নীতি, কর্মসূচি ও প্রকল্প গ্রহণ করেছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ন্যাশনাল ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান, ইন্টিগ্রেটেড কোস্টাল ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান, হাওর মাস্টার প্ল্যান, এগ্রিক্যালচার মাস্টার প্ল্যান ফরা সাউদার্ন রিজিওন এবং জাতীয় পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি। এ পরিকল্পনাগুলো কাঙ্খিত হারে উন্নয়ন কার্যক্রম এগিয়ে নিতে পারছে না। একক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দ্বৈততার সৃষ্টি হয়ে সম্পদের অপচয় হচ্ছে। সে কারণেই ৫০ থেকে ১০০ বছর মেয়াদী একটি সমন্বিত পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

সূত্র জানায়, দেশের টেকসই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং সেই সঙ্গে প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এতে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত ইস্যুসমূহ যথাযথভাবে বিবেচনা করে দীর্ঘমেয়াদী এ পরিকল্পনা গ্রহণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

পরিকল্পনার উদ্দেশ্য হচ্ছে- পানি সম্পদ, ভূমি, কৃষি, জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ, পানি ও খাদ্য নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও ভূ-প্রতিবেশ খাতকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণীত হবে। বাংলাদেশের ব-দ্বীপ ভূমিতে প্রাকৃতিক সম্পদ খাতের ভবিষ্যত উন্নয়ন প্রশাসন সম্পর্কে একটি দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করা হবে। সমন্বিত নীতি উন্নয়ন, সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া ও বাস্তবায়নের সম্ভাব্য বাধা চিহ্নিত করে করণীয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে রোডম্যাপ তৈরি করা হবে। এ পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত সরকারি সংস্থাগুলোর দক্ষতা ও মান উন্নয়ন এবং সমন্বিত প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর আওতায় আনা হবে।

এ পরিকল্পনার ফলে একই কাঠামোর আওতায় সার্বিক সমন্বিত আকারে সকল খাতে এর সুনির্দিষ্ট পলিসি ও প্ল্যান এবং স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী, পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা এবং প্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রতিফলন ঘটবে। এতে সীমিত সম্পদের মধ্যে কার্যকরভাবে জলবায়ু পরিবর্তন প্রভাব মোকাবেলায় কর্মসূচিসমূহ আরো যৌক্তিক উপায়ে বাস্তবায়নের ব্যবস্থা করা হবে।

একটি বৃহদাকার সমন্বিত পরিকল্পনায় প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ নিশ্চিত করা হবে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মাধ্যমে সমন্বিতভাবে কাজ করার মধ্যদিয়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠা হবে। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য অর্থায়ন প্রক্রিয়ায় সরকারি, ব্যক্তিখাত, জাতীয়, আর্ন্তজাতিক ও এনজিও সকলের অর্থায়ন করার সুযোগ থাকবে। আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে এবং উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের সুযোগ থাকবে।

ডেল্টা প্ল্যানে এমন একটি পদ্ধতি উদ্ভাবন প্রস্তাব থাকবে যেখানে পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন সমান্তরালভাবে চালু থাকবে। বাস্তবায়ন পর্যায়ে প্রথমে কোন ভুল নয় এমন পন্থা গ্রহণ করা হবে। পর্যায়ক্রমে ওই বাস্তবায়নের ফলাফল পরিকল্পনা প্রণয়ন অংশে যুক্ত হবে। বিদ্যমান পরিকল্পনা ও পলিসিগুলোর সঙ্গে কিভাবে বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান সামঞ্জস্যতা রাখবে তার জন্য একটি ডেল্টা কমিশন গঠন করতে হবে এবং ওই কমিশনই সেটি বিবেচনা করবে।

(দ্য রিপোর্ট/জেজে/জেএম/ডিসেম্বর ২৪, ২০১৩)